ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

ত্রিপুরার সেই ক্যাম্প এলাকায় ছবি আঁকলেন শাহাবুদ্দীন

আগরতলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৫
ত্রিপুরার সেই ক্যাম্প এলাকায় ছবি আঁকলেন শাহাবুদ্দীন ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

আগরতলা: ছিলেন চিত্রশিল্পী। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে রং-তুলি রেখে হাতে তুলে নিলেন বন্দুক।

হয়ে গেলেন মুক্তিযোদ্ধা।

নয় মাসের কঠিন লড়াই শেষে যখন জন্ম নিলো লাল-সবুজের বাংলাদেশ, তখন হাতে আবার রং-ক্যানভাস নিয়ে পাড়ি জমালেন ছবি আর কবিতার শহর প্যারিসে। তিনি বাংলাদেশের বরেণ্য শিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ।

স্বাধীনতার ৪৪ বছর পর সম্প্রতি আসেন যুদ্ধের সময়ে ত্রিপুরার সেই প্রশিক্ষণ শিবির ও ক্যাম্প এলাকায়। এখান থেকেই পেয়েছিলেন যোদ্ধা হয়ে ওঠার বাস্তব মন্ত্রণা। শুধু এলেন না, স্মৃতিবিজড়িত জায়গায় ক্যানভাস তৈরি করে লেগে পড়লেন শিল্পকর্মে।

শাহাবুদ্দিনের জন্ম বাংলাদেশের ঢাকায়। ছোটবেলা থেকে তার স্বপ্ন ছিল একজন বিখ্যাত চিত্রশিল্পী হয়ে ওঠার। সেই মতো তিনি আর্টস নিয়ে পড়াশোনা করেন। ১৯৭১ সালে কলেজে পড়ার সময় বাংলাদেশে আসে মুক্তিযুদ্ধের ডাক। একই সময় আবার স্কলারশিপ নিয়ে নিউজিল্যান্ড পড়তে যাওয়ার সুযোগ আসে। কিন্তু সেই সুযোগ ফেলে ঝাঁপিয়ে পড়েন মুক্তিযুদ্ধে।

মুক্তি বাহিনীতে যোগ দেওয়ার পর তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় ত্রিপুরার সোনামুড়ার গর্জনমুড়া এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ শিবির ও ক্যাম্পে। তার দক্ষতা দেখে প্লাটুন কমান্ডাররের দায়িত্ব পান। তারপর গর্জনমুড়া ক্যাম্প থেকেই শুরু করেন পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে অপারেশন।

মুক্তিযুদ্ধের প্রায় পুরো সময়টাই কাটান গর্জনমুড়া ক্যাম্পে। পাকিস্তানি বাহিনী আক্রমণ করলে তারাও পাল্টা জবাব দেন। তাদের আঘাতে ধরাশায়ী হয় বহু পাকিস্তানি সেনা।

বাংলাদেশের বিজয়ের পর শাহাবুদ্দীন রঙের ডালি নিয়ে পাড়ি জমান ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে। বর্তমানে তিনি প্যারিসের স্থায়ী বাসিন্দা। অতীত দিনের স্মৃতির টানে তিনি আবার এলেন ত্রিপুরায়। ঘুরে দেখলেন গর্জনমুড়ার তৎকালীন ক্যাম্প এলাকা। এলাকায় গিয়ে তিনি তো একেবারে অবাক! কোথায় গেলো সেই জঙ্গল? এখানে তো এখন জনবসতি। পুরো এলাকাটি তিনি ঘুরে দেখলেন।

গর্জনমুড়া ক্যাম্প এলাকায় পৌঁছে তিনি নস্টালজিক হয়ে পড়েন। জানান মুক্তিযুদ্ধের সময় এখানে থাকাকালীন অনেক কষ্ট করতে হয় তাদের। সবচেয়ে বেশি কষ্ট দেয় সেটি হলো, পাকিস্তানি বাহিনী তার ১৩জন সহযোদ্ধাকে বুলেটে ঝাঁঝরা করা।

তাছাড়া ক্যাম্পে থাকাকালীন খাবার-দাবার নিয়েও ছিলো সমস্যা। তারপরও মুক্তিযুদ্ধে সামিল হতে পেরে নিজেকে ধন্য বলে মনে করেন তিনি। এ যে ছিলো মায়ের মুক্তির জন্য লড়াই। ওই সময়টাকে নিজের জীবনের স্বর্ণ যুগ বলেও মনে করেন শাহাবুদ্দিন।

বিজয়ের ৪৪বছর পর গর্জনমুড়ায় বসে বন্দুকের বদলে হাতে রং-তুলি আর ক্যানভাস নিয়ে আঁকলেন ছবি। তাতে ফুটে উঠল ১৯৭১ সালের গর্জনমুড়ার দৃশ্য।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৫
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।