ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ই-কমার্স ব্যবসাকে টিকিয়ে রাখতে হবে: ভোক্তা ডিজি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০২৪
ই-কমার্স ব্যবসাকে টিকিয়ে রাখতে হবে: ভোক্তা ডিজি

ঢাকা: স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ই-কমার্স ব্যবসাকে টিকিয়ে রাখতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।

মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে ‘ই-কমার্স ও ই-সেবা খাতে ভোক্তার অধিকার: আমাদের করনীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

আলোচনা সভাটির আয়োজন করে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ডিজি বলেন, আমাদের পরবর্তী ব্যবসা কিন্তু ই-কমার্স ব্যবসা। আমাদের এই ব্যবসাটাকে ধরে রাখতে হবে। প্রধানমন্ত্রী যে স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছেন, তা আমাদের টিকিয়ে রাখতে হবে। তা না হলে আবারও এই ই-কমার্স ব্যবসায় ধস নামবে।

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের কাছে গ্রাহকদের আটকে থাকা টাকা ফেরত দেওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, হাজার হাজার গ্রাহকদের যে টাকা আটকে আছে, সেটা ফেরত আসবে কীভাবে? সেই টাকা ফেরত আনতে হলে কোম্পানিগুলোকে ব্যবসার আবহের মধ্যে রাখতে হবে। এর মানে কী তারা আবার প্রতারণা করবে?  আবার তারা যাতে প্রতারণা করতে না পারে, সেজন্য আমরা ভিভিআইটি নামক একটা ব্যবস্থা নিয়েছি। যেখানে প্রতিটা ই-কমার্স ব্যবসায়ী নিবন্ধিত থাকবে।  এ বিষয়ে আইসিটি মন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক আমাদের সহযোগিতা করেছেন। আর এগুলো ই-ক্যাব তদারকি করবে। ই-ক্যাব থেকে সব ব্যবসায়ীকে ভিভিআইটির আওতায় আনা হবে।

এ এইচ এম সফিকুজ্জামান আরও বলেন, আমরা ইক্যাবের সাথে যোগাযোগ করেছি, যেখানে মাত্র আটশোর মতো কোম্পানি ভিভিআইটির সাথে যুক্ত হয়েছে। যদিও দেশে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আছে হাজারেরও বেশি। এর মাধ্যমে নিবন্ধিত কোনো কোম্পানি প্রতারণা করলে আমরা তাদের ট্র্যাক করতে পারব।

ভোক্তার ডিজি বলেন, আমাদের দুই ধরনের কনজ্যুমার কমপ্লেইন ম্যানেজমেন্ট  (সিসিএমএ) করা হয়েছে। প্রথমটা সাধারণ, যেটা ই-কমার্স ব্যতীত অন্য সকল প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রযোজ্য। যা বর্তমানে আমাদের এখানে (ঢাকায়) চলছে। এটা পরবর্তী ভোক্তা দিবসের আগে সারা বাংলাদেশে সিসিএমএ-এর প্রথম ধাপ ছড়িয়ে দেওয়া হবে। পাশাপাশি দ্বিতীয়ত ই-কমার্সের জন্য যেই কনজ্যুমার কমপ্লেইন ম্যানেজমেন্ট (সিসিএমএ)-এর ব্যবস্থা করা হয়েছে, সেখানে ভোক্তাদের যে অভিযোগ সেটা প্রাথমিকভাবে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানে গিয়ে জমা হবে। সেটা যদি প্রতিষ্ঠান সমাধান করতে না পারে তাহলে গ্রাহকরা ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের কাছে আসবে। ভোক্তা অধিদপ্তর সেটা নিষ্পত্তি করবে।

