ঢাকা: মূল্যস্ফীতি কমাতে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, আমরা যুক্তিসংগত সময়ে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনবো।
বুধবার (১৪ আগস্ট) দুপুরে সচিবালয়ে ‘মূল্যস্ফীতি ও খাদ্য সরবরাহ পরিস্থিতি পর্যালোচনা এবং মূল্যস্ফীতি সহনীয় মাত্রায় কমিয়ে আনার’ লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, মূল্যস্ফীতির ক্ষেত্রে দুটি বিষয় আছে খাদ্য উৎপাদন এবং সরবরাহ। খাদ্য উৎপাদনে কতগুলো চ্যালেঞ্জ আছে। খাদ্য বলতে আমি মৎস্য, পশু পালন সবগুলো দেখছি। এর আর সঙ্গে সরবরাহটা। উৎপাদন করলেই তো চলবে না। উৎপাদনের পর গুদামে থেকে যায়।
তিনি বলেন, আমরা কতোগুলো জিনিস নিয়ে আলাপ করেছি এবং আমরা অতিদ্রুত অ্যাকশন নেব। কিন্তু মূল্যস্ফীতি জিনিসটা কতোগুলো কারণে বেশি হয়েছে। চট করে এটা কালকে নেমে যাবে, এটা ঘোড়ার মতো না। ঘোড়ার মাথায় নিচের দড়ি ধরে টান দিলাম আর থেমে গেলো। এটা ডিফিকাল্ট, এটার প্রসেস আছে। তবে একেবারে যুগযুগ লাগবে না, আমরা যুক্তিসংগত সময়ে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনবো।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ইতোমধ্যে আপনারা কিছুটা দেখতে পারছেন জিনিসপত্রের দাম কমে আসছে। আমি শুনেছি সবজির দাম কমে আসছে। যে কারণেই হোক। অতএব আশাকরি আমরা যে পদক্ষেপগুলো নিচ্ছি, সংশ্লিষ্ট যারা আছেন অতিদ্রুত পদক্ষেপগুলো নেবেন।
তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি শুধু জীবন-জীবিকা না, এটা ইনভেস্টমেন্টের ব্যাপার আছে। বিদেশ থেকে মূল্যস্ফীতির রেটটা দেখে। প্রজেক্ট করে তারা কি করবে, তাদের নিট রিটার্ন কেমন হবে। অতএব ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপার। আমরা জরুরি পদক্ষেপ নিচ্ছি।
বর্তমানে বাজারের জিনিসপত্রের যে দাম আছে তা থেকে সাধারণ মানুষ স্বস্তি পাবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নিশ্চই। শিগগিরই সে বিষয়ে সাধারণ মানুষ স্বস্তি পাবে। শিগগিরই বলতে রাতারাতি দাম কমে যাবে সেটা বলবেন না। তবে জিনিসপত্রের দাম কমবে।
সিন্ডিকেটের কারণে দ্রব্যমূল্য বাড়ে অতীতে এমন দেখা গেছে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এটি নজরে আনা হয়েছে, কথা হয়েছে। আমাদের নজরে কোন কিছু এড়ায়নি। আমার কিছুটা আইডিয়া আছে, গভর্নর সাহেবের আইডিয়া আছে, এ যে সচিবরা তারা কিন্তু অনেক অভিজ্ঞ।
তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছি আপনারা (সচিব) ফ্রিলি আমাদের বলবেন। আগের মতো ভয় করে, একেবারে প্রথমে এসে তোয়াজ করবেন, স্যার ভালো মানুষ এগুলো কিছু বলবেন না। আমাদের ভুল হলে বলবেন, আপনার কাছে তথ্য থাকলে ফ্র্যাংকলি বলবেন। অতএব আগের মতো গোপন কিছু থাকবে না। আবার সবকিছু স্বার্থের জন্য ওপেন করা যাবে না।
তিনি আরও বলেন, একজন গভর্নর নিয়োগ দিতে গেলে অনেকগুলো আইনি ব্যাপার আছে। আমরা তিন দিনে সমাধান করেছি। আমি তাড়াতাড়ি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলে কেবিনেটে আলোচনা করেছি, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কথা বলেছি। এগুলো অন্য সময় হলে দিত না। আরও তিন মাস লাগতো কাকে দেবে না দেবে, সেটা ঠিক করতে।
অনেকে ভাবছে সাম্প্রতিক সময় যে সহিংসতা হয়েছে তার কারণে ছাগলকাণ্ডের মতিউরসহ অন্যান্য দুর্নীতির বিষয়গুলো ধামাচাপা পড়ে যেতে পারে। সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এমন প্রশ্ন করা হলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, কোনো কিছুই ধামাচাপা পড়বে না। এগুলো চলমান থাকবে।
মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রানীতি এ দুটি বিষয় সমন্বয় করে কাজ করবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নিশ্চয়। সমন্বয় করেই কাজ করা হবে। তবে সমন্বয়হীনতার জন্য অর্থের অপচয় হয়। অর্থের অপচয় রোধ করতে হবে এবং অর্থের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। সেটা দেশি সম্পদ হোক বা বিদেশ থেকে ধার করা হোক। এ দুটি ক্ষেত্রেই সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হবে। আমরা অর্থের অপচয় করব না।
পুরাতন পদক্ষেপ নতুন ক্ষেত্র কীভাবে সফল হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা নিশ্চয়ই নতুন পদক্ষেপ নেব এবং সে পদক্ষেপের বাস্তবায়ন যাতে হয় সেটা নিশ্চিত করব। আমরা তো দেখবো যেটা পলিসি আছে সেটা বাস্তবায়ন হয়। অনেক জায়গায় দেখেছেন অনেক পদক্ষেপ বাস্তবায়ন হয় না সেটার অনেক কারণ আছে। ডোন্ট ওয়ারি। আমরা যেটা নেব সেটা বাস্তবায়ন করব। আমরা যতটুকু খেতে পারবো ততটুকুই নেব। ততটুকুই বাস্তবায়ন করবো।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। গভর্নর বলেন, আগামী চার-পাঁচ মাসের মধ্যে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০২৪
জিসিজি/আরআইএস