ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

কলকাতায় ‘ঘুমপাড়ানি’ সন্দেশ

ভাস্কর সরদার, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২১ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০১৬
কলকাতায় ‘ঘুমপাড়ানি’ সন্দেশ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কলকাতা: ঠিক মতো ঘুম হয় না, কিন্তু ঘুমের ওষুধ খেতেও অনীহা! তাছাড়া ওষুধের রয়েছে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও! কিন্তু একটি সন্দেশ খেলেই যদি সব চিন্তা দূরে ঠেলে চোখে আসে সুখের নিদ্রা!

অবাক হলেও কথা সত্যি! কলকাতায় ঘুমপাড়ানি সন্দেশ বাজারে এনেছে মিষ্টি প্রস্তুতকারী প্রাচীন প্রতিষ্ঠান ‘হিন্দুস্থান সুইটস’।

সাধারণত মিষ্টি এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।

কিন্তু রোগ সারাতে সন্দেশ যে কার্যকরী হয়ে উঠতে পারে এটা বোধহয় কোনো মিষ্টিপ্রেমী এর আগে চিন্তা করতে পারেননি। ‍

তবে প্রাচীন পুঁথি পত্র ঘাঁটলে বুদ্ধির বিকাশে মিষ্টির উপকারিতার কথা জানা যায়। সে কারণেই সম্ভবত প্রাচীনকালে গুরুগৃহে থাকা ছাত্রদের খাবারের তালিকায় অবশ্যই মিষ্টান্ন বরাদ্দ করতেন গুরুরা।
 
সংশ্লিষ্টদের দাবি, কলকাতায় তৈরি মিষ্টিতে যাদের ঘুমের সমস্যা আছে তাদের জন্য এ সন্দেশ খুবই কার্যকরী। এ সন্দেশের কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই।

‘‘শুধু তাই নয় মধুমেহ রোগের শিকার ব্যক্তিরাও এ সন্দেশ খেতে পারেন। কারণ সন্দেশ তৈরি হয়েছে চিনি ছাড়াই। সন্দেশের নাম রাখা হয়েছে ‘সাউন্ড স্লিপ’। ’’

হিন্দুস্থান সুইটস-এর যাদবপুর শাখায় পৌঁছে দেখা যায়, সবুজ রঙের এ সন্দেশ দোকানে তরে তরে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। প্রতিটি সন্দেশের দাম ১২ টাকা।

কর্মকর্তারা বলছেন, সুষনি শাক দিয়ে তৈরি করা হয়েছে এই সবুজ রঙের মিষ্টি। যার বিজ্ঞানসম্মত নাম মারসলিয়া মিনুটা লিন। গ্রামবাংলার আনাচে কানাচে পাওয়া যায় এই শাক।

আয়ুর্বেদ শাস্ত্র অনুসারে, সুষনি শাক চোখে ঘুম আনতে সাহায্য করে। বিক্রেতাদের মতে, দু’টি সন্দেশের বেশি খাওয়ার দরকার নেই। দুই টুকরো খেলেই ভালো ঘুম হবে।
ক্রেতারা জানান, পরিচিত অনেকেই এ সন্দেশের কথা বলেছেন, তারাও সমানভাবে উপকৃত।
 
তবে দু’টোর বেশি খাবেন না, এই কড়া সতর্কতা দিচ্ছেন বিক্রেতারা।

কলকাতায় হিন্দুস্থান সুইটসের বেশ কয়েকটি দোকান রয়েছে। প্রায় ক’টি দোকানেই এ সন্দেশের বিক্রি ভালো। শুধু ঘুমপাড়ানি সন্দেশই নয়, প্রতিষ্ঠানটির ঝুলিতে রয়েছে কুলেখাড়া পাতা দিয়ে তৈরি ‘মুক্তি সন্দেশ’ও।

যা রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়াতে সাহায্য করে, আছে ‘স্পন্দন সন্দেশ’, অর্জুন গাছের ছাল থেকে তৈরি এ মিষ্টি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।

এছাড়া ক্যানসার প্রতিরোধে রয়েছে গাজরের রসগোল্লা ও সন্দেশ। গাজরের মধ্য যে ক্যারোটিনো থাকে তা এই মরণব্যাধি প্রতিরোধে সাহায্য করে।

দোকানে কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শরীরে ভিটামিনের ঘাটতি থাকলেও গাজর রসগোল্লা ও সন্দেশ খুবই কার্যকরী।

এছাড়া আছে ‘তুলসি দই’ এবং ‘তুলসি সন্দেশ’। প্রাচীন আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রে, তুলসি পাতার গুণাগুণের কথা বলা আছে। শুধু ঠাণ্ডা লাগা ঠেকাতেই নয়, আয়ুর্বেদ মতে তুলসি ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াও বিনাশকারী। আর চিরপরিচিত বেলের মোরব্বা তো আছেই।


 শিক্ষার্থীদের জন্য এসব দোকানে পাওয়া যায় ‘স্মৃতি সন্দেশ’।   ব্রাহ্মী শাক দিয়ে তৈরি এ সন্দেশ কিন্তু স্বাদে বেশ অন্যরকম।

অভিভাবকরা তাদের ছেলে-মেয়েদের এই সন্দেশ খাওয়াতেই পারেন। কারণ ব্রাহ্মী শাক খেতে না চাইলেও স্মৃতি সন্দেশ খেতে তাদের খারাপ লাগবে না।

হিন্দুস্থান সুইটস বলছে, নতুন এসব মিষ্টির ওপর ২০০৩ সাল থেকে গবেষণা করা হয়েছে। এরপরই এ মিষ্টি বাজারে ছাড়া হয়েছে। তবে চাহিদা বেশি থাকায় দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে এসব মিষ্টি।

শেষ পাতে মিষ্টি মুখের সঙ্গে শান্তির ঘুম কিংবা হার্টের সুরক্ষার ভরসা পেলে তো ‘সাউন্ড স্লিপ’ সন্দেশের চাহিদা বাড়বেই, সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১২ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০১৬
ভিএস/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।