ইভ্যালির রাসেলকে জড়িয়ে সংবাদ প্রকাশ করা নিয়ে ভোক্তার ডিজি বলেন, গতকাল রাসেল সাহেবকে (ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক) জড়িয়ে আমাকে নিয়ে একটি পত্রিকায় নিউজ করা হয়েছে। আমি সাংবাদিক ভাইদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছি, আমি দায়িত্ব নিয়ে বলতে চাই—এই ধরনের হলুদ সাংবাদিকতা হলে বাংলাদেশে ই-কমার্সের যে স্বপ্ন আমরা দেখছি, সেটা মুখ থুবড়ে পড়বে। সেখানে যেটা হবে অন্য অনেক জিনিস ঢুকে যাবে। প্রধানমন্ত্রী যে স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছেন, সেটা বিনির্মাণে একটা ধস নামবে বলে আমি মনে করি। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে যে, এই ধরনের হলুদ সাংবাদিকতার জন্য আমাদের ভালো কাজগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, যখন আমাকে টাস্কফোর্সের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, সেখানে আমার প্রথম বিষয়টা ছিল আমাদের যে ৫২৫ কোটি টাকা, সেটা ফেরত দিতে হবে। যেভাবে এসেছে সেভাবেই যাতে ফেরত যায়। এই ফেরত যাওয়ার পদ্ধতিটা কী? অর্থাৎ যেসকল অপারেটরদের কাছে গ্রাহকরা টাকা বিনিয়োগ করেছেন, সেই টাকা যেখানে আটকে রয়েছে, সেখানে গ্রাহক এবং অপারেটররা যখন সম্মতি দিয়েছে তখন আমরা সেই অর্থ ফেরত দেওয়ার চেষ্টা করেছি। তবে এখানে অনেক বাধা ছিল, কারণ অনেক অপারেটরদের নামে মামলা ছিল, তাদের একাউন্ট ফ্রিজ করে রাখা হয়েছিল। যদিও এর মধ্যে আমরা সর্বমোট ৩৮৭ কোটি টাকা সকল অপারেটরদের কাছ থেকে গ্রাহকদের ফেরত দিয়েছি। যার মধ্যে ইভ্যালি, আলেশামার্ট, কিউকম-সহ আরও অনেক অপারেটর ছিল।

গ্রেপ্তারি ওয়ারেন্টভুক্ত ইভ্যালির রাসেলের সঙ্গে ভোক্তার ডিজির একই অনুষ্ঠানে থাকার বিষয়টি সাধারণ মানুষ কেমন চোখে দেখবে—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি এখানে অতিথি হিসেবে এসেছি, আমি এই অনুষ্ঠানের আয়োজক নই। এখানে কারা উপস্থিত আছেন, তাদের বিষয়ে আমি অবগত নই। কেউ আসামি কিনা, কেউ গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত কি না, তা আমি জেনে এখানে আসিনি।

এ সময়ে ই-ভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রাসেল বলেছেন, যদি আমাকে ব্যবসা করার সুযোগ দেওয়া হয় এবং বহিরাগত কোনো চাপ না দেওয়া হলে আমি মনে করি, ইভ্যালির দ্বারা যেসব গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন, খুব শিগগিরই তারা তাদের টাকা ফেরত পাবেন।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ইভ্যালির যে পরিচালনা পদ্ধতি রয়েছে, এবং ইভ্যালি যে পরিমাণ মুনাফা অর্জন করে যাচ্ছে, তাতে সবাই যদি সহযোগিতা করে তাহলে ইভ্যালি গ্রাহকদের টাকা পরিশোধ করতে সক্ষম হবে। আমাদের বর্তমান বিজনেস ক্যাশ অ্যান্ড ডেলিভারি।

সভায় বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের পরিচালক গাজী গোলাম তৌসিফ বলেন, ই-কমার্স খাত বাংলাদেশে একটি নতুন খ্যাত। বাংলাদেশ সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে স্মার্ট দেশ গড়া, সেই ক্ষেত্রে ই কমার্স খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

অতীতে ই-কমার্সের অনেক কার্যক্রমে জনগণের অনেক ভোগান্তি হয়েছে। সেই ভোগান্তি যেন আর না হয়, সেই জন্য সরকার কাজ করছে।

বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবুবকর সিদ্দিকীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন আইএসপিএবি-এর জয়েন্ট সেক্রেটারি আনোয়ার হোসেন অনু, ই-ক্যাবের সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল ওয়াহেদ তামাল, ই-কুরিয়ারের সিইও বিপ্লব ঘোষ রাহুল প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০২৪
ইএসএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।