ঢাকা: রাজধানীর আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) ১৪তম ‘এশিয়া ফার্মা এক্সপো’ শুরু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) সকাল ১০টায় আইসিসিবির পাঁচ নম্বর হলে বাংলাদেশ ঔষুধ শিল্প সমিতি, জিপিই এক্সপো প্রাইভেট লিমিটেড ও এলিয়েন্ট লিমিটেডের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এক্সপোটির উদ্বোধন করা হয়।
তিন দিনব্যাপী এ প্রদর্শনীটি চলবে আগামী ৪ মার্চ পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এক্সপো খোলা থাকবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতি ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইউসুফ।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুল মুক্তাদির।
আয়োজক কমিটি থেকে জানানো হয়, এবারের মেলায় আমেরিকা, চীন, ইংল্যান্ড, জার্মানি, মালয়েশিয়া, ভারত, থাইল্যান্ড, ইতালি, জাপান, সুইজারল্যান্ড, তাইওয়ান, আয়ারল্যান্ড, বাংলাদেশসহ বিশ্বের মোট ২৭টি দেশের ৬৪৫টি কম্পানি অংশগ্রহণ করেছে।
এ আয়োজনে রয়েছে ফার্মা প্রসেসিং অ্যান্ড প্যাকেজিং, বায়োটেক ল্যাব ইকুইপমেন্ট, এপিআই ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যান্টস এবং মেশিনারিজ, ফার্মা ফর্মুলেশন্স এবং কন্ট্রাক্ট ম্যানুফ্যাকচারিং।
এতে করে দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তারা ঔষধ শিল্প সংক্রান্ত বিভিন্ন ধরনের আধুনিক প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ এবং কাঁচামাল সম্পর্কে বিশদভাবে জানতে পারবেন।
নাজমুল হাসান পাপন বলেন, ১৪তম ‘এশিয়া ফার্মা এক্সপোটি’ আমাদের দেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। কারণ ওষুধ তৈরির কাঁচামাল আমদানি এবং ওষুধ রপ্তানির ক্ষেত্রে বড় ধরনের একটি সুযোগ তৈরি করে দেবে এই এক্সপো। ’
তিনি বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে ওষুধের দাম এখনো অনেক কম। আমাদের ৯০ শতাংশ কাঁচামাল আমদানি করতে হয়। এখন বিশ্ববাজারে কাঁচামালের দামও বেড়েছে এবং সংকটও তৈরি হয়েছে। এর কারণে চাহিদামতো কাঁচামাল আমদানি করা যাচ্ছে না। যে কাঁচামাল আগে ৮৫ ডলারে কিনতে হতো, সেটা এখন ১১০ ডলারে কিনতে হচ্ছে। এসব কারণে ওষুধ উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশে তিন হাজারেরও বেশি ওষুধ রয়েছে, তার মধ্যে ১০-১৫টি ওষুধের দাম বাড়ানো হয়েছে। এখন কোম্পানিগুলোকে অনেক ওষুধ লস দিয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে। ’
পাপন বলেন, ‘বর্তমানে আমরা ৬৫টি দেশে ওষুধ রপ্তানি করছি। রপ্তানির জন্য বিভিন্ন কোম্পানি তাদের প্ল্যান তৈরি করছে। আশা করছি, আগামী তিন-চার বছরের মধ্যে ব্যাপকভাবে ওষুধ রপ্তানি বাড়বে।
এশিয়া ফার্মা এক্সপো’টি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক তৈরি ও নিজেদের পরিচিত বাড়াবে বলে মনে করেন মেলায় অংশগ্রহণ করা বাংলদেশি উদ্যোক্তারা।
এ বিষয়ে রিফাত অ্যালুমিনিয়াম অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেডের ম্যানেজার শেখ মোহাম্মদ কবিরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আমরা দেশীয় মার্কেটে প্রাইমারি ফার্মাসিটিক্যাল প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারিং করি। সে হিসেবে বাংলাদেশের ফার্মাসিটিক্যাল কোম্পানিগুলো আমাদের কাছ থেকে ওষুধের প্যাকেজিং নিয়ে থাকে। এক্সপোর মাধ্যমে এক ছাদের নিচে বাংলাদেশের সব ফার্মাসিটিক্যাল কোম্পানির মিলনমেলা হয়। অন্য সময় সবার ঘরে ঘরে আমাদের যেতে হত এখন হচ্ছে না। আর মেলার সব থেকে বড় উপকার হচ্ছে এটাই। মেলার প্রথম দিনই দেশের প্রায় অর্ধেকের বেশি ফার্মাসিটিক্যাল কোম্পানি এসেছে। আগামী ২ দিন লোক সংখ্যা আর বাড়বে এই আশাই করছি।
একটি বেসরকারি ফার্মাসিটিক্যাল কোম্পানি চাকরিরত আছেন কল্প রায়। তিনি মেলায় এসেছেন অন্যান্য ফার্মাসিটিক্যাল কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াতে।
কল্প রায় বাংলানিউজকে বলেন, এক্সপো থেকে যেহেতু বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ফার্মাসুটিক্যাল কোম্পানি আসে তাই আমরা এসেছি তাদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করতে। মেলার মাধ্যমে অনেকর ক্লাইন্টে সঙ্গে পরিচয় হয়েছে। প্রথম দিনে মেলা ভালোই জমে উঠেছে। বাকি দুইদিনও মেলায় আসবো। যারা ফার্মাসিটিক্যাল ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তাদের জন্য এই মেলা খুবই সুন্দর এবং কার্যকরী একটা মেলা।
এখন বাংলাদেশে বিশ্বমানের ওষুধ উৎপাদিত হচ্ছে এবং দেশের মোট অভ্যন্তরীণ চাহিদার ৯৮ শতাংশ পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে। একই সঙ্গে এখন বিশ্বের ১৫৩টি দেশে বাংলাদেশের উৎপাদিত মানসম্মত ওষুধ রপ্তানি হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৮ ঘণ্টা, মার্চ ০২, ২০২৩
ইএসএস/এএটি