ঢাকা: দেশে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ উৎপাদন হওয়ায় ভারত থেকে আমদানি বন্ধ রেখেছে সরকার। চাহিদার পুরোটা মেটানো হচ্ছে দেশি পেঁয়াজ দিয়ে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি পুনরায় চালু না হওয়া পর্যন্ত পেঁয়াজের দাম কমবে না।
পাইকারি বাজারে, প্রতি পাল্লা পেঁয়াজ (৫ কেজি) বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকা করে। ঈদের আগেও প্রতি পাল্লা পেঁয়াজের দাম ছিল ২০০ টাকা করে। সরকারি হিসেবে বর্তমানে বাজারে খুচরা প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫৫ টাকায়। এক মাস আগেও এর দাম ছিল ৩৫-৪৫ টাকা। অর্থাৎ এক মাস ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৩১ দশমিক ২৫ শতাংশ।
পাশাপাশি এ বছর আলুরও ভালো ফলন হয়েছে। কিন্তু তারপরও আলু নিয়ে কারসাজি করছেন ব্যবসায়ীরা। ভরা মৌসুমেও বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে পণ্যটি। এ সময়ে আলুর কেজি ১৫ টাকা হওয়ার কথা, কিন্তু এখন আলু পাইকারি পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ২৫-২৮ টাকায়, যা খুচরা পর্যায়ে আরও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
পাইকারি পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা বলছেন, বড় ব্যবসায়ীরা (সরাসরি কৃষক থেকে কেনেন) বাজারে আলু ছাড়ছে না। বেশি লাভের আশায় কোল্ড স্টোরেজে প্রচুর পরিমাণে আলু মজুদ করছে। যে কারণে মৌসুমেও আলুর দাম হঠাৎ বৃদ্ধি পেয়েছে।
সরকারি হিসেবে, বর্তমানে বাজারে খুচরা পর্যায়ে আলুর দাম কেজি প্রতি ৩২-৩৫ টাকা, যা এক মাস আগেও ছিল ২২-২৫ টাকায়। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে আলুর দাম বেড়েছে ৪২ দশমিক ৫৫ শতাংশ।
এদিকে অতি প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্য আলু এবং পেঁয়াজের বাম্পার ফলনেও পণ্য দুইটির অতিরিক্ত দামের কারণে ক্রেতারা এক প্রকার বিরক্ত। আর কারণ ছাড়া দাম বাড়ানোর ফলে ব্যবসায়ীদের সততা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সাধারণ ক্রেতারা।
শনিবার (৬ মে) রাজধানীর পাইকারি বাজার হিসেবে পরিচিত কারওয়ান বাজারে ঘুরে দাম বাড়ার এমন চিত্র দেখা গেছে।
সরকারি তথ্যমতে, আজকের বাজারে মোটা চাল, আমদানি পেঁয়াজ, দেশি রশুন, দেশি ও আমদানি করা আদা, জিরা, চিনি, ডিমের মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে মাঝামারি সাইজের চাল, আমদানি করা রশুন, দেশি হলুদ, ব্রয়লার মুরগির মূল্য হ্রাস পেয়েছে। অন্যান্য পণ্যের মূল্য অপরিবর্তিত রয়েছে।
কারওয়ান বাজারের পাইকারি পেঁয়াজ বিক্রেতা ইউসুফ বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমানে আমরা পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৫৫ থেকে ৫৬ টাকায় বিক্রি করছি। রোজার ঈদের আগেও ৪০ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ বিক্রি করেছি। ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ বাজারে না আসা পর্যন্ত পেঁয়াজের দাম আরও বাড়বে। এমনকি সামনে পেঁয়াজের দাম ৬০ টাকা কেজি হতে পারে। তবে ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ বাজারে এলে পেঁয়াজের দাম কমে যাবে।
তিনি বলেন, বস্তা প্রতি পেঁয়াজের দাম পড়ে ৪ হাজার থেকে ৪ হাজার ৪০০ টাকা পর্যন্ত। প্রতি বস্তায় ৮০ কেজির মতো পেঁয়াজ থাকে। গাড়ি ভাড়া বেশি রাখার কারণেও পেঁয়াজের দাম বেশি। প্রতি বস্তায় গাড়ি ভাড়া দিতে হয় ১১০ টাকা করে। বস্তাপ্রতি লেবার খরচ দিতে হয় ২০ টাকা এবং আড়তদারি দিতে হয় ৬০ টাকা করে। আজকে ২১ বস্তা পেঁয়াজ আনতে গাড়ি ভাড়া দিতে হয়েছে ২৩০০ টাকা।
কারওয়ান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে পেঁয়াজ বিক্রি করা আড়তদার খলিলুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, বাজারে এখন যে সকল পেঁয়াজ আসছে তার বেশিরভাগই ফরিদপুর থেকে আসা। পাশাপাশি পাবনা এবং রাজশাহী থেকেও পেঁয়াজ আসছে। আমরা যেসব জায়গা থেকে পেঁয়াজ আনি তাদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, গেল বছর যে পরিমাণ ফলন হয়েছে সে তুলনায় এ বছর নাকি পেঁয়াজের ফলন কিছুটা কম।
আলুর আড়তদার জসিম উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমানে মুন্সিগঞ্জের আলু প্রতি কেজি বিক্রি করছি ২৫ থেকে ২৬ টাকায়। বগুড়ার আলু বিক্রি করছি ২৭ টাকা কেজি। আর রাজশাহীর আলু বিক্রি করছে ২৮ টাকা কেজি। আলুর দাম সামনে আরও বাড়বে, কমার কোনো সম্ভাবনা নাই। সামনে পাইকারি পর্যায়ে আলুর কেজি ৩০ টাকার উপরে যাবে।
আলুর দাম বাড়ার কারণ হিসেবে এই আড়তদার বলছেন, অনেক বড় ব্যবসায়ীরা প্রচুর পরিমাণে আলু কোল্ড স্টোরেজে মজুদ করে রাখছেন। তারা বাজারে আলু ছাড়ছেন না, এ কারণে আলুর দাম হঠাৎ বৃদ্ধি পেয়েছে।
মসলার পাইকারি বাজার
পবিত্র ঈদুল আজহার বাকি প্রায় দুই মাস। এর মধ্যেই শুরু হয়ে গেছে মসলার দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া। ইতোমধ্যে খুচরা বাজারে আমদানি করা আদার দাম কেজি প্রতি ৩২০ টাকা হয়েছে। সপ্তাহ খানেক আগেও আদা বিক্রি হতো ২০০-২৫০ টাকা কেজিতে। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, সামনে কিছু কিছু মসলার দাম আরও বাড়বে!
