ফরিদপুর: ফরিদপুরে হঠাৎ কমতে শুরু করেছে পেঁয়াজের দাম।
রোববার (২১ মে) জেলা-উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে প্রতি মণ পেঁয়াজ প্রকারভেদে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা কম দরে বিক্রি করতে দেখা যায়।
তিন-চার দিন আগেও যে পেঁয়াজ মণ প্রতি ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে তা এখন ২ হাজার ১০০ থেকে ২ হাজার ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
দাম না কমলে ভারত থেকে আমদানি করা হবে। শুক্রবার রংপুরে বাণিজ্যমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পর ফরিদপুরে পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
দেশের বাজারে ভারতীয় পেয়াজ আমদানি বন্ধ থাকায় ফরিদপুরের পেঁয়াজের হাট-বাজারগুলোতে কয়েক দফায় বেড়ে যায় পেঁয়াজের দাম।
সরেজমিনে বিভিন্ন হাটে-বাজার ঘুরে দেখা গেছে,পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে দেশি পেঁয়াজের। দুই থেকে তিন দিনের ব্যবধানে পাইকারি ও খুচরা বাজারে হঠাৎ দাম কমেছে পেঁয়াজের।
তবে আমদানির আগেই হঠাৎ এমন দরপতনে হতাশ হয়েছেন চাষিরা। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই সময় পেঁয়াজের ভালো দাম পেয়ে স্বস্তি ফিরে পেয়েছিলেন তারা।
অন্যদিকে পেঁয়াজের দাম কমায় খুশি ভোক্তারা। তবে প্রতিমণ পেঁয়াজ গড়ে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৩০০ টাকা দরে অর্থাৎ বর্তমান বাজার মূল্য বজায় থাকলে সবার জন্যই ভালো- এমন দাবি চাষি, ভোক্তা ও ব্যবসায়ীদের।
ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলা সদরে প্রতি শনি ও মঙ্গলবার হাট বসে। হাটে পাইকারি দরে বিক্রি হয় পেঁয়াজ। পেঁয়াজের রাজধানী খ্যাত নগরকান্দা ও সালথা উপজেলায় উৎপাদিত পেঁয়াজ স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের চাহিদা মেটায়। এ হাটে বর্তমানে প্রতি মণ পেঁয়াজ ২ হাজার ১০০ থেকে ২ হাজার ৩০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। যা গেল তিন দিনের তুলনায় ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা কম।
এ বিষয়ে কৃষক সলেমান কাজী বলেন, দীর্ঘদিন পর ভালো দাম পেয়ে খুশি আমরা। পেঁয়াজ আমদানি বন্ধসহ বাজারদর ঠিক থাকলে আগামীতে পেঁয়াজচাষে চাষিদের আগ্রহ বাড়বে। এবার প্রায় ১৪০ মণ পেঁয়াজ পেয়েছিলাম। দাম বাড়ায় ৪০ মণের মতো বিক্রি করেছি। বাকিগুলো রেখে দিয়েছি। এ রকম দাম থাকলে চাষিদের জন্য ভালো। ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের জন্য সহনীয় হয়।
এ ব্যাপারে সালথার পেঁয়াজ চাষি রুস্তম আলী বলেন, গত দুই তিন দিনে ভালো দাম পেয়ে কয়েক হাট মিলে দেড়শো মণ বিক্রি করে দিয়েছি। আজকের হাটে ৩০ মণ বিক্রির জন্য এনেছি। কিন্ত মণ প্রতি প্রায় হাজার টাকা কমে গেছে। তবে এখনও যে দাম আছে তা মুটামুটি। আরও দাম কমলে লোকসান হবে কৃষকদের।
যে কারণে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রাখার দাবি জানান তিনি।
বোয়ালমারী উপজেলার দাদপুর গ্রামের কৃষক শরিফুল ইসলাম সাতৈর বাজারে এসেছেন পেঁয়াজ বিক্রি করতে। তিনি বলেন, দাম বেশি দেখে পাঁচ মণ পেঁয়াজ নিয়ে আসছি। গত হাটে যে পেঁয়াজ ৩ হাজার ২০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছে, সেখানে একই পেঁয়াজ আজ ২ হাজার ৩০০ টাকা দাম বলছে। কী করব ভাবছি। যেহেতু গাড়ি ভাড়া করে হাটে পেঁয়াজ নিয়ে আসছি; তাই বিক্রি তো করতেই হবে।
মধুখালী উপজেলা সদর বাজারের বড় পেঁয়াজ ব্যবসায়ী ও আড়তের মালিক মো. আলম বলেন, স্থানীয় বিভিন্ন হাটে-বাজার থেকে পেঁয়াজ কিনে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করি। হঠাৎ করে কয়েকগুণ দাম বৃদ্ধির পর আবার হঠাৎ দরপতন হয়েছে। মোকামে চাহিদা কম। আমদানির খবর শুনেই মূলত পেঁয়াজের দাম হঠাৎ করে প্রতি মণে হাজার টাকা কমেছে। শনিবার ভালো মানের পেঁয়াজ ২ হাজার ১০০ থেকে ২ হাজার ৩০০ টাকা মণ দরে কিনেছি। তবে আমার ধারণা আমদানির কথা শুনে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার পাইকাররা কেনা কমিয়ে দিয়েছে। যার কারনণে বাজারের এই অবস্থা।
তিনি আরও বলেন, ২ হাজার ১০০ থেকে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৩০০ টাকা মণ প্রতি পেঁয়াজের দাম সীমাবদ্ধ থাকলে ,ভোক্তা, ব্যবসায়ী ও কৃষকদের জন্য সুবিধা। তাছাড়া দেশের কৃষকদের ঘরে যথেষ্ট পেঁয়াজ মজুদ রয়েছে। সেক্ষেত্রে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রাখার ভালো।
এ ব্যাপারে বোয়ালমারীর সাতৈর বাজার বণিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ব্যবসায়ী মো. আতিয়ার রহমান বলেন, এই মুহূর্তে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি করা হলে খুচরা বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলে দাবি পাইকারদের। আবার দফায় দফায় পেঁয়াজের দাম ভিত্তিতে হতাশ ভোক্তারা। পাইকার ব্যবসায়ীদের মতে, বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ ঢুকলে দাম একটু কমবে। হঠাৎ দরপতনে এখন যেমন বর্তমান বাজারে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ কম।
এ ব্যাপারে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিপ্তর ফরিদপুরের সহকারী পরিচালক মো.সোহেল শেখ বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে নিয়মিত বাজার পরিদর্শন করা হচ্ছে। অবৈধ ব্যাবসায়ী,অধিক মুনাফালোভী ও বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বাজার পরিস্থিতির বিষয়েও আমাদের সজাগ দৃষ্টি রয়েছে।
এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. জিয়াউল হক বলেন, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফরিদপুরে পেঁয়াজের উৎপাদন ভালো হয়েছে। ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে জেলায় মোট ৪০ হাজার ৭৯ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়। ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে মোট ৪০ হাজার ৯৭ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করা হয়। আর চলতি মৌসুমে ফরিদপুরে ৩৫ হাজার ৮৭৬ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। এবার ফলনও বাম্পার হয়েছে। তবে দামের বিষয়টিতে আমাদের তো কোনো হাত নেই। আমরা ভালো ফলনে এবং বিভিন্ন বিষয়ে কৃষকদের পরামর্শ ও সহযোগিতা করে থাকি।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২০ ঘণ্টা, মে ২১, ২০২৩
এসএএইচ