ঢাকা: ঈদুল আজহা উপলক্ষে দেশের বৃহত্তম শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের পণ্য সাশ্রয়ী মূল্যে ট্রাকে করে বিক্রির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ‘সাশ্রয়ী মূল্যে বসুন্ধরা পণ্য ভোক্তার জন্য’—এই স্লোগান নিয়ে রাজধানীর ২০টি স্পটসহ সারা দেশের ১০০টি স্থানে ট্রাক থেকে ক্রেতারা সাশ্রয়ী মূল্যে তেল, আটা, ময়দা, সুজি, মসলা, নুডলসসহ ৩১টি পণ্য কিনতে পারবেন।
বৃহস্পতিবার (১৬ মে) বসুন্ধরা গ্রুপের প্রধান কার্যালয় ইন্ডাস্ট্রিয়াল হেড কোয়ার্টার-২ থেকে এ কার্যক্রম ভার্চ্যুয়ালি উদ্বোধন করেন বসুন্ধরা গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সাফিয়াত সোবহান, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএসএম শফিকুজ্জামান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বসুন্ধরা গ্রুপের হেড অব সেলস রেদোয়ানুর রহমান।
এ সময় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএসএম শফিকুজ্জামান বলেন, আজকে আমি আনন্দিত বসুন্ধরা গ্রুপ ঈদুল আজহা উপলক্ষে দেশের ৬৪টি জেলায় একযোগে ১০০ পয়েন্টে ট্রাক সেলের মাধ্যমে ৩১টি পণ্য বিশেষ ছাড়ে বাজারজাত করছে। বসুন্ধরা গ্রুপ দেশের বৃহত্তম একটি কর্পোরেট গ্রুপ, তারা যদি এই কার্যক্রম নিতে পারে তাহলে দেশের অন্যান্য বৃহৎ গ্রুপও এই কার্যক্রম নেবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
তিনি বলেন, দেশে বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। এ সময়ে কিছু প্রতিষ্ঠান সাধারণ মানুষকে সুবিধা দিতে এ ধরনের কার্যক্রম নিয়েছে। ইতোমধ্যে দেশের ৫/৬টি গ্রুপ এ ধরনের কিছু কার্যক্রম করছে, তবে সেটা স্বল্প পরিসরে। আমি তাদের আহ্বান জানাব, তারা যেন সেটা আরও বিস্তৃত আকারে করে। তারাও যদি বসুন্ধরার মতো ১০০টি করে স্থানে দেওয়া শুরু করে তাহলে ৬০০টি স্থান হয়ে যাবে। আগে এই কার্যক্রম রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরে ছিল। সেটা এখন জেলা শহর পর্যন্ত গিয়েছে। সবাই উদ্যোগ নিলে উপজেলা শহর পর্যন্ত এই কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে। এতে করে সাধারণ মানুষ বাজারমূল্য থেকে ১০-২০ শতাংশ কম দামে পণ্য পাবে।
ভোক্তা অধিকারের ডিজি আরও বলেন, আমি সবাইকে আহ্বান জানাব, নিত্যপণ্যের মূল্য যাতে যৌক্তিক পর্যায়ে থাকে। সরকার সব ধরনের সহায়তা করছে নিত্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে। প্রধানমন্ত্রী সব সময় একটা কথা বলেন, আমাদের যেসব পিছিয়ে পড়া মানুষ রয়েছে, তাদের নিয়ে ভাবা উচিত। এজন্য সরকার টিসিবি, ওএমএস কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এর পাশাপাশি যে সকল উদ্যোগ রয়েছে, যেমন বেসরকারি খাতও এগিয়ে আসছে। বসুন্ধরা আজ এই কার্যক্রম উদ্বোধন করল। তাদের সাথে যেন অন্য কর্পোরেট গ্রুপও করে। পাশাপাশি ব্যক্তি পর্যায়েও এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য আহ্বান জানাই।
রাজধানীর আব্দুল গণি রোডস্থ বাংলাদেশ সচিবালয়ের সামনে ফিতা কেটে বসুন্ধরা গ্রুপের ট্রাক সেল কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন বসুন্ধরা গ্রুপের এজিএম (সেলস) কাজী মনিরুজ্জামান মনি। এ সময় স্পেশাল সেলস মনিটরিং জুয়েল আহমেদ, ঢাকা কমলাপুর টেরিটরি এরিয়া ম্যানেজার মো. নাজমুল করিম, বসুন্ধরা গ্রুপের ডিস্ট্রিবিউটর (বংশাল) কামরুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।
