ঢাকা: বেশ কিছু দিন ধরে এলাকার ছোট-বড় দোকানগুলোতে তরমুজের ব্যাপক সরবরাহ লক্ষ্য করা গেছে। এরই মধ্যে আড়তগুলোতে নতুন করে উঠতে শুরু করেছে তরমুজ।
বুধবার (১ মার্চ) সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার খুচরা ফলের দোকানের পাশাপাশি বাদামতলী, যাত্রাবাড়ী এবং কারওয়ান বাজারের ফলের আড়তগুলোতে ঘুরে দেখা গেছে, পাইকারি পর্যায়ে আকারভেদে প্রতি একশত তরমুজ ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। আর খুচরা পর্যায়ে প্রতি পিছ তরমুজ দুইশত টাকা থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি অনেক এলাকায় ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরেও তরমুজ বিক্রি হতে দেখা গেছে।
এ বিষয়ে কারওয়ান বাজারের ফলের আড়তদার ও তরমুজ বিক্রেতা দেলোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, তরমুজের বাজার এখনো ভালো করে শুরু হয়নি। আরো কিছুদিন পর তরমুজের বাজার স্বাভাবিক হবে। বর্তমানে ক্রেতার সংখ্যা খুবই কম। একমাস ধরে আড়তে ফলের মধ্যে শুধু তরমুজ বিক্রি করছি। শুরুর দিকে বাজারে সিলেট থেকে আসা তরমুজের সংখ্যা ছিল বেশি। সিলেটের তরমুজ কেজি হিসেবে বিক্রি করেছি। প্রতি কেজি ৩৫ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছি। সিলেটের তরমুজ বিক্রি শেষ এখন বাজারে বরিশালের তরমুজ বিক্রি হচ্ছে। বাজারে এখন মিট ফেমিল এবং বাংলা লিংক নামের তরমুজ চলছে বলে জানান এই বিক্রেতা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তরমুজ সাধারণত রঙ এবং আকারের দিক থেকে দুই ধরনের হয়। গোলাকৃতির তরমুজ (খরমুজ) এবং লম্বাটে (তরমুজ)। এই দুই ধরনের তরমুজেই কালচে সবুজ এবং ডোরাকাটা সবুজ উভয় রঙেরই হয়ে থাকে। তবে ডোকারাটা সবুজ রঙের তরমুজের স্বাদ তুলনামূলক ভালো।
যদিও ক্রেতারা বলছেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে ফলকে নাগালের বাইরে মনে করছেন অনেক সাধারণ ক্রেতারা। এ কারণে উপলক্ষ ছাড়া ফল খাওয়া হয় না বলে জানিয়েছেন অনেকে।
মিরপুর ১০ নম্বরে ফল পট্টিতে পরিবারের জন্য তরমুজ কিনতে গিয়েছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী আকমল হোসেন। সেখানে তরমুজ কেজি হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি করছেন দোকানীরা। আকমল হোসেন একটি তরমুজ পছন্দ করে দোকানিকে ওজন করতে বলেন। তরমুজের ওজন ছিল সাড়ে আট কেজি। সে হিসেবে তরমুজের দাম আসে ৫১০ টাকা। তবে ৫১০ টাকা মূল্যের দিক থেকে বিবেচনা করলে তমুজের আকার অতটা বড় না। দাম বেশি দেখে তিনি আর তরমুজটি কিনতে পারেননি।
আকমল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, গরমকালে তরমুজ অবশ্যই একটি বিশেষ ফল। স্বাভাবিকভাবেই গরমে এর প্রতি সবারই বিশেষ আকর্ষণ কাজ করে। কিন্তু এত বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে যে কারণে কিনতেও পারছি না। এত দাম দিয়ে সামান্য এত টুকু তরমুজ কিনে বাসায় নিলে বাসার সবার চাহিদাও মেটানো সম্ভব না। এক তরমুজে আসলে কিছুই হয় না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তরমুজের সিজন হওয়াতে বেশিরভাগ এলাকাতেই এখন পিছ হিসেবে তরমুজ বিক্রি হচ্ছে। তবে সিজন ছাড়া বেশিরভাগ ব্যবসায়ী কেজি হিসেবে তরমুজ বিক্রি করেন। যদিও এখন যারা কেজি হিসেবে তরমুজ বিক্রি করছেন তারা বেশিরভাগই মৌসুমি ফল বিক্রেতা এবং তাদের কাছে পরিমাণেও তরমুজ কম থাকে।
তবে জেলা পর্যায়ে থেকে শহরে যে সকল তরমুজ আসে তা সবই পিছ হিসেবে বিক্রি করছেন সকল পাইকারি আড়তদাররা। বর্তমানে বাজারে বরিশাল, পটুয়াখালী, পিরোজপুরসহ উপকূলীয় এলাকাগুলো থেকে তরমুজ ঢাকায় আসছে। বিভিন্ন জেলা থেকে আসা তরমুজগুলো প্রথমে রাজধানীর তিনটি বাজারে আসে। বাদামতলী ফলের আড়ত, যাত্রাবাড়ী ফলের আড়ত এবং কারওয়ান বাজার ফলের আড়তে আসে। এখান থেকে তরমুজ কিনে ব্যবসায়ীরা নগরীর বিভিন্ন এলাকায় বিক্রির জন্য নিয়ে যান।
যাত্রাবাড়ী সবুজ বাংলা ফল আড়ত সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. জামাল হাওলাদার বাংলা নিউজকে বলেন, তরমুজের বাজার নির্ভর করে ক্রেতার ওপর। ক্রেতা বেশি থাকলে বেচাকেনাও ভালো হয়। এগুলো কাঁচামাল তাই বেশি দিন রাখা যায় না। এ বছর তরমুজের বাজার খুবই খারাপ। ক্রেতা একদমই কম। তরমুজের বদলে এখন শীতকালীন বড়ই বেশি বিক্রি হচ্ছে। আশা করছি শবেবরাতের পর থেকেই তরমুজের চাহিদা বাড়বে। আগের বছরগুলোতে এসময় যেখানে প্রতিদিন বিশ কন্টেইনার তরমুজ বিক্রি করতাম, এ বছর সেখানে প্রতিদিন দুই কন্টেইনার তরমুজ বিক্রি করতে অনেক কষ্ট হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৪ ঘণ্টা, মার্চ ০১, ২০২৩
ইএসএস