ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৫ জুন ২০২৪, ১৭ জিলহজ ১৪৪৫

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

কাজী পরিবারের সঙ্গে কিছুক্ষণ

ভাস্কর সরদার, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৪৫ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০১৫
কাজী পরিবারের সঙ্গে কিছুক্ষণ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কলকাতা: আগের প্রতিবেদনে আমরা জানিয়েছিলাম পশ্চিমবঙ্গের চুরুলিয়ায় কবি কাজী নজরুল ইসলামের বাস্তুভিটার বর্তমান অবস্থার কথা। এবারের প্রতিবেদনে থাকছে চুরুলিয়ায় থাকা কাজী পরিবারের কয়েকজন সদস্যদের কথা।



কবির ছোটভাই প্রয়াত কাজী আলি হোসেন। পরিবারসহ থাকতেন চুরুলিয়ার কাজী পাড়ায়। তার দুই সন্তান কাজী মাজাহার হোসেন ও কাজী রেজাউল করিম। মূলত এ দুই পরিবারের সঙ্গেই কথা হয় বাংলানিউজের। কথাবার্তায় উঠে এলো অনেক ঐতিহাসিক ঘটনা। ‘মিথ’ ভেঙে বেরিয়ে এলো কবির প্রসঙ্গে নানা ঐতিহাসিক সত্য।

ছিমছাম সাজানো বাড়ি রেজাউল করিমের। সেখানে বসেই কথা হয়। ২০০২ সাল পর্যন্ত তিনি সম্পাদক ছিলেন নজরুল একাডেমির।

শুরুতেই নজরুল একাডেমি ও মিউজিয়াম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জাতীয়করণ না হলে কোনোভাবেই এ অবস্থার পরিবর্তন হওয়া সম্ভব নয়। বর্তমানে আমি একাডেমির পরিচালনা ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত নই।

তবে কবি নজরুল সম্পর্কে একটি নতুন তথ্য জানালেন তিনি, নজরুল কোনো দিনই নাকি ইমাম ছিলেন না!

তবে এও জানান, তৎকালীন ইমাম বিশ্রাম নিতে গেলে বা অসুস্থ থাকলে তিনি ইমামের দায়িত্ব পালন করতেন।

তিনি বলেন, মক্তবে নজরুল পড়াশুনা করতেন। সেখানে তিনি কখনও কখনও শিক্ষকের অনুপস্থিতিতে পড়ানোর কাজও করতেন। কিন্তু এজন্য তাকে কখনোই শিক্ষক বলা যায় না।

এই একই প্রশ্ন করা হয় কাজী আলি হোসেনের বড়ছেলে নজরুল একাডেমির বর্তমান সম্পাদক কাজী মাজাহার হোসেনকে।

তিনি বলেন, তখন মাত্র দশ বছর বয়স ছিল কাজী নজরুলের। তিনি ইমামের খুবই স্নেহের পাত্র ছিলেন। একথাও ঠিক, তিনি কখনও কখনও ইমাম সাহেবের অনুপস্থিতিতে তার দায়িত্ব পালন করতেন।

হাজি পালোয়ান ও কাজী নজরুলের সম্পর্কে তিনি বলেন, একথা ঠিক, নজরুল হাজি পালোয়ানের মাজারে যেতেন। ছোটবেলায় এই পীরের পুকুরের পাড়ে দীর্ঘসময় কাটাতেন কবি।

যুদ্ধ থেকে ফিরে কলকাতায় চলে যান কবি। জানা যায়, মাত্র তিন দিন ছিলেন চুরুলিয়ায়।

এ বিষয়ে প্রমাণিত তথ্য হাজির করতে না পারলেও রেজাউল করিম জানান, কবির লেখা বেশ কিছু পাণ্ডুলিপি আগুনে পুড়ে নষ্ট হয়ে যায়। হয়ত সেই কারণেই বা যুদ্ধ থেকে ফিরে এসে পারিবারিক সমস্যা দেখে অভিমানী নজরুল চলে আসেন কলকাতায়।

কলকাতায় এসে আমরা নজরুলের অনেক বাসা পরিবর্তনের কথা জানতে পারি। তখন রাজনীতিবিদ কমরেড মুজফ্‌ফর আহমেদ নজরুলকে কলকাতায় থাকার ব্যাপারে প্রচুর সাহায্য করেছিলেন।

মুজফ্‌ফর আহমেদের প্রসঙ্গে মাজাহার হোসেন জানান, ভারতে কমিউনিস্ট আন্দোলনের প্রথম সারির এ প্রবক্তা মনে করতেন, সরাসরি রাজনীতিতে এলে কাজী নজরুলের লেখকসত্ত্বা আঘাতপ্রাপ্ত হবে। তাই তাকে তিনি সরাসরি রাজনীতি থেকে দূরে থাকতে অনুরোধ করেন।

কড়া মেজাজে কথা বলেন মাজাহার হোসেন। একাশি বছর বয়সের এ মানুষটির কাছে প্রশ্ন রাখা হয়েছিল, এক দেশের জাতীয় কবি, আরেক বাংলায় জন্ম। কিন্তু তার জন্মভিটার এমন করুণ হাল কেন!

মাজাহার হোসেন উল্টে প্রশ্ন ছোড়েন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছাড়া আর কোন বাংলা ভাষার কবি প্রাপ্য সম্মান পেয়েছেন! মাইকেল মধূসুদন দত্ত, সুকান্ত ভট্টাচার্য, জীবনানন্দ দাশ কিংবা জসীম উদ্ দীনের একই হাল!

কোনো উত্তর ছিল না! আরও জানান, নজরুলের বাস্তুভিটায় শেখ হাসিনা ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘুরে গেছেন। কিন্তু তিনি হতাশ।

পরিবারের মধ্যে একাডেমি ও মিউজিয়াম ঘিরে দ্বিমত রয়েছে। দ্বিমত রয়েছে এগুলোর জাতীয়করণের বিষয় নিয়েও। কিন্তু তাদের জীবন নজরুলময়।

আরও জানালেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকার আয়োজিত কোনো অনুষ্ঠানেই ডাক পান না তারা। এ নিয়ে আক্ষেপও নেই। শুধু নজরুলের স্মৃতি আঁকড়ে ধরে বেঁচে রয়েছেন, এটাই তাদের বড় সম্পদ।

বাংলাদেশ সময়: ০৬৪৫ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০১৫
এসএস

** ধুলার আস্তরে জমা অভিমানে কবি নজরুলের জন্মভিটা

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।