ঢাকা, বুধবার, ২৮ কার্তিক ১৪৩১, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

আমদানি বন্ধ থাকায় আদা ও চিনির সংকট: সচিব

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৩ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০২৩
আমদানি বন্ধ থাকায় আদা ও চিনির সংকট: সচিব

ঢাকা: ভারত থেকে চিনি ও চীন থেকে আদা আমদানি বন্ধ থাকায় দেশের বাজারে এসব পণ্যের সংকট রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ। আন্তর্জাতিক বাজার যখন বেশি অস্থিতিশীল থাকে তখন দেশের বাজারে দাম স্থিতিশীল রাখা খুব কঠিন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

রোববার (১১ জুন) সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রাণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের ৭ম সভা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন বাণিজ্যসচিব।

তিনি বলেন, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ঈদ কেন্দ্রিক নিত্যপণ্যের সরবরাহ পরিস্থিতি ও মূল্য পরিস্থিতি পর্যালোচনা ছিল এ দিনের বৈঠকের মূল আলোচ্য বিষয়। ঈদকে সামনে রেখে পেঁয়াজ, আদা, রসুন, ভোজ্যতেল বেশি প্রয়োজন হবে। ঈদে যেসব পণ্যের চাহিদা বাড়ে সেগুলোর দাম স্থিতিশীল রাখা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। অন্যান্য পণ্যের দামও স্বাভাবিক রাখার বিষয়ে কথা হয়েছে। আজকে তেলের দাম কমিয়ে দেওয়া হলো। লবণের উৎপাদন ও সরবরাহ ভালো রয়েছে।

এছাড়া চীনে আদা উৎপাদন কম হওয়ায় তারা রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। চীন থেকে আমদানি বন্ধ থাকায় দেশে আদার সংকট আছে। সমাধানের চেষ্টা চলছে। মিয়ানমার থেকে এখন আদা আমদানি হচ্ছে। দেশে গত এক বছরে গম আমদানি ২৪ লাখ টন এবং চিনি আমদানি ৭২ হাজার টন কম হয়েছে বলে জানান বাণিজ্যসচিব।

সরকার দাম নির্ধারণ করলেও ব্যবসায়ীরা তা অমান্য করছে, এ বিয়য়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বাণিজ্যসচিব বলেন, চিনির প্রধান উৎস ব্রাজিল ও ভারত। এই মুহূর্তে ভারত থেকে চিনি আমদানি বন্ধ। আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির ফলে টিসিবির আন্তর্জাতিক টেন্ডারের চিনিও দেশে আনা সম্ভব হয়নি। আন্তর্জাতিকভাবে চিনির একটা সংকট যাচ্ছে। চিনির দাম প্রতিটন ৪৫০ ডলার থেকে বেড়ে গিয়ে প্রায় ৭০০ ডলারে ঠেকেছে।  

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম যখন বেশি অস্থিতিশীল থাকে তখন দেশের বাজারে দাম স্থিতিশীল করাটা খুবই কঠিন। তারপরও মাসখানেক আগে আমরা যে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম সেটাও রক্ষা করা যায়নি। তখন আন্তর্জাতিক বাজারে দাম আরও বেড়ে যাচ্ছিল। সে কারণে আমাদের মিলাররাও দাম বাস্তবায়ন করতে পারেন নাই। সবার মধ্যে একটা আশঙ্কা ছিল যে, আন্তর্জাতিক বাজারে দামটা আরও বেড়ে যায় কিনা।

নতুন প্রস্তাব প্রসঙ্গে তপন কান্তি ঘোষ বলেন, চিনি আমদানি কমেছে ৭২ হাজার টন। আমদানি কম হওয়ায় দামের প্রভাব পড়েছে বাজারে। দেশের চিনি চাহিদার প্রায় পুরোটাই আমদানি নির্ভর। এজন্য আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সমন্বয় করে দাম নির্ধারণ করতে হয়। বেশ কিছুদিন ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম স্থির রয়েছে। এখন আমরা বিভিন্ন ধরনের প্যারামিটার বিশ্লেষণ করে দেখবো যে, আসলে পরিস্থিতি কী?

প্রসঙ্গত, সরকার একমাস আগে চিনির দাম প্রতিকেজি ১২০ টাকা থেকে ১২৫ টাকার মধ্যে নির্ধারণ করে দিলেও ব্যবসায়ীরা তা মেনে চলেননি। উল্টো এখন নতুন করে প্রতিকেজি খোলা চিনি ১৪০ টাকা এবং প্যাকেট চিনি ১৫০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছেন। আর বর্তমান বাজারে প্রতিকেজি খোলা চিনি ১৩৫ টাকা এবং প্যাকেট চিনি ১৪০ টাকা থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির পেছনে সিন্ডিকেট কাজ করেছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তপন কান্তি ঘোষ বলেন, সিন্ডিকেটের বিষয়টি আমি জানি না। তবে যখন আমদানি বন্ধ থাকে তখন হয়তো ব্যবসায়ীরা মনে করতে পারেন যে, চাহিদা বেশি। আমরা দাম বাড়িয়ে দেব। ব্যবসায়ীরা সেই সুযোগটা নেওয়ার চেষ্টা করে।

এখন পর্যন্ত পাঁচ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে জানিয়ে সচিব বলেন, ইতোমধ্যে ৩০ হাজার টন দেশে এসেছে। এরমধ্যে পেঁয়াজের দাম কমে প্রতিকেজি ৬০/৭০ টাকায় নেমে এসেছে। অনুমোদন প্রাপ্ত বাকি পেঁয়াজ দেশে আসলে দাম আরও কমবে।

দাম বৃদ্ধির ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর করা হলেও দাম কমার ঘোষণা খুব ধীরে ধীরে বাস্তবায়ন হয়। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির খবরেই দেশের বাজারে দাম বেড়ে যায়। আবার দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমার পরও দেশের বাজারে তার প্রভাব পড়ে খুব ধীর গতিতে। ব্যবসায়ীদের এমন প্রবণতা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যসচিব বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলেই সঙ্গে সঙ্গে দেশে সেই পণ্যের দাম কমানো সম্ভব হয় না, কারণ আমদানি পণ্যের ক্ষেত্রে ডলারের দাম একটা বড় ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে। এছাড়া, শুল্কহার, অভ্যন্তরীণ পরিবহন ব্যয় মূল্য নির্ধারণে প্রতিফলন ঘটে।

আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমার দুই মাসেও দেশের বাজারে কেন দাম কমে না এমন এক প্রশ্নের উত্তরে বাণিজ্যসচিব বলেন, সহজভাবে ব্যাখ্যা করলে হবে না। আমদানি পণ্যের ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রার এক্সচেঞ্জ রেট, পণ্যের ওপর শুল্ক বেড়ে যায় কেনা মূল্য বাড়ার কারণে। এর সাথে জ্বালানির দাম বৃদ্ধির ফলে অভ্যন্তরীণ পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাওয়া। সবকিছু বিবেচনায় নিয়েই দামটা পরিবর্তন হয়। এজন্য যদি কেউ বলে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম ২০ শতাংশ কমেছে, দেশের বাজারে কেন ২০ শতাংশ কমলো না? তাহলে কিন্তু হবে না। সবকিছু ক্যালকুলেশন করেই বলা যাবে যে, দাম আসলে কত টাকায় সমন্বয় করা উচিত।

বাণিজ্য সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ/দপ্তর/অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং এফবিসিসিআইসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৬ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০২৩
জিসিজি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।