ঢাকা: হাঁটি হাঁটি পা করে ১৫০ মিলিয়ন ডলার বা প্রায় সাড়ে ১৬ হাজার কোটি টাকার বাইসাইকেল রপ্তানি করতে সক্ষম হয়েছে দেশের বাই সাইকেল রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো। এছাড়া স্থানীয় চাহিদারও প্রায় ৪০ ভাগ পূরণ করছে দেশের বাইসাইকেল প্রতিষ্ঠানগুলো।
দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্যের কাছে এ রপ্তানি আয় নগণ্য হলেও রপ্তানি বৈচিত্রকরণের ক্ষেত্রে পদচিহ্ন আঁকতে সক্ষম হয়েছে। কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও একটি ক্ষেত্র উন্মোচিত হয়েছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট ৫৫ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি আয় হয়েছে। এরমধ্যে, ৪৭ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি হয়েছে তৈরি পোশাক, যা মোট রপ্তানি আয়ের ৮৪ দশমিক ৫৮ শতাংশ। এ খাতের রপ্তানিকারকরা বলছেন, দেশের মোট রপ্তানি আয়ে লক্ষ্য পূরণ না হলেও তৈরি পোশাক রপ্তানিতে লক্ষ্য অতিক্রম করে যায়। আর এ চিত্র গত তিন দশক ধরে প্রায় একই রকম। সেখানে রপ্তানি বৈচিত্রকরণে তৈরি পোশাকের বাইরে রপ্তানি শুরুটা এক কঠিন কাজ। সে কঠিন কাজ শুরুটি করতে পেরেছে বাইসাইকেল প্রতিষ্ঠানগুলো।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য মোতাবেক সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছে ১৪২ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলারের বাইসাইকেল। আগের ২০২১-২২ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছিল ১৬৮ মিলিয়ন ডলারের। এরআগে, ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে চার বছরে যথাক্রমে ৮৫ দশমিক ৭৩ মিলিয়ন ডলার, ৮৪ দশমিক ২৪ মিলিয়ন ডলার, ৮২ দশমিক ৮৪ মিলিয়ন ডলার এবং ১৩০ দশমিক ৮৯ মিলিয়ন ডলার।
এ সব সাইকেলই প্রায় পুরোটাই ইউরোপের দেশগুলোতে রপ্তানি হচ্ছে।
রপ্তানিকারকরা বলছেন, হাঁটি হাঁটি পা করে শুরু হওয়া বাইসাইকেল রপ্তানি ২০২০-২১ অর্থবছরে এসে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ বৃদ্ধি পায়। রপ্তানি বৃদ্ধির এ ধারা পরের বছরও অব্যাহত থাকে। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ধাক্কা লাগে বাইসাইকেলের রপ্তানিতে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ খাত থেকে কমে যায় রপ্তানি আয়। নেতিবাচক এ ধারা এখনও অব্যাহত। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রথম দুই মাস জুলাই-আগস্টে সাইকেল রপ্তানিতে থেকে আয় কমে ১৪ দশমিক ৪৭ মিলিয়ন ডলারে নামে। এ আয় আগের বছরের একই সময়ে চেয়ে কম। পাশাপাশি কৌশলগত লক্ষ্য মাত্রারও প্রায় অর্ধেক।
দেশে প্রধানত তিনটি প্রতিষ্ঠান সাইকেল রপ্তানি করছে। এগুলো হলো প্রাণ আরএফএল, মেঘনা ও চট্টগ্রাম ইপিজেডে অবস্থিত বিদেশি বাইসাইকেল প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান আলিটা বাংলাদেশ।
এ বিষয়ে প্রাণ আরএফএলের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশের বাইসাইকেল রপ্তানিতে একটি শুভ সূচনা হয়েছিল। রপ্তানি বাড়ছিল। এ সব সাইকেলের রপ্তানির প্রধান বাজার ইউরোপের দেশগুলো। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে হোঁচট খায় বাইসাইকেল রপ্তানি। সাইকেল রপ্তানির কার্যাদেশ কমে আসে। ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে বলা হচ্ছে, সেখানকার মানুষ বাইসাইকেল কিনছে না, আগে যে বাইসাইকেল তারা নিয়েছিল সেগুলোই পড়ে আছে। যুদ্ধের কারণে অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে, মানুষের কেনার ক্ষমতার ওপরে সেই প্রভাব পড়েছে। সে কারণে কমেছে বাইসাইকেল বিক্রি। তবে আগামী বড়দিনকে সামনে করে কেনা-কাটা বাড়বে। এর মধ্য দিয়ে বাইসাইকেল রপ্তানির মন্দা দূর হবে।
দেশে বাইসাইকেল উৎপাদন শুরু হওয়ার পর থেকে স্থানীয় বাজারেও আমদানি নির্ভরতা কমেছে। বর্তমানে দেশে বাজার প্রায় ২০ লাখের সাইকেলের। এখন স্থানীয় সাইকেল প্রস্ততকারকরা এ চাহিদার প্রায় ৪০ শতাংশ পূরণ করছে। কিছু সাইকেল এখনও আমদানি হচ্ছে। দেশের সাইকেল বাজারের চাহিদায় দেশি কোম্পানিগুলোর অংশগ্রহণ পর্যায়ক্রমে আরও বাড়বে বলে জানান বাইসাইকেল রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৩
জেডএ/এসআইএ