ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

পশ্চিমবঙ্গে ধর্ষণবিরোধী বিল পেশ, দোষীর শাস্তি মৃত্যুদণ্ড

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩, ২০২৪
পশ্চিমবঙ্গে ধর্ষণবিরোধী বিল পেশ, দোষীর শাস্তি মৃত্যুদণ্ড অধিবেশনে কথা বলছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

কলকাতা: ভারতে নারীদের ওপর অত্যাচার, অশালীন আচরণ ও ধর্ষণের শাস্তির ব্যবস্থা করতে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় বিল এনেছে মমতার সরকার। যার নাম দেওয়া হয়েছে, ‘অপরাজিতা’, নারী ও শিশু সুরক্ষা বিল।

 

মঙ্গলবার (৩ সেপ্টম্বর) শাসক এবং বিরোধী দুই এর তরফে সম্মতি জানিয়ে বিল আনা হয়েছে।

এবার এই বিল যাবে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপালের কাছে। রাজ্যপাল তাতে সম্মতি দিয়ে সই করলে, তা পাঠিয়ে দেওয়া হবে ভারতের রাষ্ট্রপতির কাছে। রাষ্ট্রপতি যদি বিলে সবুজ সংকেত দেয় তবেই সেই বিল আগামীতে আইনে পরিণত হবে। এটি একটি দীর্ঘ পদ্ধতি।

প্রস্তাবিত বিলে বলা হয়েছে, ধর্ষণের ঘটনায় নির্যাতিতার যদি মৃত্যু হয়, নির্যাতিতা কোমা বা চিরকালের মতো শারীরিক-মানসিক অথর্ব হয়ে যায়, তাহলে দোষীর শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।  ধর্ষণ ও গণধর্ষণের ঘটনায় যে বা যারা দোষী সাব্যস্ত হবে তাদের আমৃত্যু যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। ঘটনা যদি গুরুতর হয় তাহলে শাস্তি মৃত্যুদণ্ড এবং জরিমানা।

দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে এই বিলে। পুলিশের কাছে এফআইআর হওয়ার পর যত দ্রুত তদন্তকাজ শেষ করতে হবে।  

জেলাস্তরে স্পেশাল টাস্ক ফোর্স গঠন। এর নাম হবে অপরাজিতা টাস্ক ফোর্স। যার নেতৃত্বে থাকবেন ডেপুটি পুলিশ সুপার। অপরাধের তদন্তে এই টাস্ক ফোর্সই দায়িত্বশীল থাকবে।  

স্পেশাল টাস্ক ফোর্স ছাড়াও ধর্ষণের মামলার দ্রুত বিচারের জন্য বিশেষ আদালত ও তদন্ত দল গঠন করা হবে। রাজ্য সরকার প্রস্তাব রেখেছে, ৫২টি বিশেষ আদালত গঠনের।

অ্যাসিড আক্রান্তের ঘটনায়ও আমৃত্যু যাবজ্জীবন, ক্ষেত্রবিশেষে প্রাণদণ্ডের প্রস্তাব রাখা হয়েছে প্রস্তাবিত বিলে।

মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভার নিয়ম অনুযায়ী, বিরোধী দলনেতা বিজেপির শুভেন্দু অধিকারীকে, প্রথম বলার অনুমতি দেন বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়।

শুভেন্দু বক্তব্য, ভারতীয় আইনে ধর্ষণ ও শ্লীলতার ঘটনায় যথেষ্ট কঠোর ব্যবস্থার কথা বলা রয়েছে। ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় ফাঁসির সাজাও রয়েছে। সেই আইনানুযায়ী, ২০১১ সালে ঘটে যাওয়া দিল্লির নির্ভয়াকাণ্ডে অভিযুক্তদের ফাঁসি হয়েছিল। তাই পশ্চিমবঙ্গ সরকার যে বিল বিধানসভায় আনার চেষ্টা করছে তা স্রেফ আন্দোলন থেকে দৃষ্টি ঘোরানোর চেষ্টা। তার বেশি কিছু নয়।  

জবাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, এখন এই বিল রাজ্যপালের কাছে যাবে। উনি তাড়াতাড়ি সই করে দিলেই বিল কার্যকর হবে। রাজ্যপালের সইয়ের পর বিল কার্যকর না হলে দায়িত্ব আমাদের।  

মমতা আরও বলেছেন, রাজ্যপালের অনুমোদন পেলেই তা রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে যাবে। তিনি সই করলেই এটা আইন হিসেবে কার্যকর করা হবে। তার দায়িত্ব আমাদের।

অপরাজিতা বিল প্রসঙ্গে মমতা বলেছেন, এই বিল একটা ইতিহাস! প্রধানমন্ত্রী পারেননি। আমরা পারলাম। করে দেখালাম। প্রধানমন্ত্রী দেশের লজ্জা। উনি দেশের নারীদের রক্ষা করতে পারেননি। আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করছি।

মমতার অভিযোগ, এই ঘটনা নিয়ে নির্লজ্জ রাজনীতি হচ্ছে। বাংলাকে বদনাম করার চেষ্টা চলছে। মনে রাখবেন, বাংলাকে বদনাম করলে আপনার গায়েও তা লাগবে। আমার গায়েও লাগবে। আমাকে এবং বাংলাকে নিয়ে সবসময় কুৎসা চলছে। আমরা যদি নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহের বিরুদ্ধে বলি তাহলে কী করবেন?

গতকালই দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন কলকাতার আরজি কর মেডিকেল কলেজের সাবেক প্রিন্সিপাল ডা. সন্দীপ ঘোষ। সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় তাকে গ্রেপ্তার করে ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী এজেন্সি সিবিআই। কিন্তু এখনও নারী চিকিৎসক ধর্ষণ ও হত্যার মামলায় একজন বাদে কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। ফলে মঙ্গলবার দিনভর অন্দোলন চলছে চিকিৎসক থেকে নাগরিক সমাজের।  

বাংলাদেশ সময়: ২০০২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৩, ২০২৪
ভিএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।