ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

কলকাতা বইমেলায় অবহেলায় রাজনৈতিক স্টলগুলো

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৮
কলকাতা বইমেলায় অবহেলায় রাজনৈতিক স্টলগুলো ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কলকাতা: সুসজ্জিত মনোরম স্টল। তাতে যত্ন নিয়ে সাজানো রঙ-বেরঙের সারি সারি বই। কোনোটি লিউ শাও কি’র লেখা ‘সাচ্চা কমিউনিস্ট কী করে হতে হবে’। আবার কোনোটিতে স্বয়ং ভি আই লেনিন লেখা। বইয়ের নাম ‘কী করিতে হইবে’। রয়েছে গ্রোভার ফারের লেখা ‘ক্রুশ্চেভের মিথ্যাভাষণ’। বিদেশি বইয়ের বাংলা অনুবাদের পাশাপাশি আছে জ্যোতি বসুর রচনা সংগ্রহ। আছে ভারতের কমিউনিস্ট নেতাদের লেখা বিভিন্ন বই। বইমেলার মাঠে সিপিএমের গণশক্তির স্টলে কিংবদন্তি রাজনৈতিক ব্যক্তিদের লেখা বইগুলো পড়ে রইল পাঠকের অবহেলায়।

সিপিআইয়ের আরেক মুখপত্র কালান্তর স্টলে বসে রীতিমতো যত্ন নিয়ে নতুন প্রজন্মকে বোঝাচ্ছিলেন, কেন কমিউনিজম এতোটা প্রাসঙ্গিক এখনো। মলাটে লেখা ‘এক নিশান অনেক নিশানা’ বইটি তুলে সস্নেহে বলছিলেন, অল্প দাম।

এগুলো পড়া দরকার। পড়ুন। অনেক কিছু জানতে পারবেন। বলাই সাড়। সেভাবে কেউ জানার আগ্রহ দেখালেন না। রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) ছিলো বইমেলার শেষ দিন। লাখো মানুষের জমায়েত থাকলেও ভিড় চোখে পড়ে না কয়েক বছর আগের মতো লাল রাজনৈতিক দলের স্টলগুলোতে।

তবে শাসক দলের জাগোবাংলা স্টল নিয়ে কয়েক বছর ধরেই সাধারণ মানুষের আগ্রহ রয়েছে। তবে বই কেনার জন্য নয়। ভিড় করেছে জমকালো ডেকরেশন এবং লোকগীতির লাইভ শো-র জন্য। এবার বিশ্ব দরবারে দিদির কন্যাশ্রী প্রকল্প পুরস্কৃত। তাই সে বিষয় সামনে রেখে তৈরি হয়েছে স্টল। এটাকে ঠিক স্টল বলা চলে না, মণ্ডপ বলাই শ্রেয়। মণ্ডপের ভেতর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিলো তৃণমূল সুপ্রিমোর লেখা যাবতীয় বই। কবিতা বা ছড়ার পাশাপাশি রয়েছে পাতায় পাতায় তীব্র রাজনৈতিক চর্চা। কোনো বিষয় বাদ যায় না দিদির চিন্তাধারা থেকে। স্টলে যারা বই বিক্রির দায়িত্বে ছিলেন তারা খুব যত্ন নিয়ে সাধারণ মানুষদের বোঝাচ্ছিলেন কোন বইয়ের গুরুত্ব কতোটা। তারা গর্ভের সঙ্গে বোঝাচ্ছেন নেত্রীর ছড়াগুলো শিশুদের পাশাপাশি বয়স্কদেরও অনাবিল আনন্দ দেবে।

এক সময় বাম শাসক দলের অত্যাচারের কাহিনীর ঝাঁঝ চোখে পড়ার মতো সরকারি স্টল ‘পশ্চিমবঙ্গ’তেও। সেখানেও আছে মমতা দিদির বইয়ের পসার। তবে বাম আর দিদির স্টলে লোকে বই নেড়ে-চেড়ে দেখলেও বিজেপি বা কংগ্রেস-এর স্টলে তাদের লোক ছাড়া আগ্রহী পাঠকদের চোখে পড়েনি। এখনও ইন্দিরা গান্ধী বা বরকত গণি খান চৌধুরীর বই দিয়েই তারা ধরতে চায় মানুষের মন ও বই বাজার।

বিজেপর স্টল ভারতীয় জনবার্তা সাজানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়দের ছবি দিয়ে। সেখানে হিন্দুত্বকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন স্টল কর্তারা। ছাপার হরফে বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষের সাক্ষাৎকার বা রাহুল সিনহার রাজনীতির পাঠ যত্ন নিয়ে সাজিয়ে রেখেছিলেন তারা।

দুপুর গড়িয়ে বিকেল। বিকেল শেষে সন্ধ্যা। উপচে পড়া ভিড় বইমেলা প্রাঙ্গণে। তবু সাধারণ মানুষ রাজনৈতিক বই খুব একটা নেড়ে-চেড়ে দেখলেন না। বরং অনেকে টেনে নিলেন সুকুমার রায়, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় বা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় অথবা রান্নার বই। সমাজ বদলের বিপ্লবের বাণী ছেড়ে মানুষ আগ্রহ ভরে হাতে তুলে নিলেন শিশু সাহিত্য থেকে নিউ কামারদের গল্প-উপন্যাস।

পার্টি তাত্ত্বিক কচকচানি যে পাঠকদের মনে অরুচি তৈরি হয়েছে তা চোখে পড়ার মতো। তবু সেসব বাদ দিলে এবারের বইমেলা স্থান পরিবর্তন হলেও বিক্রেতারা যথেষ্ট সাফল্যের মুখ দেখেছে তা নিসন্দেহে বলা যায়।

বাংলাদেশ সময়: ০২১১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি, ১২, ২০১৮
ভিএস/আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।