ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ভ্যাট বিষয়ক সেমিনার

জিডিপির ৫০ ভাগ কর অব্যাহতির আওতায়

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৩
জিডিপির ৫০ ভাগ কর অব্যাহতির আওতায় নবিআর আয়োজিত ভ্যাট বিষয়ক সেমিনারে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি | ছবি: রাজীন চৌধুরী

ঢাকা: মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (জিডিপি) ৫০ ভাগ পণ্য ও সেবা কর অব্যাহতির আওতায়। এ কারণে কর-জিডিপির অনুপাত কম।

দেশের কর-জিডিপির অনুপাত বৃদ্ধি করতে কর অব্যাহিত এলাকা হ্রাস, উন্নত মানবসম্পদ সৃষ্টি, পর্যাপ্ত অবাকাঠামো, অটোমেশন ও সুশাসনের জোর দিয়েছেন বক্তারা।

দুই দিনব্যাপী রাজস্ব সম্মেলনের প্রথম দিন রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রের কার্নিভাল হলে এনবিআর আয়োজিত ভ্যাট বিষয়ক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেছেন।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, রাজস্ব আদায়ের শক্তি পদ্মা সেতু নির্মাণে সরকারকে চ্যালেঞ্জ নিতে সহায়তা করেছিল। ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশে পদার্পণ করতে হলে যে অবকাঠামো প্রয়োজন, সেটা করতেও এনবিআর ভূমিকা রাখছে। করদাতাদের অর্থে পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেল, রাজধানীর মেট্রোরেলের মতো বড় বড় অবকাঠামো তৈরি করা হচ্ছে।

অন্যরা প্রকল্পের শেষের দিকে অর্থ বাড়ানোর চিঠি লেখে। সেখানে এনবিআর নিজস্ব ভবন তৈরিতে ৪৫১ কোটি টাকা প্রকল্প গ্রহণ করে ৪১২ কোটি টাকায় শেষ করেছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে এনবিআরের দৃষ্টান্ত অন্যরাও গ্রহণ করতে পারে, যোগ করেন বাণিজ্যমন্ত্রী।

সভাপতির বক্তব্যে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রাহামাতুল মুনিম বলেন, ভ্যাটের মাধ্যমে করনেট যতটা সম্প্রসারণ করা সম্ভব হয়েছে, স্বল্প সময়ে এর চেয়ে বেশি প্রত্যাশা করা ঠিক নয়। ১৯৯১ সালের ভ্যাটের যাত্রা শুরু হলেও ভ্যাট আদায়ে গতি আসে মূলত ২০১২ সালের পর। এরপর ২০১৯ সালে ভ্যাট আইন কার্যকর শুরু হলে প্রকৃত গতি যোগ হয় ভ্যাট আহরণে।

তারপরও আমরা ভ্যাট আদায়ে প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। অনলাইনের মাধ্যমে ভ্যটি আদায়সহ বিভিন্ন প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। নেটের বাইরের আর যে সব যায়গা আছে, তা নেটের মধ্যে আনার জন্য যে চেষ্টা চলছে, যোগ করেন এনবিআর চেয়ারম্যান।

তিনি বলেন, আমাদের বেশি সমালোচনার জায়গা হলো, খুঁচরা পর্যায়ে ভ্যাট সংগ্রহ। খুঁচরা পর্যায়ে আমাদের ভ্যাট প্রদানকারীদের স্বচ্ছতা ও নিশ্চিয়তা দিতে পারছি না। ২০২০ সালে অনলাইনের মাধ্যমে ভ্যাট প্রদানে যে পাইলট প্রগ্রাম শুরু করেছিলাম তাতে আমরা সফল হয়েছি। এটা একটি সফল কার্যক্রম হতে পারে। যার মাধ্যমে খুঁচরা পর্যায়ে ভ্যাট সংগ্রহ করা হবে। এরই ধারাবাহিকতায় ব্যাপক পর্যায়ে কার্যক্রম পরিচালনা করতে আউট সোর্সিং প্রক্রিয়ায় যাবো। অংশীজনের মাধ্যমে এ কার্যক্রম আমরা সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে চাই।

