ঢাকা: বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেছেন, নৈতিকতা ও সুশাসন ব্যাংকিংয়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ব্যাংক খাতে এর কিছু ব্যত্যয় হচ্ছে।
শনিবার (১১ মার্চ) সন্ধ্যায় মিরপুরের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) অডিটোরিয়ামে ২১তম নুরুল মতিন মেমোরিয়াল লেকচার ‘ইথিকস ইন ব্যাংকিং’ অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (আইবিএ) সাবেক পরিচালক প্রফেসর ড. এ কে এম সাইফুল মজিদ মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এতে আরও বক্তব্য দেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. মো. আখতারুজ্জামান।
গভর্নর বলেন, ব্যাংকিংয়ে নৈতিকতার চর্চা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে পরিচালনা পর্ষদ, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার ভূমিকা পুরো ব্যাংকের পারফরমেন্সের ওপর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় স্বাধীন-নিরপেক্ষ ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত নেওয়া ও তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে তা আদর্শ হিসেবে বিবেচনা করা যায়।
তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাতের যেসব আন্তর্জাতিক মানের চর্চাগুলোর আলোকে বাংলাদেশের ব্যাংক ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব ও কর্তব্য আলাদা করে দেওয়া হয়েছে। যাতে ব্যাংকিং খাতে করপোরেট গভর্নেন্সের চর্চা করা সম্ভব হয়।
মূল প্রবন্ধে প্রফেসর সাইফুল মজিদ বলেন, ব্যাংকিংয়ে নৈতিকতার চর্চা থাকলে ব্যাংকের সব অংশীজনদের স্বার্থ সংরক্ষিত হয়। বিশেষ করে গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষিত হয়। এমনকি ব্যাংকের মালিকদেরও স্বার্থ রক্ষা পাবে। ব্যাংকিং খাতের নৈতিকতা চর্চার কিছু সহজাত শক্তি ও সুবিধা রয়েছে।
তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাতের খারাপ ব্যবস্থাপনা এ খাতে অনৈতিকতার চর্চা বাড়িয়ে দিয়েছে। গত তিন দশকে ব্যাংকিং খাতের ব্যর্থতার অন্যতম একটি কারণ অনৈতিক চর্চা। এ কারণে ব্যাংকিং খাতের ব্যর্থতার অনেকগুলো ঘটনা ঘটেছে।
বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, বিআইবিএম প্রতিবছর এ এফ এম নুরুল মতিন স্মরণে মর্যাদাপূর্ণ স্মারক বক্তৃতার আয়োজন করে। এ বছর ২১তম স্মারক বক্তৃতা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ব্যাংকিং সেক্টরে প্রত্যেক বছর নৈতিকতার বিষয়ে নতুন বার্তা পেয়ে থাকে। এ বছর প্রফেসর ড. এ কে এম সাইফুল মজিদের বক্তৃতা ব্যাংকিং খাতে নৈতিকতা প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর, ডেপুটি গভর্নর, সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, শীর্ষ ব্যবস্থাপক, বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, গবেষক, বিআইবিএমের অনুষদ সদস্য, কর্মকর্তারা ২১তম নুরুল মতিন মেমোরিয়াল লেকচার অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
প্রসঙ্গত, এ এফ এম নুরুল মতিন ১৯২৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৫১ সালে তদানীন্তন স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের গবেষণা বিভাগে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। পরে ১৯৬৩ সালে তার চাকরি ওই ব্যাংকের অপারেশন বিভাগে স্থানান্তরিত হয়। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর থেকেই বাংলাদেশের ব্যাংকিং পরিকাঠামো নির্মাণে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার ১৯৭২ এবং বাংলাদেশ ব্যাংক ন্যাশনালাইজেশন অর্ডার ১৯৭২ প্রণয়নে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। সত্তর দশক ও এর পরে ব্যাংকিং খাতের উন্নতির জন্য নীতি নির্ধারণী বিষয়ে তার অবদান উচ্চ মহলে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়। তিনি ১৯৭৮ সালে ব্যাংকিং খাতে তার অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে এ পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন। ব্যাংকিং খাতে তার এ অসামান্য অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
ব্যাংকিং খাতে নৈতিকতা শীর্ষক এ মেমোরিয়াল লেকচার ১৯৯৮ সাল থেকে চালু করেছে বিআইবিএম।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৯ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০২৩
এসএমএকে/আরআইএস