কলকাতা : ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল হস্তান্তর চুক্তি বাস্তবায়িত করতে ভারত সরকারের সঙ্গে সহযোগিতার ইঙ্গিত দিয়েছে রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির নির্দেশে ছিটমহলগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কোচবিহারের জেলাশাসক মোহন গান্ধি ও জলপাইগুড়ির জেলাশাসক স্মারকী মহাপাত্র।
সাউথ ব্লকের একটি সূত্র জানিয়েছে, আগামী ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি দু’দিনের ঢাকা সফরে যাচ্ছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণ। চুক্তি রূপায়ণের বিষয়টি নিয়ে তিনি আলোচনা করবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির সঙ্গে।
এর আগে তিস্তার পানি বণ্টন প্রশ্নে কঠোর অবস্থান নিয়েছিলেন মমতা ব্যানার্জি। যাকে ঘিরে যথেষ্ট অস্বস্তিতে ছিল কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু ছিটমহল হস্তান্তর প্রশ্নে কেন্দ্রকে অস্বস্তিতে ফেলতে চায়নি রাজ্য সরকার। বরং এ ব্যাপারে রাজ্য সরকার যে সহযোগিতার পথেই হাঁটতে চায় সেই ইঙ্গিত স্পষ্ট।
এরই মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে শেষ হয়েছে ছিটমহল সমীক্ষার কাজ। কোচবিহার ও জলপাইগুড়ির থেকে পাঠানো জেলাশাসকদের রিপোর্ট জমা পড়েছে মহাকরণে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, চরম দুর্দশার মধ্যে রয়েছেন ছিটমহলের বাসিন্দারা। এখানে সড়ক, বিদ্যুৎ, স্কুল, পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই। নেই পঞ্চায়েত পরিষেবা। সুস্থভাবে বেঁচে থাকার ন্যূনতম পরিকাঠামো নেই ছিটমহলগুলোতে। এরা কোনো দেশেরই নাগরিক নন, নেই ভোটাধিকার, আইন-শৃঙ্খলার জটিলতা, টিকাকরণ কর্মসূচির অসম্পূর্ণতা এবং বার্ড ফ্লুর সমস্যা রয়েছে ব্যাপক হারে।
উল্লেখ্য, গত বছর সেপ্টেম্বরে ঢাকায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হাসিনা ও প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের মধ্যে ছিটমহল হস্তান্তর চুক্তি হয়। ঠিক হয়েছে, ১৬২টি ছিটমহল হস্তান্তরিত হবে।
ছিটমহল হস্তান্তর নিয়ে আলোচনা হলে চুক্তি অনুযায়ী, মোট ১৬২টি ছিটমহল বিনিময় হবে। এর মধ্যে ভারতের ১১১টি, যার মোট আয়তন ১৭ হাজার ১৫৮ একর। লোকসংখ্যা ৩৭ হাজার ৩৬৯। অন্যদিকে, বাংলাদেশের ছিটমহল ৫১টি। আয়তন ৭ হাজার ১১০ একর। লোকসংখ্যা ১৪ হাজার ২২১।
চুক্তি বাস্তবায়িত হলে ভারতের হাতছাড়া হবে ১০ হাজার ১৪৮ একর জমি। চুক্তিতে বলা হয়েছে, হস্তান্তরের পর ছিটমহলের বাসিন্দারা বেছে নিতে পারবেন তার পছন্দের ভূখণ্ড।
এদিকে, এ সংবাদ প্রথম বাংলানিউজের কাছ থেকে জানতে পেয়ে দু’দেশের সরকার ও মমতা ব্যানার্জির কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির ভারতের দিকে সহ-সম্পাদক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত ও বাংলাদেশের সম্পাদক গোলাম মোস্তাফা।
কোচবিহার ও কুড়িগ্রাম জেলার দাশিয়ারছড়া ছিটমহল থেকে ফোনে বলেন, আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। এত বছর পর আশার আলো দেখতে পাচ্ছি। দক্ষিণ এশিয়ার দু’টি বৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের এ সিদ্ধান্ত গণতন্ত্রকে আরও মজবুত করবে। এতদিন পর ছিটমহলবাসীরা নিজেদেরকে কোনো একটি দেশের নাগরিক রূপে পরিচয় দিতে পারবেন।
বাংলাদেশ সময় : ০০৪৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১২