ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

পশ্চিমবঙ্গে রক্তঝরা পঞ্চায়েত নির্বাচন, নিহত ১০

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৮ ঘণ্টা, জুলাই ৮, ২০২৩
পশ্চিমবঙ্গে রক্তঝরা পঞ্চায়েত নির্বাচন, নিহত ১০

কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গে সকাল ৭টা থেকে শুরু হয়েছে ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচন। এ নির্বাচন কেন্দ্র করে সহিংসতায় এখন পর্যন্ত ১০ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে।

শনিবার (০৮ জুলাই) ভোটপর্ব শুরু হতেই গোটা রাজ্য থেকে হিংসা ও অশান্তির খবর সামনে আসতে শুরু করে। একদিকে যেমন দুপুর ১টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে মাত্র ২২ শতাংশ। তেমন সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ৬ ঘণ্টায় ভোট চলাকালীন ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। ফলে সব মিলিয়ে ৮ জুন ভোটের তফসিল ঘোষণার পর থেকে এদিন (৮ জুলাই) পর্যন্ত ভোট কেন্দ্র করে ৩০ জনের প্রাণ ঝরল।

এ ঘটনা ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনেও দেখা যায়নি। সেই সহিংসতা ছাপিয়ে গেল ২০২৩ -এর পঞ্চায়েত নির্বাচনে। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোট সহিংসতায় মৃত্যু হয়েছিল ২৩ জনের।

এদিন ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার আগেই মুর্শিদাবাদের কাপাসডাঙায় এক তৃণমূল কর্মীকে খুন করার অভিযোগ ওঠেছে। তার নাম বাবর আলি। এছাড়া ওই জেলার খড়গ্রাম, রেজিনগড় এবং লালগড়ে আরও তিনজন তৃণমূল কর্মী খুন হয়েছেন বলে খবর এসেছে। একইভাবে ‘অশান্ত’ মালদহ জেলার মানিকচক এলাকায় এক তৃণমূল কর্মীকে খুন করা হয়েছে বলেও অভিযোগ ওঠেছে। তার নাম শেখা মালেক। পাশাপাশি বর্ধমান জেলায় কাটোয়ায় এক তৃনমূল কর্মীকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
 
অপরদিকে, নদীয়া জেলায় এক তৃনমূল কর্মীর মৃত্যু হয়েছে, যার অভিযোগ কংগ্রেসের দিকে। পূর্ব বর্ধমানে আউশগ্রামে এক সিপিআইএম কর্মী মৃত্যুর খবর সামনে এসেছে। এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তীতে আরও এক সিপিআইএম সমর্থকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

সহিংসতার প্রথম অভিযোগ রাজ্যের শসক দলের বিরুদ্ধে। এছাড়া ভোট শুরু হওয়ার ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই কোচবিহারে বিজেপির দুই পোলিং এজেন্টকে তৃনমূল গুলি করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তারমধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে। অপরজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

একইভাবে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙাড়ে আইএসএফ কর্মীকে গুলি করাসহ আরও কয়েকটি জেলা থেকে তৃনমূলের দুষ্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে গুলি করার অভিযোগ সামনে এসেছে। ফলে ১০ জনের মৃত্যু ছাড়া আরও চারজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

এছাড়া বহু জায়গায় বুথ দখলের খবর সামনে এসেছে। দুষ্কৃতিকারীদের ছাপ্পা ভোটের কারণে কোথাও এক ঘণ্টার মধ্যে ভোট শেষ হয়ে গিয়েছিল, আবার কোথাও আধা ঘণ্টায়। কোথাও আবার আগের রাতেই হয়ে গেছে সম্পূর্ণ ভোট।

বেলা বাড়তেই এমনই বহু অভিযোগ শাসক দলের বিরুদ্ধে আসতে শুরু করেছে। কোথাও আবার প্রিসাইডিং অফিসারের সামনেই ব্যালট বাক্স ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়েছে দুষ্কৃতিকারীরা। কোথাও গোটা ব্যালট বাক্স পানির মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়েছে। আবার কোথাও সেই বাক্সে লাগিয়ে দেওয়া হলো আগুন।

আবার ব্যারাকপুর, মুর্শিদাবাদের মত জেলায় মুড়ি-মুড়কির মতো বোমা পড়ার অভিযোগ সামনে এসেছে। একইভাবে উত্তর ২৪ পরগনার জেলার বারাসাত, দত্তপুকুরসহ বহু এলাকা থেকে হিংসার খবর সামনে আসছে। বাঁশ, লাঠি, আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা চালাচ্ছে তৃনমূলের দুষ্কৃতিকারীরা।

শনিবার ভোট চলছে পশ্চিমবঙ্গের ২২টি জেলায়। কলকাতা বাদ দিয়ে রাজ্যটির এই ২২ জেলার মধ্যে দার্জিলিং এবং কালিম্পং জেলায় ভোট চলছে দ্বি-স্তর বিশিষ্ট। এবং বাকি জেলাগুলিতে ত্রি-স্তর বিশিষ্ট (গ্রাম সভা, পঞ্চায়েত সমিতি, জেলা পরিষদ) অংশে ভোট নেওয়া হচ্ছে। ভোট নেওয়া শুরু হয়েছে স্থানীয় সময় সকাল ৭টা থেকে, চলবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত।

ভোট হচ্ছে ব্যালট পেপারে। মোট ৭৩ হাজার ৮৮৭ আসনে প্রায় দুই লাখের বেশি প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারিত হচ্ছে। এরমধ্যে রয়েছে ৬৩ হাজার ২২৯টির গ্রাম পঞ্চায়েত আসন; নয় হাজার ৭৩০ পঞ্চায়েত সমিতির আসন এবং ২২ জেলা পরিষদের ৯২৮টি আসন। মূল প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূল কংগ্রেস, বামফ্রন্ট ,কংগ্রেসে এবং আইএসএফ।

ভোট নেওয়া হচ্ছে ৬১ হাজার ৬৩৬টি বুথে। ভোটার সংখ্যা পাঁচ কোটি ৬৭ লাখের ২১ হাজার ২৩৪ জন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য মোতায়েন করা হয়েছে ৮২২ কোম্পানির কেন্দ্রীয় বাহিনী (এক কোম্পানি সমান প্রায় ১০০ জন)। এছাড়া আছে রাজ্য পুলিশের সদস্য, কুইক রেসপন্স টিম। এবং ভোটে ব্যবহার করা হচ্ছে কলকাতা পুলিশের বিশাল বাহিনী।

২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসার পর গ্রামসভা নির্বাচনে এই প্রথম কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হচ্ছে ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেসকে। বিজেপি ছাড়াও লড়তে হচ্ছে বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের জোট প্রার্থীদের বিরুদ্ধে। এরই পাশাপাশি বেশ কিছু আসনে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট (আইএসএফ)।

প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকি আইএসএফ নামক রাজনৈতিক দল গঠন করেন। বামেদের সঙ্গে নিয়ে জোট বেঁধে বিধানসভা ভোটে লড়াই করেছিলেন। এবার তারা বাংলার পঞ্চায়েত ভোটের ময়দানে আছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৭ ঘণ্টা, জুলাই ০৮, ২০২৩
ভিএস/এসআইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।