ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

অ্যাডিনো ভাইরাসে দুই মাসে ১১ শিশুর মৃত্যু কলকাতায়

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৩
অ্যাডিনো ভাইরাসে দুই মাসে ১১ শিশুর মৃত্যু কলকাতায় প্রতীকী ছবি

কলকাতা: করোনা, ডেঙ্গুর পরে পশ্চিমবঙ্গে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে অ্যাডিনো ভাইরাস। আবহাওয়া বদলের সঙ্গে সঙ্গে সর্দি, জ্বর, কাশি এবং শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়ে রোববার (১৯ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে মৃত্যু হয়েছে ১১ শিশুর।

রাজ্যের শহর থেকে জেলা, কোথাও কোনো হাসপাতালে শিশুরোগ বিভাগের শিশু শয্যা থেকে পেডিয়াট্রিক ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিটের (পিকু) বেড ফাঁকা নেই। অবস্থা এতই ভয়াবহ যে খালি মিলছে না লাইফ সাপোর্টের যন্ত্র।

সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর তরফে জানা যায়, ডিসেম্বরের শেষ থেকে চলতি বছরের রোববার পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে যত জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে হাসপাতালে, তাদের বেশির ভাগেরই বয়স দু’বছরের মধ্যে। সবাই শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ (রেসপিরেটরি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন) নিয়ে ভর্তি হয়েছিল। এরমধ্যে চলতি বছর কলকাতার মেডিকেল কলেজে ৩ শিশু, ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেলথে ৩ শিশু এবং বিসি রায় শিশু হাসপাতালে ৫ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, আক্রান্ত শিশুরা অ্যাডিনো ভাইরাসে আক্রান্ত ছিল।

ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেলথের পিকু-র প্রধান চিকিৎসক প্রভাসপ্রসূন গিরির অভিমত, কলকাতায় অ্যাডিনো ভাইরাস এখন মহামারির আকার নিয়েছে। যাদের বয়স দু’বছরের কম, তাদের ক্ষেত্রে ভয়ের পরিমাণ বেশি। বয়স এক বছরের কম হলে ভয় আরও বেশি। এই বয়সের শিশুদের ভীষণ সাবধানে রাখতে হবে। এদের ইমিউনিটি কম থাকে।

তার পরামর্শ, বড়দের শ্বাসনালির উপরিভাগ বেশি সংক্রমিত হচ্ছে। তারা জ্বর এবং দীর্ঘদিন ধরে কাশিতে ভুগছেন। সে কারণে, বাড়ির বড়দের কারও জ্বর-সর্দি-কাশি, গলা ব্যথা হলে অবশ্যই শিশুদের থেকে দূরে থাকতে হবে। কারণ, বড়দের থেকেই শিশুদের এই সংক্রমণ ছড়াচ্ছে।

শিশুরোগ চিকিৎসকেরা আরও জানাচ্ছেন, অ্যাডিনো ভাইরাসে শিশুদের ফুসফুস ও শ্বাসনালি মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সাধারণ জ্বর-সর্দি-কাশি শ্বাসকষ্ট দু’তিনদিনের মধ্যে শিশুদের ক্ষেত্রে জটিল হয়ে যাচ্ছে। ফলে পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হতে হওয়ায় কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে রাজ্যের স্বাস্থ্য বিভাগের কর্তাদেরও। জ্বর, সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত শিশুর শারীরিক অবস্থার দিকে নজর রাখতে ইতিমধ্যেই নির্দেশিকা জারি করেছে স্বাস্থ্য দফতর। তাতে বলা হয়েছে, বাড়িতে বাবা মাকেই আগে বুঝতে হবে শিশুর শ্বাসকষ্ট হচ্ছে কি না। নূন্যতম সমস্যা বুঝলেই হাসপাতালে আসতে হবে।

পাশপাশি রাজ্যের সামগ্রিক পরিস্থিতির উপরে নজর রাখতে সমস্ত মেডিকেল কলেজ, জেলাস্তরের হাসপাতালকে প্রতিদিনের রিপোর্ট পাঠাতে নির্দিষ্ট স্বাস্থ্যকর্তার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে এবং ইমেলে পাঠাতে বলা হয়েছে। কতজন নতুন শিশুরোগী ভর্তি হয়েছে, তাদের মধ্যে কতজন পিকু, নিকু (নিওনেটাল কেয়ার ইউনিট), এসএনসিইউ (সিক নিওনেটাল কেয়ার ইউনিট) কিংবা সিসিইউ (ক্রিটিক্যাল ইউনিট) এ ভর্তি রয়েছে এবং সংক্রমণে কতজনের মৃত্যু হয়েছে। সেই সব তথ্য জানাতে হবে প্রতিদিন। পাশাপাশি জানাতে হবে, কত জনের অক্সিজেন চলছে এবং কত জনকে লাইফ সাপোর্টে রাখতে হয়েছে।

রাজ্য এক স্বাস্থ্যকর্তার কথায়, আচমকাই পরিস্থিতি উদ্বেগের হয়ে দাঁড়িয়েছে। সব দিকে নজর রাখা হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২০ ঘণ্টা, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
ভিএস/এসএ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।