ভ্যাট-ট্যাক্স বিষয়ক মামলা দ্রুত সম্পন্ন করতে অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের সাথে এনিবআরের যোগাযোগ বৃদ্ধিতে জোর দেন অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি  অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ আমিন উদ্দিন। তিনি বলেন, ভ্যাট, ট্যাক্স বিষয়ক মামলা বিভিন্ন কোম্পানির পক্ষে যে সব আইনজীবী পরিচালনা করেন তারা এ বিষয়ে পারদর্শী। যখন এনবিআর থেকে মামলা যাবে, যাতে এনবিআর পক্ষ থেকে আমার (অ্যাটর্নি জেনারেল) অফিস অথবা আমাদের সাথে যেন যোগযোগ করে। যাতে আমরা কাগজ-পত্র, তথ্য উপাত্ত পাই। এটা হলে দ্রুত সম্পন্ন হবে। যদিও আমরা এ ব্যাপারে কাগজপত্র, তথ্য উপাত্ত পাই। এই যোগাযোগটা আরও বৃদ্ধি করতে হবে।

দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই-এর সিনিয়র সহ-সভাপতি সেমিনারে প্যানেল আলোচক মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু রাজস্ব বৃদ্ধিতে জেলা পর্যায়ে নিজস্ব অফিসের পাশাপাশি কর্মকর্তাদের দক্ষতা ও সততা বৃদ্ধির তাগিদ দেন। তিনি বলেন, কর ফাঁকির জন্য জেলা শহরে এক ব্যবসায়ীকে চার কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছিল। পরে আমরা জানতে পেরেছি সরকারকে তো রাজস্ব দেয়নি। পুরোটা কর্মকর্তাদের সাথে লেনদেন করে। এর মাধ্যমে অসাধুদের সুবিধা হলো। সরকার বঞ্চিত হলো। আমার আবেদন, এ জন্য ভ্যাট গোয়েন্দা শাখাকে আরও শক্তিশালী করা হোক। যাতে পরবর্তীতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে।

‘জাতীয় উন্নয়নে ভ্যাটের ভূমিকা: বর্তমান ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধে ভ্যাট কমিশনার মুসফিকুর রহমান বলেন, ২০১২-২২ অর্থ বছরে ভ্যাট আহরিত হয়েছিল হয়েছিল ১ লাখ ৮ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা। একই বছরে আমদানি পর্যায়ে কর রেয়াত সমন্বয় করতে হয়েছিল ৪৪ হাজার ৩২৯ কোটি টাকা। যা মোট জিডিপির ২ দশমিক ৮৪ শতাংশ। রেয়াতকৃত কর যোগ করা হলে মোট ভ্যাট হতো ১ লাখ  ৪২ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা। ভ্যাট দাঁড়াতো জিডিপির ৪ শতাংশ।

স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অভিযাত্রায় ভ্যাট আহরণ কার্যক্রমও এগিয়ে চলেছে ‘বিশ্ব ই-কমার্স ও স্মার্ট বাংলাদেশ’ শীর্ষক অপর প্রবন্ধে জানান কমিশনার শওকত আলী সাদী। তিনি বলেন, ২০১৫ সালে খুচরা পর্যায়ে ই-কমার্সের অবদান ছিল ৭.৪ শতাংশ। ২০২০ সালে এটা দাঁড়িয়েছে ১৯ শতাংশ। ক্রমান্বয়ে এর অগ্রগতি হবে। অটোমেশনের ধারায় ফেসবুক, গুগলের মতো অনাবাসী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকেও ভ্যাট আদায় শুরু হয়েছে এবং ক্রমাগত তা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আয়কর নিয়ে নানা প্রকার ভোগান্তি, অসুবিধা থাকলেও ভ্যাট নিয়ে এসব নেই। অনলাইনেই তা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। অটোমশেনের পথে অনেক দূর এগিয়ে গেছে ভ্যাট আহরণ কার্যক্রম, যোগ করেন তিনি।

সেমিনারের অন্যতম প্যানেল আলোচক ছিলেন ফরেন ইনভেস্টর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট ও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাসের এজাজ বিজয়।

বাংলাদেশ সময়: ২০১৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০২৩
জেডএ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।