ঢাকা, মঙ্গলবার, ৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৮ রমজান ১৪৪৫

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

ত্রিপুরায় অধিক ফলনশীল ধান উদ্ভাবন গবেষকদের

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২১ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০২২
ত্রিপুরায় অধিক ফলনশীল ধান উদ্ভাবন গবেষকদের

আগরতলা (ত্রিপুরা): ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের আবহাওয়ায় ভিন্নতার কারণে সব জায়গায় সমপরিমাণে ধান উৎপাদন হয় না। আবার সব জাতের ধান সব রাজ্যে সমান ফলন দেয় না।

তাই কৃষি গবেষকরা স্থানীয় এলাকার আবহাওয়া সঙ্গে তাল মিলিয়ে অধিক ফলনশীল রোগ প্রতিরোধে সক্ষম ধানের জাত উদ্ভাবন করছেন। এই কাজে ত্রিপুরাও পিছিয়ে নেই।  

ত্রিপুরা রাজ্য সরকারের কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের রাজধানী আগরতলা অরুন্ধতীনগর এলাকার ‘রাজ্য কৃষি গবেষণা কেন্দ্র’ উন্নত জাতের ধান উদ্ভাবনের জন্য কাজ করছে। কৃষি গবেষক ড. অতনু পাল দীর্ঘদিন ধরে রাজ্যের আবহাওয়ার সঙ্গে মানানসই এবং স্থানীয় এলাকায় ধানের রোগ-পোকার আক্রমণ প্রতিরোধ করে উচ্চ ফলনশীল সুস্বাদু ও মানসম্পন্ন ধান উৎপাদনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।  

ইতোমধ্যে তিনি নতুন একটি ধানের জাত উদ্ভাবন করেছেন। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘অরুন্ধতী’। এটি পরীক্ষা মূলক ভাবে গবেষণাকেন্দ্রের কৃষি প্লটে চাষ করা হচ্ছে এবং আশানুরূপ ফল পাওয়া যাচ্ছে। খুব শীঘ্রই নতুন জাতের ধানের বীজ কৃষকদের হাতে তুলে দেওয়া হবে। ত্রিপুরা রাজ্যের আবহাওয়া পরিপার্শিক অবস্থা ইত্যাদি বিবেচনা করে নতুন এই ধানের জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে।  

গবেষক ড. অতনু পাল বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, ‘অরুন্ধতী’ জাতের ধান উদ্ভাবন করার মূল উদ্দেশ্য রাজ্যের কৃষকরা যাতে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হন। এই ধানের চাল আকারে অনেক ছোট। এছাড়া সুস্বাদু এবং উচ্চ ফলনশীল।  

তিনি জানান, ইরানিয়ান দুটি জাতের ধানের সঙ্গে সঙ্করায়ন করে নতুন এই অরুন্ধতী জাতের ধান উদ্ভাবন করা হয়েছে। তিনি ২০১২-১৩ অর্থবছরে প্রথম ধানের এই জাত উদ্ভাবনের কাজ শুরু করেন। তার কাছে ফিলিপাইনস থেকে ইরানিয়ান দুটি জাতের ধানের বীজ আসে। এরপর তিনি ইন্ডিয়ান রাইস ইষ্টিটিউট অব রাইস রিসার্চে (আইআইআরআর) পাঠিয়ে প্রয়োজনীয় কিছু তথ্য সংগ্রহ করেন। এরপর ২০১৫ সাল থেকে প্রতি বছর ধাপে ধাপে তাদের গবেষণা প্লটে চাষ করা হচ্ছে এবং গুনগত মান বৃদ্ধি করা হচ্ছে।  

গবেষণা একেবারে চূড়ান্ত পর্বে চলে এসেছে তাই আগামী কিছু দিনের মধ্যে ‘অরুন্ধতী’ কৃষকের মাঠে পৌঁছে যাবে বলে জানান ড. অতনু পাল। তবে প্রিব্রিডিং ডেমোস্টেসন প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে গবেষণা কেন্দ্রের পাশাপাশি ইতোমধ্যে সিপাহীজলা জেলার গোলাঘাটি এলাকার কৃষকদের মাঠে চাষ করা হচ্ছে।  

‘অরুন্ধতী’ জাতের ধানের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট হলো অন্যান্য ধানগাছের তুলনায় এগুলির উচ্চতা কম, ৮০ থেকে ১০০ সেন্টিমিটার উচ্চতার হয়। ফলে বৃষ্টি বা বাতাসের কারণে মাটিতে হেলে পড়ে না। তাই চাষিরা খুব সহজে পাকা ধান কেটে ঘরে তোলতে পারেন, ধান নষ্ট হয় না।  ধানের শীষ বেশী হয়। তাছাড়া এই জাতের ধানের চাল খুব সরু হয় এবং সুস্বাধু।  

খারিফ এবং বোরো দুটি মৌসুমেই ‘অরুন্ধতী’ ধান চাষ হয়। তবে খারিফে ফলন সর্বাধীক হয়েছে বলে জানিয়েছেন ড. অতনু পাল।  

ত্রিপুরা রাজ্যে টিলাজমি রয়েছে, এই সব জমিতে নিচু জমি তুলনায় পানির পরিমাণ কম থাকে, টিলার জমিতে এই ধান চাষ করা হয়েছে কি? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান ‘অরুন্ধতী’ জাতের ধানে ড্রট টলারেন্স জিন অর্থাৎ খরা সহনশীল জিনের পরিমান অধিক হওয়ায় খুব সহজে উচু জমিতে চাষ সম্ভব। জুমে এই ধান পরীক্ষামূলক চাষ না করা হলেও ধান গবেষণা কেন্দ্রের টিলা জমিতে চাষ করে দেখা হয়েছে। এ ধরণের জমিতে ৭ থেকে ১০দিন পর্যন্ত গাছের গুড়ায় পানি না থাকার পরও টিকে থাকতে পারে।  

তিনি জানান, যেহেতু ত্রিপুরা চাষের পরিকল্পনা নিয়ে ‘অরুন্ধতী’ জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে তাই এই অঞ্চলের রোগ-পোকার বিষয়টিতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলক বেশি।  

চারা তৈরি থেকে আবার ‘অরুন্ধতী’ ধান আহরণ পর্যন্ত ১২০ দিন সময় লাগে। হেক্টর প্রতি সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় টন পর্যন্ত ফলন হয়। অন্যান্য ধানের তুলনায় এই জাতের ধানে ফলন সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ বেশী। তবে উচ্চ ফলন পাওয়ার জন্য সার, বালাইনাশক প্রয়োগ এবং উপযুক্ত পরিচর্যা করতে হবে বলে জানান তিনি।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫ ১৭ ঘণ্টা, জুন, ২০২২।
এসসিএন/এসএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।