ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বেড়েছে মুরগির গিলা-কলিজা-পায়ের দাম

সুব্রত চন্দ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৯ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০২৩
বেড়েছে মুরগির গিলা-কলিজা-পায়ের দাম

ঢাকা: গত প্রায় দুই মাস ধরে অস্থিরতা বিরাজ করছে মুরগির বাজারে। কেজিতে প্রায় ১০০ টাকার বেশি বেড়েছে এর দাম।

তাইতো আগের তুলায় চাহিদা বেড়েছে মুরগির গিলা-কলিজা-পায়ের। শুধু চাহিদা বেড়েছে তাই নয়, বরং দুই মাসের ব্যবধানে কেজিতে ৫০-৭০ টাকা দাম বেড়েছে উচ্ছিষ্ট হিসেবে ফেলে দেওয়া মুরগির এ অঙ্গগুলোর।

শনিবার (২৫ মার্চ) রাজধানীর কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি গিলা-কলিজা বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৮০ টাকা। দুই মাস আগে যার দাম ছিল ১০০-১২০ টাকা। এছাড়া দুই মাস আগে ৭০-৮০ টাকা দরে বিক্রি হওয়া শুধু মুরগির পা এখন বিক্রি হচ্ছে ১৪০-১৫০ টাকা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এক সময় শুধু নিম্নবিত্ত ও খেটে খাওয়া মানুষরা প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে মুরগির এসব অঙ্গগুলো কিনতেন। কিন্তু গত কয়েকমাস ধরে মুরগির আকাশ ছোঁয়া দামের কারণে এখন মধ্যম আয়ের মানুষও মুরগির গিলা-কলিজা-পা কিনতে ভিড় জমাচ্ছেন। আর চাহিদা বাড়ায় সুযোগ বুঝে এসব পণ্যের দামও বাড়িয়ে দিচ্ছেন বিক্রেতারা।

কারওয়ান বাজারে মুরগির গিলা-কলিজা-পা বিক্রি করা কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মূলত হোটেল রেস্টুরেন্টে পাঠানো মুরগি থেকেই এসব গিলা-কলিজা ও পা আসে। কারণ হোটেল ও রেস্টুরেন্টে এসব অঙ্গ রান্না করা হয় না। ফলে মুরগি কেটে হোটেল ও রেস্টুরেন্টে পাঠানোর সময় এসব গিলা কলিজা কিনে রাখেন মুরগি বিক্রেতারা। পরে বেশ কয়েক কেজি জমা হলে সেগুলো তারা খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে দেন। সেসব খুচরা বিক্রেতারাই কারওয়ান বাজার হাঁস-মুরগির বাজারের সামনে বসে এসব গিল-কলিজা-পা বিক্রি করেন।

সুমন নামের এক বিক্রেতা বলেন, আগের তুলনায় চাহিদা বেড়েছে গিলা-কলিজার-পায়ের। দামও কিছুটা বেড়েছে। তবে সেটা মুরগির দাম বাড়ার কারণে। মুরগি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বেশি দামে কিনে আনার কারণে আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হয়।

পাইকারী বিক্রেতাদের দোষারোপ করে সুজন নামের আরেক বিক্রেতা বলেন, আগে ৭০-৮০ টাকায় প্রতি কেজি পা বিক্রি করতে পারতাম। কিন্তু এখন কিনেই আনতে হয় ১০০-১২০ টাকা করে। তাহলে ১৫০ টাকাই তো বিক্রি করতে হবে। গিলা-কলিজার দাম তো আরো বেশি। আগে ১০০-১২০ টাকা কেজি বিক্রি করা গিলা কলিজা এখন বিক্রি করতে হয় ১৫০-১৭০ টাকা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কখনো কখনো চাহিদা বেশি থাকলে ২০০ টাকা কেজি দরেও বিক্রি হয়েছে মুরগির গিলা-কলিজা।

কারওয়ান বাজার হাঁস-মুরগির বাজারের পাইকারী বিক্রেতা মো. জীবন বলেন, আগে ৬০-৭০ টাকায় আমরা গিলা কলিজা বিক্রি করতাম৷ কিন্তু এখন মুরগির দাম বাড়ায় আমাদের ৯০-১০০ টাকায় বিক্রি করতে হয়৷

আলী আকবর নামের আরেক বিক্রেতা বলেন, আগে আমরা হোটেল ব্যবসায়ীদের কাছ থেকো ৬ টাকা দরে প্রতি মুরগির গিলা, কলিজা ও পা কিনে রাখতাম। কিন্তু এখন ১০ টাকা দিয়েও কিনতে পারি না। হোটেল ও রেস্টুরেন্টগুলো বিক্রি করতে চায় না। তাই আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হয়।

এদিকে দাম যে কারণেই বাড়ুক বা যারাই বাড়াক ভুগতে হচ্ছে শুধু নিম্ন আয়ের মানুষদেরই। তারপরও প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে মুরগির গিলা-কলিজার-পা বিক্রির দোকানে ছুটছে নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা।

কারওয়ান বাজারে মুরগির গিলা-কলিজা কিনতে আসা শামসুদ্দিন নামের এক রিক্সা চালক বলেন, দামের কারণে মুরগি তো কিনতেই পারি না। গিলা-কলিজা কিনে একটু মাংসের স্বাদ নিতাম। এখন সেটাও বন্ধ হওয়ার জোগার। আগে যে দামে মুরগি পাওয়া যেতো, এখন সেই দামে গিলা-কলিজাও পাওয়া যাচ্ছে না। কয়দিন পর হয়তো আমাদের না খেয়ে মরতে হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী বলেন, আমি আগে সোনালি কক মুরগি কিনতাম৷ কিন্তু এখন মুরগির যে পরিমাণ দাম বাড়ছে তাতে ব্রয়লারই কিনতে পারি না। তাই বাধ্য হয়ে মুরগির গিলা-কলিজা-পা কিনতে আসছি। আগে লোক-লজ্জার ভয় পেতাম। কিন্তু জিনিসপত্রের যে দাম, এখন আর লোক লজ্জার ভয় করে কি হবে? সবকিছুর দাম বাড়লেও বেতন তো আর বাড়েনি।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩৯ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০২৩
এসসি/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।