রাজধানী ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) বাস্তবায়নে একটি সংগঠনের সুপারিশের ভিত্তিতে একটি ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। ড্যাপ বাস্তবায়নে গঠিত এই কমিটিকে স্বাগত জানিয়েছেন আবাসন খাতের উদ্যোক্তারা।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশদ এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বড় আবাসন খাতের সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিত্ব থাকা জরুরি। একই সঙ্গে শুধু একটি সংগঠনের সুপারিশের ভিত্তিতে ওয়ার্কিং কমিটি না করে সংশ্লিষ্ট সবার যৌক্তিক প্রস্তাবগুলো গ্রহণের সুযোগ রাখলে ড্যাপ বাস্তবায়ন সহজ হতো। তাঁরা বলছেন, ২০১০ সালের ড্যাপ বাস্তবায়নে পিছিয়ে পড়ার অন্যতম কারণ ছিল এখানে উদ্যোক্তাদের অন্তর্ভুক্ত না করা।
নগর পরিকল্পনাবিদ আদিল মুহাম্মদ খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ওয়ার্কিং কমিটি হতে পারে সেটিকে স্বাগত। তবে সেটি সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে হওয়া উচিত। দেখা গেল বিএলডিএ বা রিহ্যাবের মতো বড় সংগঠন ভালো মতামত দিল। সেগুলো নিয়েও আলোচনার সুযোগ রাখতে হবে। ’ তিনি বলেন, ‘ড্যাপের গেজেট হওয়ার পর থেকে আলোচনা-সমালোচনা ছিল। এটি থাকাটা স্বাভাবিক। তবে মাত্র একটি সংগঠনের (আইএবি) ড্যাপবিষয়ক সুপারিশমালা নিয়ে গঠিত ওয়ার্কিং কমিটিকে আমি স্বাগত জানাতে পারছি না। কারণ সেখানে বলা হয়নি ড্যাপ নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের যৌক্তিক মতামত নিয়ে আলোচনা হবে। একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে কোনো একটি নির্দিষ্ট সংগঠনের সুপারিশ নিয়ে আলোচনার বিষয়টি ঠিক না। এমন মতামত অনেকেই দিয়েছেন। মতামত আছে। ’
নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশ ল্যান্ড ডেভেলপারস অ্যাসোসিয়েশন (বিএলডিএ), রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশসহ (রিহ্যাব) আবাসন খাতের বড় সংগঠনগুলোর মতামত নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বড় স্টেকহোল্ডাররা যদি ড্যাপ বাস্তবায়নে এগিয়ে না আসেন তবে রাজধানীকে বাসযোগ্য করে গড়ে তোলা কঠিন হবে।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা বলেন, ‘এটা আসলে এ রকম কোনো ওয়ার্কিং কমিটি না। স্থপতি ইনস্টিটিউট স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মহোদয়ের কাছে কিছু দাবি করেছিল। তখন বলা হয়েছিল, (মন্ত্রণালয় থেকে) যদি যৌক্তিক কিছু হয় তবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অর্থাৎ ড্যাপবিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটিতে উপস্থাপন করা হবে। কমিটি যদি যৌক্তিক মনে করে তখন বিবেচনা করা হতে পারে। প্রস্তাবটির ওপর কাজ করে একটা খসড়া স্থানীয় সরকারমন্ত্রীকে দিলে যদি যৌক্তিক মনে হয়, তাহলে আলোচনায় (মন্ত্রিসভা কমিটিতে) আসবে। সুপারিশমালায় দু-একটি এলাকায় ভবনের উচ্চতা (এফএআর) বাড়ানোর বিষয় ছাড়া আর কিছু আছে কি না আমি এখনো দেখিনি। ’
ওয়ার্কিং কমিটিতে আবাসন খাতের সংশ্লিষ্ট বড় সংগঠনগুলোকে রাখার বিষয়ে তিনি আবারও বলেন, ‘এটা তো আসলে কোনো কমিটি না। আন-অফিশিয়ালি দেখার জন্য বলা হয়েছে। স্থপতি ইনস্টিটিউট মন্ত্রণালয়ে কিছু সুপারিশ দিয়েছে। তখন মন্ত্রী মহোদয় বলেছেন, এগুলো একটু দেখেন। এখন আন-অফিশিয়ালি বিষয়টি দেখা হবে। পরে অফিশিয়ালি সেটি মন্ত্রণালয়ে জানানো হবে। রাজউকের কর্মকর্তারা বিষয়টি বুঝে উনাকে (মন্ত্রী) জানাবেন। পরে আরো কাউকে প্রয়োজন হলে উনি ডাকবেন। এটা আমাদের কিছু না। এখানে রাজউকের কিছু করার নেই। ’
তিনি আরো বলেন, ‘যে জটিলতা (ড্যাপ নিয়ে) তৈরি হয়েছে, সেটি উনারা (গঠিত ওয়ার্কিং কমিটি) দেখবে। রিহ্যাব বা অন্য কেউ চাইলে আবেদন (স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বরাবর) করতে পারেন। তিনি (মন্ত্রী) যদি আবার বলেন আমরা আবারও দেখব। ’
আবাসন খাতের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সবার জন্য আবাসন নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ ল্যান্ড ডেভেলপার অ্যাসোসিয়েশন (বিএলডিএ) ও রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব)।
ড্যাপ নিয়ে রাজউকের গঠিত ওয়ার্কিং কমিটিকে স্বাগত জানিয়ে বিএলডিএর মহাব্যবস্থাপক নওশেরুল আলম বলেন, ‘আলোচনার জায়গা রাখাটা প্রশংসনীয়। ওয়ার্কিং কমিটির মাধ্যমে নিশ্চয়ই স্টেকহোল্ডাররা যৌক্তিক প্রস্তাবনা উপস্থাপনের সুযোগ পাবেন। তবে আবাসন খাতে ৮০ শতাংশ চাহিদা পূরণ করেন বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা। যাঁরা বিএলডিএ ও রিহ্যাবের সঙ্গে জড়িত। যেকোনো নীতিনির্ধারণে এই দুই সংগঠনের প্রতিনিধিত্ব না থাকলে সেটা অপূর্ণ থেকে যাবে বলে মনে করছি। ’
আবাসন শিল্প খাতে জড়িত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দাবি করেন, ২০১০ সালে প্রণীত পরিকল্পনায় শিল্পের প্রতিনিধি না থাকার কারণে তার সুষ্ঠু বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। গত বছরের আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহে ড্যাপের গেজেট প্রকাশ করে সরকার। তবে এবারও আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে সঠিক বাস্তবায়ন নিয়ে শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ না করে ড্যাপ অনুমোদন করায়।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০২৩
নিউজ ডেস্ক