ঢাকা: ফার্ম পর্যায়ে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকায় বিক্রির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে উৎপাদনকারী চার প্রতিষ্ঠান। এতে রমজানে ভোক্তা পর্যায়ে ২৬০ থেকে ২৭০ টাকা বিক্রি হওয়া ব্রয়লার মুরগির দামে ৪০ টাকা পর্যন্ত প্রভাব পড়তে পারে বলে জানিয়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে ব্রয়লার মুরগির অযৌক্তিক দাম বৃদ্ধি সংক্রান্ত শুনানি শেষে নতুন দামে বিক্রির প্রতিশ্রুতি দেয় প্রতিষ্ঠান চারটি। প্রতিষ্ঠান চারটি হলো- কাজী ফার্মস লিমিটেড, আফতাব বহুমুখী ফার্মস লিমিটেড, সিপি বাংলাদেশ ও প্যারাগন পোল্ট্রি অ্যান্ড হ্যাচারি লিমিটেড।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, রাজধানীর কাপ্তান বাজার ও সারাদেশে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, আজ ফার্ম পর্যায়ে ২২০ থেকে ২৩০ টাকায় প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে। সেটি হাত বদল হয়ে ভোক্তা পর্যায়ে কোথাও ২৬০ টাকা, কোথায় ২৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আরও পড়ুন: রোজার আগেই লেবু, বেগুন ও শসার দামে উত্তাপ
তিনি বলেন, মুরগি নিয়ে বাজারে যে অস্থিরতা চলছে, এতে ভুক্তভোগী ভোক্তারা। আমাদের কাছে মনে হয়েছে ঢাকার বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ৫০ থেকে ৬০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এজন্য চারটি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে মুরগির অযৌক্তিক দাম বৃদ্ধির কারণ ব্যাখ্যা করার জন্য ডাকা হয়েছে। তারা জানিয়েছেন মুরগির খাবারের দাম বেশি হওয়ায়, উৎপাদন খরচও বেশি।
তিনি বলেন, আগামীকাল থেকে রমজান মাস শুরু হচ্ছে। রমজানে সাধারণ মানুষের এত বেশি দাম দিয়ে মুরগি কেনা সম্ভব নয়। তাই, আমরা প্রতিষ্ঠান চারটিকে অনুরোধ করেছি, রমজান মাসে একটু কম লাভ করতে। তারা রাজি হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো এতদিন প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২২০ থেকে ২৩০ টাকায় বিক্রি করত। এখন তারা ১৯০ টাকায় বিক্রির কথা বলেছে। তার মানে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগিতে দাম কমছে ৪০ টাকা। এখন আগামী দুই-তিন দিন আমরা সারাদেশে মনিটরিং করব। দামে ৩০-৪০ টাকার একটি প্রভাব পড়বে (কমবে)। আমাদের যে সংস্থাগুলো আছে, তারা তা আরও ক্লোজলি মনিটরিং হবে। আশা করি, আজ থেকে মুরগির বাজারের অস্থিরতা দূর হবে।
এর আগে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সভাকক্ষে চার প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কাজী ফার্মের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী জাহিদুল হাসান বলেন, এখন মুরগির খাবারের দাম বেশি। তাই উৎপাদন খরচও বেশি। তারপরও আমরা রমজান মাসে ফার্ম পর্যায়ে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকায় বিক্রি করব।
তিনি আরও বলেন, রমজান মাসে এসে ব্রয়লার মুরগির সরবরাহের যে ঘাটতি তা আগে কখনো দেখিনি। এই ঘাটতির জন্য মুরগির দাম অতিরিক্ত বেড়ে গেছে। আমরা আশা করছি, খুব শিগগিরই উৎপাদন বেড়ে দাম কমে যাবে। বর্তমানে সবকিছুর দাম বেশি। তারপরও আমাদের যতটুক করার তা আমরা করব।
আরও পড়ুন: মাংসের দাম না কমলে আমদানি করা হবে: এফবিসিসিআই সভাপতি
এ সময় আফতাব বহুমুখী ফার্মস লিমিটেড, সিপি বাংলাদেশ ও প্যারাগণ পোল্ট্রি অ্যান্ড হ্যাচারি লিমিটেডের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ব্রয়লার মুরগির অযৌক্তিক দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা দিতে এই চার প্রতিষ্ঠানকে তলব করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
বুধবার (২২ মার্চ) রাতে অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ারের সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) দুপুর দেড়টায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে প্রয়োজনীয় তথ্যসহ ব্রয়লার মুরগির দাম দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা দিতে প্রতিষ্ঠান চারটির স্বত্বাধিকারী অথবা ব্যবস্থাপনা পরিচালক অথবা জেনারেল ম্যানেজারকে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, গত ৯ মার্চ পোল্ট্রি মুরগির উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ীদের সাথে মতবিনিময় সভা করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। সভায় ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন ব্যয় করপোরেট পর্যায়ে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা, প্রান্তিক খামারি পর্যায়ে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা এবং খুচরা পর্যায়ে ২০০ টাকার বেশি নয় বলে জানায় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, গত ৯ মার্চ অনুষ্ঠিত সভায় পোলট্রি মুরগি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ীরা যৌক্তিক দামে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি করবেন বলে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও বাজারে তা দেখা যায়নি। বরং আরও বেশি দামে বিক্রি হতে দেখা গেছে, যা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন- ২০০৯ এর ২১ (খ) ধারা অনুযায়ী অপরাধ।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৬ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০২৩
এসসি/আরএইচ