ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

স্ট্রিট ফুডের রাজা

ভাস্কর সরদার, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৩, ২০১৬
স্ট্রিট ফুডের রাজা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কলকাতা: ফুচকা, পানিপুরি, গোলগাপ্পা, গুপছুপ, পাকোডি, ফুলকি যে নামেই ডাকা হোক না কেন গোলাকার এই খাদ্যটি চোখের সামনে এলেই জিভ অজান্তেই আদ্র হয়ে ওঠে। উপরে ময়দা আর সুজির মিশ্রণে তেলে ভাজা দুই ইঞ্চি ব্যাসের ফাঁপা গোলক, আর তার পেট ফুটো করে ভেতরে আলু, পেঁয়াজ, তেঁতুল জল, মরিচ, মশলা ইত্যাদি সহযোগে যে স্বাদ তৈরি হয় তা ভারতীয় উপমহাদেশের যে কোনো জায়গায় যে কোনো মানুষের জিভ থেকে মস্তিষ্কে মুহূর্তে প্রভাব বিস্তার করে।



কলকাতার রাস্তায় যদি সব চেয়ে জনপ্রিয় ‘স্ট্রিট ফুড’-এর কথা ওঠে তবে বিনা প্রশ্নে চীনা, জাপানি, মোগলাই কিংবা দক্ষিণের ইডলি, ধোসাকে পেছনে ফেলে যেটি এগিয়ে আসবে তার নাম ফুচকা। ‘আমার টায় ঝাল কম, কিন্তু টক বেশি দেবেন’, ‘আমাকে টক কম দেবেন’, ‘ঝালটা ঠিক আছে, নুনটা একট‍ু কম দাও’-এ ধরনের হাজার অনুরোধ রেখে কলকাতার রাস্তায় ফুচকা ওয়ালাদের ব্যবসা।

ভারতের বিভিন্ন জায়গায় একে বিভিন্ন নামে ডাকা হয়। দিল্লি, হরিয়ানা, ঝাড়খণ্ড, বিহারে এই অসীম জনপ্রিয় গোলাকার খাদ্যটির নাম ‘পানিপুরি’। পশ্চিমবঙ্গে একে ডাকা হয় ফুচকা নামে, গোলগাপ্পা বলা হয় মুম্বাই অঞ্চলে। গোয়া, গুজরাত, অন্ধ্র প্রদেশ, তামিলনাড়ুতে এই জিভে জল আনা খাবারটির নামটিও ভারি সুন্দর, ‘পানি কা বাতাসে’।

হয়তো চুপচাপ, লুকিয়ে বাড়ির বড়দের নজর এড়িয়ে খাওয়ার চল থেকেই ভারতের ছত্তিসগড় এবং উড়িষ্যাতে এর নাম ‘গুপ ছুপ’। আর টক মিষ্টি, ঝালের মিশ্রণে এক দারুণ স্বাদ যা জিভ থেকে সরাসরি মস্তিষ্কে গিয়ে প্রভাব বিস্তার করে, সেই চিন্তা থেকেই সম্ভবত মধ্য প্রদেশে এর নাম ‘ফুলকি’।

শুধু ভারত এবং বাংলাদেশ নয়- পাকিস্তান, নেপাল, ভুটানেও জনপ্রিয় ফুচকা। কলকাতার ফুচকায় মূলত দুটি ভাগ, প্রথমটিতে আলু, সেদ্ধ মটর, পেঁয়াজ, মরিচ, চাট মসলা, লেবু মিশিয়ে পুর বানানো হয়, তার পর সেটিতে গন্ধরাজ লেবু, তেঁতুল জল দিয়ে পরিবেশন করা হয়। দ্বিতীয়টি ‘দই ফুচকা’। এখানে তেঁতুল জলের বদলে দেওয়া হয় টক দই। সঙ্গে থাকে টমেটো সসসহ আরও কয়েক ধরনের চাটনি। পরিবেশনের ধরনেও পার্থক্য আছে। সাধারণভাবে ফুচকা শাল পাতায় একটা শঙ্কু বানিয়ে দেওয়া হলেও, দই ফুচকা সাধারণত দেওয়া হয় রেকাবিতে।

ফুচকা বা গোলগাপ্পার জলের ক্ষেত্রে গোটা ভারতে মোটামুটি একই পদ্ধতি ব্যবহার করা হলেও, পুরের ক্ষেত্রে বিষয়টি রাজ্য ভিত্তিক আলাদা। যেমন মহারাষ্ট্রে ফুচকার পুরে মেশানো হয় কাঁচা আম, আর মশলাদার মটর, দক্ষিণ ভারতে ফুচকার সাথে গরম মশলা দেওয়ার চল আছে।

তবে ফুচকা শুধু কলকাতার ‘স্ট্রিট ফুড’ নয়, বর্তমানে কলকাতার প্রায় প্রতিটি বাঙালি এবং অবাঙালি বিয়ে বাড়িতে ফুচকার একটি স্টল বসানো হয়। এমন কি পাঁচ তারকা হোটেলগুলির মেনুতেও জায়গা করে নিয়েছে ফুচকা।

কোন এলাকার ফুচকা কতো ভালো সেটা নিয়ে ফুচকা প্রেমীদের আলোচনা চলতেই থাকে। এমন কি ফুচকা বিক্রি করে কোন ফুচকা বিক্রেতা দেশে অথবা কলকাতায় তিন তলা বাড়ি বানিয়েছে সেই তথ্যও ফুচকাপ্রেমীদের জানা।

দক্ষিণ কলকাতার ভবানীপুরে এক বিখ্যাত ফুচকা বিক্রেতা মোট দশটি হাঁড়ি নিয়ে ফুচকা বিক্রি করতে বসেন। এই দশটি হাঁড়িতে থাকে দশ ধরনের জল। কোনটায় তেঁতুল, কোনটায় লেবু, কোনটায় জলজিরা, আবার কোনটায় পুদিনা পাতা মিশ্রিত জল।

কলকাতার রাস্তায় গড়পড়তা ১০ রুপিতে ৫টি করে ফুচকা পাওয়া যায়। তবে স্পেশাল ফুচকা খেতে হলে ফুচকা পিছু ৫ রুপি থেকে ১০ রুপি খরচ করতে হয়।

বাংলাদেশ সময়: ০০১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০১৬
ভি.এস/আরআই/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।