ঢাকা: বাজারে পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিক। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পেঁয়াজ আমদানি হবে কি না, সে বিষয়ে আগামী দুয়েকদিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক।
তিনি বলেছেন, স্থানীয়ভাবে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে দ্রুত ভারত থেকে আমদানি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ৪৫ টাকার বেশি পেঁয়াজের দাম হওয়া উচিত না। আমদানি করা হলে দাম ৪৫ টাকার নিচে চলে আসবে।
রোববার (২১ মে) সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, সবকিছুর একটি ধারাবাহিকতা থাকে। কিন্তু গত এক সপ্তাহে পেঁয়াজের দামে সে ধারাবাহিকতা রাখা যায়নি। সাধারণত বাজার সাপ্লাই এবং ডিমান্ডের ওপর দাম নির্ভর করে। গত বছর পর্যাপ্ত পেঁয়াজ থাকার পরও কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর কারণে গুদামে অনেক পেঁয়াজ পচে গেছে।
বাংলাদেশ দানাদার খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের মোট ভূখণ্ডের ৬০ ভাগ জমি আবাদ করা হয়। আবার একই জমিতে একাধিক ফসল হচ্ছে। দেশে প্রতিবছর প্রায় ২০ থেকে ২৪ লাখ জনসংখ্যা যোগ হচ্ছে। আমরা দানাদার খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ থাকলেও ক্রমবর্ধমান এই জনসংখ্যার কারণেই বাজারে নিত্যপণ্যের দাম কিছুটা বেশি।
তিনি বলেন, পেঁয়াজের দামের বিষয়টি মনিটরিং করছি। আমরা আমাদের কর্মকর্তাদের মাঠ পর্যায়ে পাঠিয়েছি। তারা পর্যবেক্ষণ করে দেখেছেন যে, দাম বাড়বে এমন আশায় তারা অনেকেই পেঁয়াজ ঘরে রেখে দিচ্ছেন।
নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে সবার মধ্যে অস্থিরতা ও আতঙ্ক আছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এ অস্থিরতা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, সে বিষয়ে সরকারের বড় দায়িত্ব রয়েছে। গত কিছুদিন ধরে পেঁয়াজের দাম নিয়ে অস্থিরতা যাচ্ছে। হঠাৎ করে দাম বেড়ে, আবার কিছুটা কমে যায়, আবার বাড়ে। দু-তিনদিনের গ্যাপে বাজার ওঠানামা করে। এটা কেন হবে, সবকিছুর ধারাবাহিকতা থাকে। গত ৪/৫ দিন আমরা আরও কাছ থেকে বাজার বোঝার চেষ্টা করেছি। পেঁয়াজের কেজি ৮০ টাকা কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়, আমরা এটা মেনে নিই না।
মন্ত্রী বলেন, জানি মধ্যম আয়ের, সীমিত আয়ের সব মানুষেরই কষ্ট হচ্ছে। ৮০ টাকা কেজি তো পেঁয়াজ হতে পারে না। নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে...আমরা শেষ পর্যন্ত চাষির স্বার্থটা দেখতে চাচ্ছি। এ বিষয়ে আমরা উচ্চ পর্যায়ে, নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে আলোচনা করেছি। আমরা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। ইনশাআল্লাহ দুই-একদিনের মধ্যে আপনারা সিদ্ধান্ত পাবেন যে, আমরা বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করব কি না। গতকাল পেঁয়াজের দাম মণে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কমেছে। যেহেতু কমার লক্ষণ আমরা আরও দু-একদিন দেখব।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, আমরা মাঠ থেকে তথ্য পাচ্ছি যথেষ্ট পেঁয়াজ আছে। তাহলে দাম কেন কমছে না, এটা তো হওয়ার কথা না। দাম যদি রিজনেবল অবস্থায় রাখা না যায়, তাহলে আমাদের আমদানিতে যেতে হবে। তবে দাম কোনক্রমেই ৮০ টাকা থাকবে না। আমরা চেষ্টা করছি, এ সিন্ডিকেট বা যারা এটা নিয়ন্ত্রণ করছে, তাদের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে আসা যায় কি না।
ভারতে পেঁয়াজের দাম কম জানিয়ে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সেখানে থেকে আমদানি করে আমাদের বাজারকে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আনতে হবে। গত বছর আমাদের পেঁয়াজের উৎপাদন ভালো হয়েছিল, মজুতও ভালো ছিল। অনেক পেঁয়াজ পচে গিয়েছিল। এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়েছে, তাই উৎপাদন কিছুটা কম হয়েছে। গত বছরের চেয়ে এবার ২ লাখ টনের মতো পেঁয়াজের উৎপাদন কমেছে।
পেঁয়াজের দাম কত হওয়া উচিত বলে মনে করেন- এমন প্রশ্নেন জবাবে কৃষিমন্ত্রী বলেন, দামটা ৪৫ টাকার বেশি হওয়ার উচিত নয়। আমদানি করলে দাম আরও কমে যাবে। ভারতে এত পেঁয়াজ হয়েছে। ওদের উচ্চ পর্যায় থেকে আমাদের বারবার অনুরোধ করছে। চাষিরা আন্দোলন করছে, বাংলাদেশ পেঁয়াজ নেয় না। পেঁয়াজের দাম কমে যাবে।
কারসাজি করে পেঁয়াজের দাম বাড়ানো সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ভেতরে ভেতরে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২৫৬ ঘণ্টা, মে ২১, ২০২৩
জিসিজি/এমএইচএস