ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

সরকারকে কালিমালিপ্ত করার জন্য ধর্ষণের অভিযোগ: মমতা

কলকাতা ব্যুরো | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১২

কলকাতা: সরকারকে কালিমালিপ্ত করার জন্য ধর্ষণের অভিযোগ আনা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী।

সম্প্রতি কলকাতার নাইট ক্লাব থেকে ফেরার পথে এক অ্যাংলো ইন্ডিয়ান নারীকে চলন্ত গাড়িতে ধর্ষণের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি মহাকরণে এ কথা বলেন।



তিনি এও বলেন, পার্কস্ট্রিটের পুরো ঘটনাটাই সাজানো, এটা সরকারকে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা। তদন্তে সব বেরিয়ে আসবে।

কলকাতার বুকে ধর্ষণের ঘটনার তদন্তে অসহযোগিতা নিয়ে শোরগোলের পর নড়ে বসে পুলিশ। বুধবার রাতে কয়েক জন যুবককে আটক করে তাদের শনাক্তকরণের জন্য অভিযোগকারিনীকে লালবাজারে ডেকে পাঠানো হয়।

তার পর শুরু হয় দীর্ঘ জেরা। এদিন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ফের অভিযোগকারিনীকে লালবাজারে ডেকে পাঠানো হয়।

কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ) দময়ন্তী সেন সাংবাদিক বৈঠকেই বলেছেন, কিছু একটা হয়েছে ওই রাতে (৫ ফেব্রুয়ারি)। তদন্তেই সেটা জানা যাবে।

কলকাতা পুলিশের অপর যুগ্ম কমিশনার জাভেদ শামিম দাবি করেন, ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে একইদিনে জিডি ও এফআইআর নেওয়া হয়েছিল।
 
দশদিন আগে মাঝ রাতে গাড়িতে তুলে ওই মহিলাকে মুখে বন্দুক গুঁজে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। পুলিশের কাছে গিয়েও ‘সুবিচার’ পাননি বলে জানান অভিযোগকারিণী।

তিনি বলেন, আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও জরুরি শারীরিক পরীক্ষা করাতে পুলিশ অহেতুক দেরি করেছে। এমনকি তার প্রতি ইঙ্গিতপূর্ণ আচরণ এবং অপমানজনক ব্যবহারও করেছেন পার্ক স্ট্রিট থানার কয়েক জন অফিসার।

বুধবার সন্ধ্যায় কলকাতার কলকাতার একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি আরও অভিযোগ করেন, সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট ঘেঁটে তিন অভিযুক্তের ছবি বার করে দেওয়া সত্ত্বেও পুলিশ বুধবার সন্ধে পর্যন্ত তাদের কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করেনি।

ঘটনা সম্পর্কে বুধবার মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পাঁচদিন আগের ঘটনা. পাঁচজনকে শনাক্ত করা হয়েছেভ  ।

ওই নারী জানিয়েছিলেন, গত ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে কয়েক জন বন্ধুর সঙ্গে তিনি প্রথমে পার্ক স্ট্রিটে একটি ক্লাবে গিয়েছিলেন। রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ তিনি কয়েক জন বন্ধুর সঙ্গে পার্ক স্ট্রিটেরই একটি পানশালায় যান। ওই পানশালা যে পাঁচতারা হোটেলে, সওয়া ১২টা নাগাদ সেখানকারই একটি নাইটক্লাবে যান তারা।

রাত দেড়টা নাগাদ ওই নারীর বন্ধুরা বাড়ি গেলেও তিনি যাননি। তিনি জানান, ওই নাইটক্লাবেই তার সঙ্গে লভি গিদওয়ানি, শরাফত আলি এবং আজহার আলি নামে তিন যুবকের আলাপ হয়। রাত ২টা নাগাদ তিনি সেখান থেকে বের হন। ওই যুবকেরা তাকে তাদের ‘হন্ডা সিটি’ গাড়িতে লিফট দিতে চায়।
ওই মহিলার কথায়, গাড়িতে ওঠার আগে লভির ব্যবহার, হাবভাব এত ভাল ছিল যে আমার একটুও সন্দেহ হয়নি। তাই রাজি হয়েছিলাম। পার্ক হোটেলের বাইরেই ওদের গাড়ি দাঁড় করানো ছিল। আমি ওঠার পর ডান দিকে লাভি ওঠে। আর তার মিনিট দু’য়েকের মধ্যে বাঁ দিকে ওঠে শরাফত আলি এবং আরও একজন। তাকে আমি আগে দেখিনি। সামনে চালকের পাশে ছিল আজহার আলি।

মহিলার বয়ানে এও জানা যায়, গাড়ি চলতে শুরু করতেই শরাফত তাঁর ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করে। ওর আচরণ দেখে সন্দেহ হতেই তিনি গাড়ি থামাতে বলেন। সেই সময় শরাফত তার মুখ চেপে, চুলের মুঠি ধরে গাড়ির সিটের ফাঁকে ফেলে দেয় বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।

তিনি বলেন, শরাফত আমার পেটে সজোরে একটা ঘুঁষি মারে. তখন সব অন্ধকার দেখছিলাম। ওরা গাড়িটা সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের পাশের গলিতে ঢুকিয়ে দেয়। গাড়িটা বেশ জোরে যাচ্ছিল। শরাফত আমার মুখে, মাথায়, পেটে বেধড়ক মেরে যাচ্ছিল। আমি যন্ত্রণায় চিৎকার করছিলাম।

কিন্তু গাড়ির কাচ বন্ধ থাকায় আমার আওয়াজ বাইরে যায়নি। আমি ওর পা ধরে বলছিলাম, আমাকে ছেড়ে দাও। কোনও ভুল করে থাকলে মাফ করে দাও। এক সময় শরাফত আমার মুখে বন্দুক ঢুকিয়ে বলল, চিল্লায়গি তো ঠোক দেঙ্গে।

ওই মহিলা জানান, চলন্ত গাড়িতেই শরাফত তাকে ধর্ষণ করে। সঙ্গে চলতে থাকে গালিগালাজ আর মার।

তার কথায়, আমার জ্ঞান ধীরে ধীরে লোপ পেতে থাক. শুধু ভাবছিলাম, আমার ছোট দু’টো মেয়ে ও মায়ের কী হবে!

তবে গাড়ির অন্য যুবকেরা তার উপর কোনও অত্যাচার করেনি বলে জানান ওই মহিলা।

ভোর সাড়ে ৪টা নাগাদ এক্সাইড মোড়ে তাকে গাড়ি থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়া হয়। মহিলা জানিয়েছেন, বেশ কিছুণ পর বিহ্বলতা কাটিয়ে ওঠে তিনি একটি ট্যাক্সি ধরে বেহালায় নিজের বাড়ি ফিরে যান।

বাংলাদেশ সময়: ১২০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।