ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

বিদেশি মদদে কুডনকুলামের পরমাণু প্রকল্পে বাধা, মামলা শুরু সিবিআইয়ের

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৫৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৯, ২০১২

নয়াদিল্লি: গত সপ্তাহেই বিজ্ঞান বিষয়ক মার্কিন জার্নাল ‘সায়েন্স’-এ দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে তামিলনাড়ুর কুডনকুলামে প্রস্তাবিত পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্প বিরোধী আন্দোলনের পিছনে বিদেশি অনুদানের অভিযোগ এনেছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং।

এবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের পরামর্শ মেনে পরমাণু প্রকল্প-বিরোধী আন্দোলনে যুক্ত ৪টি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার বিরুদ্ধে মামলা করল সিবিআই এবং তামিলনাড়ু পুলিশ।



কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব আর কে সিং নয়াদিল্লিতে জানিয়েছেন, নিয়ম বহির্ভূতভাবে বিদেশ থেকে আর্থিক সাহায্য নেওয়ার অভিযোগে ‘ফরেন কন্ট্রিবিউশন রেগুলেশন অ্যাক্ট(এফসিআরএ)’ অনুযায়ী- তুতিকোরিন ডায়োসিজ অ্যাসোসিয়েশন(টিডিএ), তুতিকোরিন মাল্টিপারপাস সোশ্যাল সার্ভিস সোসাইটি(টিএমএসএসএস), পিপলস এডুকেশন ফর অ্যাকশন অ্যান্ড লিবারেশন(পিএএএল) এবং গুড ভিশনদ-এর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এর আগে সোমবার কুডনকুলামে পরমাণু প্রকল্প বিরোধী আন্দোলনে মদদ দেওয়ার অভিযোগে সংশ্লিষ্ট এলাকা থেকে এক জার্মান নাগরিককে আটক করা হয়।

রাশিয়ার সহযোগিতায় কুডনকুলামে ২০০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ার উদ্যোগ নিয়েছে ভারত সরকার। কিন্তু ইউপিএ সরকারের এই উদ্যোগ ঘিরে প্রবল বিক্ষোভ দানা বেধেছে কুডনকুলম ও সন্নিহিত তিরুনেলভেলি, থুথুকুড়ি, তুতুকোরিন এলাকায়।

কেন্দ্র ও তামিলনাড়ু পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের রিপোর্ট, আমেরিকা এবং কয়েকটি স্ক্যান্ডিনেভীয় দেশ থেকে এই আন্দোলনের জন্য নিয়মিত অর্থসাহায্য আসছে। পরমাণু বিরোধী আন্দোলনের নেতা এস পি উদয়কুমারের সঙ্গে বিদেশি দাতা গোষ্ঠীগুলির ঘনিষ্ঠ যোগাযোগেরও প্রমাণ মিলেছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি ডিগ্রীধারী উদয়কুমার নিজে পিএএএল-এর প্রধান কর্মকর্তা। অন্য তিন সেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গেও তার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে।

কুডনকুলম উপকূলের মত্সজীবীদের উন্নয়ন, শিক্ষার প্রসার, শিশুদের স্বাস্থ্য পরিষেবা-সহ নানা কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য বিদেশ থেকে অনুদান এনে সেই টাকা পরমাণু প্রকল্প বিরোধী আন্দোলনে ব্যয় করার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ মিলেছে সংশ্লিষ্ট ৪টি এনজিও’র বিরুদ্ধে।

প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী ভি নারায়ণস্বামী ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন, আন্দোলনে যোগদানকারী গ্রামবাসীদের মধ্যে টাকা ও মদের বোতল বিলি করছে কয়েকটি এনজিও।
যদিও সংশ্লিষ্ট এনজিও’গুলির তরফ থেকে সব অভিযোগই অস্বীকার করা হয়েছে। এমন কী তাদের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ আনার জন্য মনমোহন সিংকে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন এস পি উদয়কুমার।

এ ঘটনায় কুডনকুলম এলাকায় সক্রিয় কয়েকটি ক্যাথলিক চার্চ-এর ভূমিকা নিয়েও উঠেছে নানা প্রশ্ন। ‘দ্য ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ চার্চেস ইন ইন্ডিয়া’ এবং ‘দ্য চার্চ অফ সাউথ ইন্ডিয়া’র তরফ থেকে কুডনকুলম এলাকার গ্রামগুলোতে ইতিমধ্যেই পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্প বিরোধী পোস্টার ও লিফলেট বিলি করার ঘটনার কথাও জানা গেছে।

পরমাণু প্রকল্পপন্থী গ্রামবাসীদের অভিযোগ, অনুন্নয়ন ও দারিদ্র্যের সুযোগ নিয়ে নিয়মিতভাবে ধর্মান্তকরণের কাজ চালায় এই চার্চগুলো। পরমাণু প্রকল্পের কাজ শুরু হলে এলাকায় ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। সেক্ষেত্রে জীবনধারণের জন্য জেলেপল্লীর বাসিন্দাদের আর চার্চের উপর নির্ভর করতে হবে না। ফলে ইতি পড়বে ধর্মান্তকরণ কর্মসূচিতেও। আর এই আশঙ্কা থেকেই পরমাণু প্রকল্পের বিরোধিতায় নেমেছে চার্চ।

বাংলাদেশ সময়: ২৩৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৯, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।