কাজী মনিরজ্জামান মনির বলেন, ‘সাশ্রয়ী মূল্যে বসুন্ধরা পণ্য ভোক্তার জন্য’ এই স্লোগান নিয়ে দেশব্যাপী ৬৪ জেলায় ১০০টি স্থানে পণ্য বিক্রি শুরু হয়েছে। এরমধ্যে ঢাকাতে ২০টি স্থানে তেল, আটা, সুজিসহ সব ধরনের মসলা, নুডলস, চা পাতা, সরিষার তেল, ডাল, চিনিগুঁড়া চালসহ ৩১টি পণ্য সাশ্রয়ী মূল্যে পাওয়া যাবে। গত কয়েক বছর ধরে এই কার্যক্রম চলছে। আগামীতেও এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে আশা করছি।
তিনি বলেন, সচিবালয়ের সামনে সাশ্রয়ী মূল্যে বসুন্ধরার পণ্য পেয়ে ক্রেতা সাধারণ অনেক খুশি। এখানে ট্রাক সেলে ৫ লিটারের সয়াবিন তেলের বোতলে ৩৩ টাকা কমিয়ে ৭৮৫ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতিটি গ্রাহক সব ধরনের পণ্য একটি করে নিতে পারবেন।
অন্যদিকে প্রেসক্লাবের সামনে ফিতা কেটে বসুন্ধরা গ্রুপের ট্রাকসেল কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা ফুড অ্যান্ড বেভারেজের ডিভিশনাল সেলস ম্যানেজার আল আমিন, এরিয়া সেলস ম্যানেজার মো. রোকনুজ্জামান, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ফরহাদ হোসেন।
বসুন্ধরা ফুড অ্যান্ড বেভারেজের ডিভিশনাল সেলস ম্যানেজার আল আমিন বলেন, এই উদ্যোগ নেওয়ায় বসুন্ধরা গ্রুপকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই। ভবিষ্যতেও যেন আমরা এমন মহতী উদ্যোগ আরও বেশি এবং বড় পরিসরে গ্রহণ করতে পারি, সেজন্য আমি বসুন্ধরা গ্রুপের স্যারদের কাছে অনুরোধ করব।
কোরবানি ঈদ উপলক্ষে সারা দেশে নিম্ন আয়ের মানুষদের সুবিধা দিতে এই কার্যক্রম পরিচালনা করছে বসুন্ধরা গ্রুপ। রাজধানী ঢাকার ২০টি স্পটসহ দেশের ১০০টি স্থানে এই কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। গত বছর দেশের ৯৮ হাজার গ্রাহকের কাছে সেবা পৌঁছে দিতে পেরেছে বসুন্ধরা গ্রুপ। এ বছর রমজান মাসে ২ লাখ ৬৭ হাজার গ্রাহক এই সেবা নিয়েছেন। সামনের দিনগুলোতে এই সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করা হয়।
বসুন্ধরা গ্রুপের সাশ্রয়ী মূল্যের ট্রাক থেকে ক্রেতারা প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ১৬০ টাকা, দুই লিটারের বোতল ৩২০ টাকা, ৩ লিটারের বোতল ৪৮০ টাকা, ৫ লিটারের বোতল ৭৮৫ টাকা, ৮ লিটারের বোতল ১২৫৫ টাকা, সরিষার তেল প্রতি লিটার ২৫০ টাকা, আটা ১ কেজি ৪৫ টাকা, ময়দা এক কেজি ৫৮ টাকা, সুজি ২৫০ গ্রাম ১৮ টাকা, মসুর ডাল এক কেজি ১৩৮ টাকা, চিনিগুঁড়া চাল প্রতি এক কেজি ১৪২ টাকায় কিনতে পারবেন।
ভামিসিলি সেমাই ২০০ গ্রামের প্রতি প্যাকেট ৩০ টাকা, লাচ্ছা সেমাই ২০০ গ্রামের প্যাকেট ৩৫ টাকা, ইনস্ট্যান্ট মাসালা নুডলস ১৫০ গ্রামের প্যাকেট ২২ টাকা, পান্ডা অথেন্টিক চাইনিজ নুডলস ৩০০ গ্রামের প্যাকেট ৫০ টাকা, সি-শেল পাস্তা ২০০ গ্রামের প্যাকেট ৩৮ টাকা, ম্যাকারনি অ্যাসরটেড ২০০ গ্রামের প্যাকেট ৩৫ টাকায় নিতে পারবেন।
এছাড়া মসলা পণ্যের মধ্যে হলুদ ৫০০ গ্রামের প্রতি প্যাকেট ১৮০ টাকা, মরিচ ৫০০ গ্রামের প্যাকেট ৩২০ টাকা, ধনিয়ার গুঁড়া ৫০০ গ্রামের প্যাকেট ৫৫ টাকা, জিরার গুঁড়া ৫০০ গ্রামের প্যাকেট ৭৪০ টাকা, রোস্টের মসলা ৩৫ গ্রামের প্যাকেট ৫৫ টাকা, মুরগির মসলা ১০০ গ্রামের প্যাকেট ৬৫ টাকা, বিরিয়ানি মসলা ৪০ গ্রামের প্যাকেট ৫০ টাকা, গরুর মাংসের মসলা ১০০ গ্রামের প্যাকেট ৭০ টাকা, কাবাবের মসলা ৫০ গ্রামের প্যাকেট ৭০ টাকা, বোরহানি মসলা ৫০ গ্রামের প্যাকেট ৩২ টাকা, চটপটি মসলা ৫০ গ্রামের প্যাকেট ৩২ টাকা, বসুন্ধরা চা (প্রিমিয়াম) ২০০ গ্রামের প্যাকেট ৮৫ টাকা এবং বসুন্ধরা প্রিমিয়াম টি ব্যাগ ১০০ গ্রামের প্যাকেট ৬৫ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।
১০০ টি স্থানের নাম ও লোকেশন পেতে স্ক্যান করুন
বাংলাদেশ সময়: ০১০৩ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০২৪
জিসিজি/আরকেআর/ইএসএস/এমজেএফ