ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

উন্নত বীজ দিয়ে ১০ শতাংশ বেশি ফসল ফলানো সম্ভব

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫২ ঘণ্টা, জুলাই ২, ২০২৪
উন্নত বীজ দিয়ে ১০ শতাংশ বেশি ফসল ফলানো সম্ভব

ঢাকা: মানসম্পন্ন বীজের অভাবে ২০ শতাংশ পর্যন্ত কম ফসল উৎপাদন হয়। বাংলাদেশে সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দেশে বীজের ৫০ শতাংশ সরবরাহ করা হয়।

বাকি ৫০ শতাংশ বীজ কৃষকরা নিজেরাই সংরক্ষণ করেন। এ সব বীজে কোনো না কোনো ত্রুটি থাকে। বীজ সংরক্ষণে কৃষকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সঠিক বীজ নিশ্চিত করা গেলে শুধু উন্নত বীজ দিয়েই দেশে ১০ শতাংশ বাড়তি ফসল ফলানো সম্ভব বলে মনে করেন কৃষিবিদরা।

মঙ্গলবার (২ জুলাই) পল্লি কর্মসংস্থান সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএফএস) আয়োজিত ‘মানসম্পন্ন বীজের চাহিদা পূরণে পিকেএসএফ-এর উদ্যোগ’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে তারা এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পিকেএসএফ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. নমিতা হালদার।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আনোয়ার ফারুক বলেন, কৃষির উন্নয়নে গৃহীত পরিকল্পনায় কৃষকের উৎপাদিত ফসলের দাম নিশ্চিত করতে পরিকল্পনা থাকতে হবে, মার্কেটিংয়ে লিকেজ বন্ধ করতে হবে। কৃষক ফসল ফলিয়ে বিক্রি করতে পারে না, সরকার নির্বিকার বসে থাকে। উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করা গেলে কৃষক বেশি বেশি ফসল ফলাবে।

তিনি বলেন, ১৯৯৯ সালে দেশে আমদানি করা হাইব্রিড বীজের যাত্রা শুরু হয়। এখন ৯০ শতাংশ বীজ দেশেই উৎপাদিত হয়। কিছু হাইব্রিড ধানের বীজ বিদেশেও রপ্তানি হয়। আমাদের দেশেই সে সক্ষমতা আছে।

করোনাকালে সারা বিশ্ব খাদ্য সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিল। বাংলাদেশ খাদ্য নিয়ে কোন চাপে ছিল না, কোনো সমস্যা হয়নি উল্লেখ করে আনোয়ার ফারুক বলেন, আমাদের মাটি আছে, আমাদের ধান আমরাই উৎপাদন করতে পারি। আগামীতে বাড়তি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা আমাদেরই নিশ্চিত করতে হবে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর বলেন, আগে একটি ধানের ভ্যারাইটি মাঠে আনতে ১৪/১৫ বছর লাগতো। এখন লাগে ৭/৮ বছর। আগামীতে ৩/৪ বছরের মধ্যে নতুন ভ্যারাইটি আমরা মাঠে আনব, এ রকম কাজ চলছে। এটা করতে না পারলে আমাদের বীজ উৎপাদন ব্যবস্থা টেকসই হবে না।

তিনি বলেন, ধান চাষে মাটির নিচের পানির ব্যবহার নিয়ে যে কথা বলা হয়, তা মিথ্যা ছাড়া কিছু নয়। মেঘনার মিঠা পানি আমরা পরিকল্পিতভাবে ব্যবহার করতে পারছি না। অথচ মেঘনায় আমাদের সম্ভাবনা রয়েছে। দক্ষিণের লাখ লাখ লবণাক্ত জমিকে কাজে লাগানোর কথা বলছি। কিন্তু কোনো কাজে লাগছে না। লবণ সহনশীল ভ্যারাইটি ফলপ্রসূভাবে মাঠে নিয়ে আসতে হবে।

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) সদস্য পরিচালক (বীজ ও উদ্যান) মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রতি বছর দশমিক ৭০ শতাংশ হারে আবাদি জমি কমছে। আর জনসংখ্যা বাড়ছে ২১/২২ লাখের মতো। এই বাড়তি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা সৃষ্টিতে কৃষিতে উৎপাদন বাড়াতে হবে। দেশের মাটি থেকে উৎপাদন নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য বীজ উৎপাদন ও সঠিক বিপণনের মাধ্যমে কৃষকের কাছে নিরাপদ ও মানসম্মত বীজ পৌঁছানোর কাজটি নিশ্চিত করতে হবে।

পিকেএসএফ-এর মহাপরিচালক ড. মো. আব্দুল মালেক তার প্রবন্ধে মানসম্পন্ন বীজের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, দেশে ধান চাষে ৬৪ শতাংশ মানসম্মন্ন বীজ নিশ্চিত করা হয়, বাকি বীজ মানসম্পন্ন নয়। গমের ৪৩ শতাংশ নিশ্চিত করা গেছে, বাকি ৫৭ ভাগ মানসম্পন্ন নয়। ডালের বীজ মাত্র ১২ শতাংশ মানসম্পন্ন। তৈল বীজের মানসম্পন্ন ২১ শতাংশ। আর মাত্র ১৩ শতাংশ মানসম্পন্ন আলু বীজ দিয়ে চাষ করা হয়। সব কৃষকের কাছে মানসম্পন্ন বীজ পৌঁছে দিতে সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি আরও যেসব বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বীজের উন্নয়নে কাজ করছে, তাদের কাজের সমন্বয় করতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৯ ঘণ্টা, জুলাই ০২, ২০২৪
জেডএ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।