কলকাতা: প্রতিবেদনের শিরোনাম দেখে অবাক হবেন না। এটাই সত্যি।
বিট্রিশ আমল থেকে চিকিৎসকের পরামর্শে আফিম সেবন করতেন অনেকেই। এখন সেই সংখ্যাটা কমে এসে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১২ জনে। এরা সবাই সরকারি লাইসেন্সধারী। এরা সরকারি অনুমতি, এমনকি আফিম সেবনের রেশন কার্ড নিয়ে আফিম সংগ্রহ করেন। এর মধ্যে রয়েছেন ১ জন নারীও।
এখন এদের জন্য আফিমের যোগান দিতে ঘাম ছুটছে রাজ্য সরকারের। হচ্ছে বিপুল অর্থব্যয়ও। ভারতে আফিম উৎপাদনকারী পোস্ত গাছের চাষ নিষিদ্ধ। পোস্তর চাষ হয় উত্তর প্রদেশের গাজিপুরের সরকারি খামারে, আর আসে আফগানিস্তান থেকে। এই পোস্ত থেকে যাতে চারা গাছ না হয়, তার জন্য এর বীজকে পানিতে সিদ্ধ করে বাজারে ছাড়া হয়। কারণ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে পোস্তা দিয়ে রান্না করা খাবার জনপ্রিয় বলে।
আফিম সেবন করতে করতে এখন যারা জীবন সায়াহ্নে এসে গেছেন তাদের তো আফিম লাগবে। তাদের চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক আফিম সেবন করার অনুমতি দেওয়া হয়। কারণ না হলে তাদের মৃত্যু অনিবার্য। তাই এইসব ক্ষেত্রে সরকার আগে অনুমতি দিত। এখন অবশ্য দেওয়া হয় না। তবে সরকারি অনুমতি নিয়ে যারা বেঁচে আছেন, তাদের আফিমের যোগান সুনিশ্চিত করতে হয় সরকারকে। তাই উত্তর প্রদেশ থেকে কড়া পুলিশি পাহারায় আফিম নিয়ে আসা হয়। রাখা হয় কড়া পাহারায় জেলা শাসকের ট্রেজারিতে। সেখান থেকে আফিম ডিলারের মধ্যে দিয়ে পান সেবনকারীরা।
রাজ্যের ১২ জন আফিম সেবনকারী সবাই উত্তর দিনজপুর জেলার বাসিন্দা। সপ্তাহে মাত্র ১২ গ্রাম করে তারা আফিম সংগ্রহ করতে পারেন। বিট্রিশ আমল থেকে এই প্রথা আজও চলছে একইভাবে। যতদিন এরা বেঁচে থাকবেন, ততদিন সরকারকে এদের আফিম সরবারহ করে যেতে হবে। তাই এদের রেশন কার্ডও দেওয়া হয়েছে।
রায়গঞ্জের বাসিন্দা আফিম সেবনকারী শঙ্কর দেব বলেন, ছোটবেলা থেকে এই নেশা করার পর থেকে আফিম এখন আমার জীবন রক্ষাকারী ওষুধ। এটা না সেবন করলে আমার মৃত্যু হবে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শে রেশন কার্ড বানিয়েছি। প্রতি সপ্তাহে কার্ড দিয়ে ১২ গ্রাম আফিম সংগ্রহ করে, সেবন করে বেঁচে আছি।
সরকারিভাবে তারা এই অফিম পান মাত্র ৬০ রুপিতে। এই দামে দিতে গিয়ে ব্যয় হয় সরকারের অতিরিক্ত অর্থ। মাঝে মাঝে যোগান কমিয়ে সরকার পরীক্ষা চালিয়েছে, কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।
উত্তর দিনাজপুরের আবগারি সুপার শান্তিকুমার দে বলেন, ‘আরে এটা করে আমরা আরো ঝামেলায় পড়েছিলাম। ইচ্ছা করেই আফিম দেওয়ার পরিমান কমিয়ে দেওয়ার পর ওই ১২ জন সোজা চলে যান তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকারের অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্তের কাছে। নালিশ করেন জেলাশাসকের কাছে।
সরকার অসহায়। আফিম ছাড়া এদের চলা অসম্ভব। তাই সরকারি আনুকুল্যে এখন দিব্যি নিষিদ্ধ মাদক আফিমের নেশা করছেন তারা।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০১২