মসলার পাইকারি বাজার ঘুরে জানা গেছে, চায়না আদা বিক্রি হচ্ছে ২৯০ টাকা কেজিতে। বার্মা আদা প্রতি কেজি ২০০ টাকায়। চায়না রসুন প্রতি কেজি ১৩০ টাকায়। দেশি শুকনা মরিচ প্রতি কেজি ৩৫০ টাকা। ইন্ডিয়ান শুকনা মরিচ প্রতি কেজি ৪১০ টাকায়। ভালো মানের কাঁচা হলুদ বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকায়। ধনিয়া প্রতি কেজি ২২০ টাকায়। প্রতিকেজি জিরা ৭৫০ টাকায়। এলাচের কেজি ১ হাজার ৮০০ টাকা। লং কেজি প্রতি ১ হাজার ৫০০ টাকা। দারুচিনি কেজি প্রতি ৪৫০ টাকায়। তেজপাতা ১২০ টাকা কেজি।
কারওয়ান বাজারের পাইকারি মসলা বিক্রেতা আসাদ শেখ বাংলানিউজকে বলেন, বাজারে বর্তমানে আদা, রসুন এবং জিরার দাম বেড়েছে। বাকি সব মসলা আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। রসুনের দাম আগের থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। তবে জিরার দাম পাইকারি পর্যায়েই কেজিতে ৫০ টাকার বেশি বেড়েছে।
সবজির পাইকারি বাজার
সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পাইকারি পর্যায়ে প্রতিকেজি করলা বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকায়। ভেন্ডি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। পটল প্রতি কেজি ৩৫-৪০ টাকা। টমেটো প্রতি কেজি ৩০ টাকা। চিচিঙ্গা প্রতি কেজি ৩৫-৪০ টাকা। আকার ভেদে প্রতি পিস লাউ বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা পর্যন্ত। জালি কুমড়া আকার ভেদে বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৬০ টাকা পর্যন্ত। আকার ভেদে মিষ্টি কুমড়া বিক্রি হচ্ছে ৭০-৯০ টাকা পর্যন্ত। লেবু প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে ২০-৩০ টাকায়।
সবজি বিক্রেতা ফোরকান আহমেদ বলেন, ঈদের পর বাজারে সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে। তবে পাইকারি পর্যায়ে করলার দাম কেজিতে ১৫-২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। খুচরা বাজারে যা আরও বেশি। বর্তমানে বাজারে সবজির গাড়ি কম আসছে। পাশাপাশি লেবার খরচও আগের থেকে অনেক বেড়ে গেছে। যে কারণে বাজারে সবজির দাম বাড়তি।
আমিষের বাজার
সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কমেছে কেজিতে ২০ টাকা। প্রতিকেজি ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকায়। যা দুই দিন আগেওল ছিল ২৪০ টাকা। লাল মুরগি প্রতি কেজি ৩৫০ টাকা, বড় সাইজের সোনালি এবং কক মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০-৩৬০ টাকায়। দেশি পাতিহাঁস প্রতি পিস ৭০০-৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গরুর মাংস হাড়সহ ৭৩০-৭৫০, খাসির মাংস ১ হাজার টাকা থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা পর্যন্ত। ছাগলের মাংস ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, চার কেজির বা তার উপরের রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ টাকা কেজিতে। কাতল মাছ প্রতি কেজি ৩৫০ থেকে ৩৮০ টাকা পর্যন্ত। কাচকি মাছ প্রতি কেজি ৪০০ টাকা। গুলশা মাছ প্রতি কেজি ৬০০ টাকা। টাটকিনি মাছ প্রতি কেজি ২৩০ টাকা এবং নলা মাছ কেজিপ্রতি ২২০ টাকা। সামুদ্রিক চাপিলা মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১১২ ঘণ্টা, মে ০৬, ২০২৩
ইএসএস/এমজেএফ