ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

এলসি খুলতে না পারায় বাড়ছে ফলের দাম

গৌতম ঘোষ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১২ ঘণ্টা, মার্চ ১, ২০২৩
এলসি খুলতে না পারায় বাড়ছে ফলের দাম

ঢাকা: ডলার–সংকট, ব্যাংকগুলো ঋণপত্র খোলা একেবারে বন্ধ করে দেওয়ায় ফল আমদানিতে নানা অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। তাতে ফলের আমদানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

এ কারণে বাড়ছে ফলের দাম।  

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, সামনে রমজান মাস ব্যাংকগুলো ঋণপত্র খুলতে না দিলে বাজারে ফলের সংকট দেখা দিতে পারে। সব মিলিয়ে এ খাতের ব্যবসায়ীরা এখন আমদানি ও বিক্রি নিয়ে সংকটে পড়েছেন। আমদানি স্বাভাবিক না হলে এ সংকট আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা তাঁদের।

রাজধানীর ফল আমদানিকারকেরা বলছেন, গত বছরজুড়ে দেশে ডলারের বাজারে অস্থিরতা ছিল চরমে। এতে ফল আমদানি গুরুতরভাবে বাধাগ্রস্ত হয়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্বব্যাপী জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় আমদানির ক্ষেত্রে জাহাজভাড়াসহ পরিবহন খরচও বেড়ে যায়। সব মিলিয়ে তাই আমদানি করা ফলের বাজারে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়।

তারা আরও বলেন, ব্যাংকগুলো গত বছরের তুলনায় এখন ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে তা বাজার চাহিদার তুলনায় কম। সরকার ফল আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপের পর থেকে ব্যাংকগুলো ঋণপত্র খোলা একেবারে বন্ধ করে দিয়েছিল। এরপর গত বছরের মাঝামাঝি থেকে আমদানি কমতে থাকে।

এবিষয়ে ঢাকা মহানগর ফল আমদানি-রপ্তানিকারক ও আড়তদার ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম শেখ বাংলানিউজকে বলেন, এক বছর আগের তুলনায় এখন ফল আমদানি কমেছে ৩০ শতাংশের বেশি। আবার আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ। আবার সব ধরনের জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ায় মূল্যস্ফীতিও বাড়তি। তাই খরচে লাগাম টেনেছে সাধারণ মানুষ। এ কারণে বিক্রিও কমে গেছে।

তিনি বলেন, আমদানিতে ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় বিনিয়োগ বেশি করতে হচ্ছে। তাতে পরিচালন খরচ বেড়েছে। ব্যাংক থেকে বাড়তি ঋণ নিয়ে ব্যবসা করতে হচ্ছে। এজন্য আগের চেয়ে বেশি সুদ গুনতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে টিকে থাকার লড়াইয়ে আছেন আমদানি করা ফলের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা।

রাজধানীর বাদামতলী ফল বাজারের আমদানিকারকেরা বলছেন, ফলের আমদানি কমে যাওয়ায় তাঁদের ব্যবসাও কমে গেছে। ডলারের বাড়তি দাম ও আমদানি কমার কারণে বাজারে ফলের দাম ১০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। মাঝে একটা সময় এ দাম ২০ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছিল। এজন্য অনেকে মুনাফা কমিয়ে ব্যবসায় টিকে থাকার চেষ্টা করছেন। আবার অনেক ব্যবসায়ী বড় ক্ষতির শঙ্কায় আমদানি বন্ধ করে দিয়েছেন।

বাদামতলী পাইকারি ফল ব্যবসায়ী মো. আবুল কালাম বাংলানিউজকে বলেন, ফলের দাম এখন কিছুটা স্থিতিশীল রয়েছে। মাঝে বাজারের অবস্থা বেশি খারাপ হয়ে গিয়েছিল। তখন দৈনিক বেচাকেনা ৪০ শতাংশের মতো কমে যায়। এখন বেচাকেনায় কিছুটা গতি এসেছে। তবে সামনে রমজান মাস যদি আমদানি ব্যাহত হয়, তাহলে বাজারে অস্থিরতা দেখা দিতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সফিকুজ্জামান বলেন, ফল ব্যবসায়ীরা বলছেন বিদেশি ফল সময়মতো বন্দরে খালাস করা যায় না। সেজন্য তারা আর্থিক ক্ষতিতে পড়েন। আমরা বিদেশি ফল আমদানিতে বন্দরে আটকে থাকার বিষয়টি দেখব। দ্রুত ফল খালাসের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করা হবে। বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও এ নিয়ে যোগাযোগ করা হবে।

চট্টগ্রাম কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ১ জুলাই থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিদেশি ফলের মধ্যে আপেল, কমলা, ম্যান্ডারিন (ছোট কমলা), আঙুর ও নাশপাতি আমদানি হয়েছে ৯৩ হাজার ৩৬১ টন। এর আগের বছরের একই সময়ে এই পাঁচ ধরনের ফলের আমদানি হয়েছিল ১ লাখ ৩৯ হাজার ৩০৬ টন। অর্থাৎ আমদানি নিরুৎসাহিত করার উদ্যোগের ফলে আমদানি কমেছিল ৪৫ হাজার ৯৬৫ টন বা ৩৩ শতাংশ। উল্লিখিত পাঁচ ধরনের ফলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমদানি কমেছে আপেল, কমলা ও আঙুরের।

দেশে ডলার-সংকট দেখা দেওয়ায় গত বছরের মে মাসের শেষ সপ্তাহে ফল আমদানিতে নিরুৎসাহিত করতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপ করেছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। পরে ফল আমদানিতে ঋণসুবিধাও বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর থেকে আমদানিকারকদের নগদ টাকায় ফল আমদানি করতে হচ্ছে। আবার আমদানির খরচও বেড়ে গেছে। তাতে এক বছর আগের তুলনায় এখন আমদানিতে নগদ টাকা বেশি লাগছে।

বাংলাদেশ সময়: ১২১২ ঘণ্টা, মার্চ ০১, ২০২৩
জিসিজি/এসআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।