ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

শীত মৌসুমে কলকাতার প্রিয় খাবারগুলি

ভাস্কর সরদার, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৬
শীত মৌসুমে কলকাতার প্রিয় খাবারগুলি শীত মৌসুমে কলকাতার খাবার/ ছবি: বাংলানিউজ

কলকাতা: শীত মৌসুমে কলকাতায় খাওয়া দাওয়া এ দুটি বিষয় যেন একে অন্যের সমর্থক। ভোজন রসিকদের শীতকাল হলে তো  কোনো কথাই নেই। বাংলাদেশ হোক আর পশ্চিমবাংলা হোক, খাবার নিয়ে বাঙালির উৎসাহ দুই বঙ্গেই সমান।

শীতকালে কলকাতায় বিশেষ কিছু খাবার পাওয়া যায়। যা অন্য সময় এখানে পাওয়া যায় না।

 
সদ্য অতিবাহিত হয়েছে ক্রিসমাস। তাই প্রথমেই বলতে হয় 'মিনস পাই'-এর কথা। কলকাতার একমাত্র শতবর্ষ পার করা জিউস বেকারি ‘নাহুম’র বিখ্যাত ‘পাই’ পাওয়া যায় শীতকালেই। ব্রিটিশ হেঁশেলে এ পাই-কে ‘ক্রিসমাস পাই’ বলা হয়।
 
এর পরেই আসে ‘প্লাম কেক’ এর কথা।   কলকাতার অন্যতম ঐতিহ্যবাহী বেকারি ‘ফ্লুরিস’-এর প্লাম কেককে শীতকালের কলকাতার অন্যতম সেরা খাবার বলাই যায়। শীত মৌসুমে কলকাতার খাবার/ ছবি: বাংলানিউজ
 
আবার শীতে নলেন গুড়ের সন্দেশ খুবই প্রিয় সবার। খেজুর রস থেকে তৈরি গুড় দিয়ে মিষ্টিগুলো স্বাদে অতুলনীয় আমূল পরিবতর্ন আনে। আর এ সন্দেশ  শীত ছাড়া কলকাতায় পাওয়া বেশ কঠিন।
 
কলকাতায় নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকেও শীতের খবর নিয়ে আসতেন জয়নগরের মোয়া বিক্রেতারা। মাথায় ঝুড়ি করে কলকাতা থেকে প্রায় ৫৭ কিলোমিটার দূরে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার জয়নগরে এ মোয়ার জন্ম। এ মোয়া তৈরি হয় খেজুরের গুড় কনকচূড়া ধানের খই আর ক্ষীর দিয়ে। বর্তমানে মোয়া বিক্রেতারা আর বাড়ি বাড়ি ফেরি করে না। তবে পাড়ায় পাড়ায়  জয়নগরের মোয়ার দোকান বসে যায় শীতের শুরুতেই। শীত ছাড়া জয়নগরের মোয়া অন্য কোনো সময়েই পাওয়া যায় না।

শুধু মোয়া কেন একমাত্র এ মৌসুমে পাওয়া যায় খেজুরের রস। যা বিক্রি হয় কলকাতার রাজপথ থেকে অলিগলি।
 
একমাত্র এ সময়ই ফুলকপির সিঙ্গারা ও সমোচা পাওয়া যায় কলকাতায়।

কলকাতার বিখ্যাত পুঁটিরামের মিষ্টির দোকানের ফুলকপির সিঙ্গারার স্বাদ একবার পেলে সেটিকে ভুলে যাওয়া অসম্ভব। এছাড়াও প্রায় সমস্ত পাড়াতেই শীতকালে ফুলকপির সিঙ্গারা বা সমোচা তৈরি করা হয়। ধোঁয়া ওঠা চায়ের সঙ্গে ফুলকপির সিঙ্গারা শীতের সন্ধ্যায় এক অন্য মাত্রা যোগ করে।

আবার কলকাতার বিখ্যাত মিষ্টি ব্যবসায়ী যেমন, কেসি দাস, বলরাম মল্লিক, ইত্যাদি দোকানগুলো সেজে ওঠে নতুন গুড় ‍আর ছানার মিশ্রণে তৈরি নানা স্বাদের মিষ্টি। ফুলকপির সিঙ্গারা/ ছবি: বাংলানিউজ
 
শীতে কলকাতার আর একটি প্রিয় খাবার নিহারি। নাখোদা মসজিদের সামনে একাধিক দোকানে পাওয়া যায় নিহারি। স্বাদের দিক থেকে বিচার করলে দুটি দোকান নিহারির জন্য বিখ্যাত। ইসলামিয়া এবং সুফিয়া। ভোর ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৭ পর্যন্ত এ দুটি দোকানে নিহারির জন্য ভিড় করে ক্রেতারা।
 
দার্জিলিং-এর কমলা লেবুকে বাদ দিয়ে কলকাতার শীত ভাবাই যায় না। তাই শীতে কলকাতার খাবারের কথা বলতে গেলে কমলা লেবুর কথা বলতেই হয়। বাজারে এ সময় প্রায় কমলা রঙে রাঙিয়ে ওঠে। মনেই হতেই পারে শীতকাল ‘সিটি অফ জয়’ পরিণত হয়েছে ‘সিটি অফ অরেঞ্জ’-এ।
 
শীত আসলেই খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারটি ভিন্ন মাত্রা পায় একথা বলাই বাহুল্য।


বেদনাদায়ক হলেও কলকাতায় শীত স্বল্পস্থায়ী। তাই শহরের মানুষ কোনোভাবেই রসনাকে তৃপ্ত করার এ সুযোগ ছাড়তেই চান না। বলাই যায় কলকাতায় শীত মানেই এক চলমান খাদ্য উৎসব। যা ডিসেম্বরে শুরু হয়ে ফেব্রুয়ারিতে শেষ হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৬
আরআইএস/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।