ঢাকা: ভারত থেকে আমদানি শুরুর পর কাঁচা মরিচের দাম কিছুটা কমলেও এখনো কাটেনি অস্থিরতা। এর মধ্যে নতুন করে আবার চড়তে শুরু করেছে পেঁয়াজের দাম।
বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) রাজধানীর কারওয়ান বাজার ও মধুবাগ কাঁচা বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।
কারওয়ান বাজারে বর্তমানে আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজের পাল্লা (৫ কেজি) পাইকারিতে ২১০ থেকে ২২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কেজিতে যা পড়ছে ৪২ থেকে ৪৫ টাকা। অথচ ১৫ দিন আগেও এই বাজারে প্রতি কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা। এছাড়া বর্তমানে মানভেদে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৬ টাকা। যা গত ১৫ দিন আগে ছিল ৬৮ থেকে ৭৪ টাকা।
মধুবাগ কাঁচা বাজারে খুচরা দোকানে বর্তমানে আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজিদরে এবং দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা দরে। ১৫ দিন আগেও এই দুই ধরনের পেঁয়াজ খুচরা বাজারে কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা কম ছিল।
হঠাৎ আবার পেঁয়াজের দাম বাড়ার জন্য পর্যাপ্ত আমদানি না করা ও সরবরাহের ঘাটতিকে দায়ী করছেন বিক্রেতারা।
কারওয়ান বাজারের পাইকারি পেঁয়াজবিক্রেতা শাহ আলম বলেন, যেখানে চাহিদা রয়েছে ১০ গাড়ি, সেখানে ভারত থেকে আসছে ৫ গাড়ি। যেখানে বাজারে প্রয়োজন ১০০ বস্তা, সেখানে ঢুকছে ৫০ বস্তা। সরবরাহের ঘাটতি থাকায় দাম আবার বাড়ছে। এছাড়া বৃষ্টির কারণে ভারতেও পেঁয়াজ নষ্ট হচ্ছে। সেখান থেকেও বেশি দামে পেঁয়াজ আসছে। তাহলে দেশের বাজারে তো দাম বাড়বেই।
তিনি আরও বলেন, ভারত থেকে ৩৫ টাকা দরে পেঁয়াজ দেশে ঢুকে। এরপর পরিবহন খরচ দিয়ে ঢাকার বাজারে আসতে পেঁয়াজ আসতে খরচ পড়ে যায় প্রায় ৪০ টাকার মতো। এরপর আমরা দুই-চার টাকা বেশি লাভে বিক্রি করি। এভাবে বৃষ্টি চলতে থাকলে আর সরবরাহের ঘটতি থাকলে সামনে দাম আরো বাড়তে পারে।
মো. মানিক নামের আরেক বিক্রেতা বলেন, ভারত থেকে যখন পর্যাপ্ত আমদানি ছিল তখন পেঁয়াজের দাম ২৫ টাকায় নেমে এসেছিল। এখন আবার আমদানি কম হওয়ায় বাজারে সংকট দেখা দিয়েছে। তাই দাম বাড়ছে। আর দেশি পেঁয়াজ কম দামে বিক্রি করলে গৃহস্থের পোষায় না। তাই তারা বাড়তি দামে বিক্রি করে। আমাদেরও বাড়তি দামে বিক্রি করতে হয়।
পেঁয়াজের দাম যে কারণেই বাড়ুক, ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সাধারণ ক্রেতাদেরই। আর এই দাম বৃদ্ধির জন্য ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ও সরকারের যথাযথ মনিটরিংকে দায়ী করছেন তারা।
সোহরাব হোসেন নামের এক ক্রেতা বলেন, বাজারে জিনিসপত্রের সরবরাহ কমবেশি হবেই। কিন্তু সেটাকে কাজে লাগিয়ে জিনিসের দাম বাড়ানোর জন্য সিন্ডিকেট দায়ী। ব্যবসায়ীরা বাজারে পণ্যের ক্রাইসিস দেখিয়ে দাম বাড়ায়। সরকারের তদারকির অভাবে ব্যবসায়ীরা এই সুযোগ নেয়।
তিনি আরও বলেন, কয়দিন আগে মরিচের দাম আকাশছোঁয়া হয়েছে। দুইদিন আগে ভোক্তা অধিদপ্তর যখন মাঠে নেমেছে তখন আবার দাম কমেছে। কিন্তু ভোক্তা অধিদপ্তরকে আরও আগে মাঠে নামা উচিত ছিল। তাহলে দাম এত বাড়তো না।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার পেছনে ভোক্তাদেরও দোষ আছে জানিয়ে তিনি বলেন, পেঁয়াজ-মরিচ তো আর জীবন রক্ষাকারী ওষুধ নয় যে না খেলে মরে যাবে। তাহলে যখন দাম বাড়ে তখন কয়দিন আমরা যদি সেসব পণ্য কেনা বন্ধ রাখি, তাহলে ব্যবসায়ীরা দাম কমাতে বাধ্য। কিন্তু আমরা হুজুগে বাঙালি। যখনই কোনো কিছুর দাম বাড়ে তখন আমরা আরো বেশি ঝাঁপিয়ে পড়ি ওই পণ্য কেনার জন্য। যেন তখন স্বাদ আরও বেড়ে যায়।
রাশেদুল ইসলাম নামের আরেক ক্রেতা বলেন, বাজারে জিনিসপত্রের দামের কারণে আমাদের ভোগান্তি চরমে। এর জন্য ব্যবসায়ীদের থেকে বেশি তদারকি সংস্থাগুলোর দায় বেশি। তারা ঠিকমতো বাজার তদারকি করলে ব্যবসায়ীরা এভাবে দাম বাড়াতে পারে না।
এদিকে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বৃহস্পতিবারের তথ্য মতে, আজকে বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায় এবং আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। যা এক সপ্তাহ আগে যথাক্রমে ৬৫ থেকে ৭০ এবং ৩৫ থেকে ৪৫ টাকা ছিল।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৩ ঘণ্টা, জুলাই ৬, ২০২৩
এসসি/এসএএইচ