ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

সিরাজগঞ্জ বিসিক শিল্পপার্ক: প্লট বরাদ্দে দীর্ঘসূত্রিতায় শিল্পায়নে ধীরগতি

স্বপন চন্দ্র দাস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০২৪
সিরাজগঞ্জ বিসিক শিল্পপার্ক: প্লট বরাদ্দে দীর্ঘসূত্রিতায় শিল্পায়নে ধীরগতি

সিরাজগঞ্জ: যমুনা নদীর অববাহিকায় স্থাপিত সিরাজগঞ্জ বিসিক শিল্পপার্ক নির্মাণ হলেও এখনো প্লট বরাদ্দের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়নি। ফলে এ অঞ্চলটিতে শিল্পায়নে ধীরগতি দেখা দিয়েছে।

নীতিমালা অনুযায়ী ভূমি অধিগ্রহণের পরপরই বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্লট বরাদ্দ দেওয়ার বিধান রয়েছে। বেশ কয়েক বছর ধরেই মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তারা প্লট বরাদ্দ পেতে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগও করে আসছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্লট বরাদ্দের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়নি। এ নিয়ে অসন্তোষ বিরাজ করছে উদ্যোক্তাদের মধ্যে।  

জানা যায়, বঙ্গবন্ধু সেতুকে উত্তরাঞ্চলে শিল্পায়নের ক্ষেত্রে একটি গুরত্বপূর্ণ ফ্যাক্ট বিবেচনায় এবং তাঁতশিল্প সমৃদ্ধ সিরাজগঞ্জে শিল্প বিকাশের সম্ভাব্যতায় ‘শিল্প পার্ক’ স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সেতুর পশ্চিমপাড়ে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার ছাতিয়ানতলী, পূর্ব মোহনপুর, বনবাড়িয়া, বেলুটিয়া ও মোড়গ্রাম মৌজার মোট ৪০০ একর জমির ওপর প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয় শিল্প মন্ত্রণালয়। ৭১৯ কোটি ২১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পটির মূল লক্ষ্য শিল্পায়নের মাধ্যমে লাখো মানুষের কর্মসংস্থান ও উৎপাদন বাড়ানো।  

সিরাজগঞ্জ বিসিক শিল্পপার্ক প্রকল্প অফিস সূত্র জানায়, ২০১০ সালের ৩১ আগস্ট একনেক সভায় বিসিক শিল্পপার্ক প্রকল্পের ডিপিপি অনুমোদিত হয়। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে নদী অনুশাসনসহ প্রথম সংশোধিত ডিপিপি অনুমোদন হয়। ২০১৫ সালে জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়। এদিকে প্রকল্প এলাকা যমুনার অববাহিকায় হওয়ায় নদীর তীর রক্ষাবাঁধ নির্মাণের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড ৩ ও ৪ নম্বর ক্রসবার নির্মাণ শেষ করার পর ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে মাটি ভরাটের অনুমতি পায়। কিন্তু প্রকল্পের প্রথম সংশোধনের মেয়াদ ২০১৬ সালের জুনে শেষ হলে ওই বছরের নভেম্বরে একনেকে দ্বিতীয় সংশোধিত ডিপিপি অনুমোদিত হয়। ২০১৮ সালের মে মাসে ঠিকাদার নিয়োগের অনুমোদন পাওয়ার পর নভেম্বরে নৌবাহিনী নারায়ণগঞ্জের ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি করা হয়। সর্বশেষ ব্যয় বাড়ানো ছাড়াই ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের বর্ধিত মেয়াদ একনেকে অনুমোদন হয়। বর্ধিত মেয়াদের মধ্যেই প্রকল্পের ৯০ শতাংশেরও বেশি কাজ শেষ হয়। বর্তমানে বিসিক শিল্পপার্ক প্রকল্পটি পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছে। ভূমি উন্নয়ন, সয়েল টেস্ট, ডাইক বাঁধ, ডাম্পিং ইয়ার্ড, মেইন গেট নির্মাণ, রিভার প্রটেকশন, অফিস ভবন, পাম্প হাউস, পানি সরবরাহ লাইন, গভীর নলকূপ নির্মাণ, রাস্তা নির্মাণ, ড্রেন নির্মাণ, লেক নির্মাণ ও বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণকাজ আগেই সম্পন্ন হয়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগ, গ্যাস সংযোগ লাইন স্থাপনও শেষ। প্লটের বিপরীতে দর নির্ধারণের কাজ চলছে।  

প্রকল্প অফিস আরও জানায়, ৪০০ একর জমির ওপর স্থাপিত প্রকল্পের ২৭৫ একর জমিতে এ, বি ও এস (স্পেশাল) এ তিন ক্যাটাগরির ৮২৯টি প্লট প্রস্তুত করা হয়েছে। শিল্পপার্কের সৌন্দর্য বাড়াতে ১০ একর জায়গাজুড়ে সবুজ বৃত্তসহ একটি হ্রদ নির্মাণ হবে। নির্মাণ হয়েছে রাস্তাঘাট ও ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন অবকাঠামো। এছাড়া পার্ক এলাকায় পুলিশ ফাঁড়ি, প্রশাসনিক জোন, আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র, আবাসিক কোয়ার্টার, রেস্টুরেন্ট ও মার্কেটের কাজ এগিয়ে চলছে। এ ক্যাটাগরির প্লট ২০ হাজার, বি ক্যাটাগরির প্লট ১০ হাজার ও এস ক্যাটাগরির প্লট ৬ থেকে ২৬ হাজার বর্গফুট আয়তনের। ৮২৯টি প্লটে ৫৭০টি শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা যাবে। দেশীয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের সঙ্গে রপ্তানি ও আমদানিমুখী শিল্প প্লট অনুমোদনের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে।  

সিরাজগঞ্জের বিসিক শিল্প পার্কের উপ-মহাব্যবস্থাপক ও প্রকল্প পরিচালক জাফর বায়েজিদ বলেন, বঙ্গবন্ধু সেতুকে উত্তরাঞ্চলে শিল্পায়নের ক্ষেত্রে একটি গুরত্বপূর্ণ ফ্যাক্ট হিসেবে বিবেচনা করে বিসিক শিল্পপার্ক নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। প্রকল্পটির কাজ শেষ হয়েছে। দাম নির্ধারণ হয়নি। দাম নির্ধারণের জন্য যে প্রসেস প্রজেক্ট কর্তৃপক্ষ কমপ্লিট করে হেড অফিসে আছে। আগামী ২৩ ডিসেম্বর বোর্ড মিটিং রয়েছে। সেই মিটিংয়ে দরটা পাস হলে বিজ্ঞপ্তিতে যাবে। নইলে আরও একমাস পিছিয়ে যাবে। ডিপিপি অনুযায়ী প্রতি বর্গফুটের দাম ধরা হয়েছিল ৭৬৮ টাকা। এখন সেটা কমবে। জমির দাম, আমাদের খরচ, কত টাকা সুদ দিতে হবে সেগুলো ধরে দাম নির্ধারণ করা হবে।  

এদিকে উদ্যোক্তারা বলেন, ঢাকা উত্তরবঙ্গ মহাসড়কের পাশেই গড়ে ওঠা শিল্পপার্কের চারদিকে অবকাঠামোগত সুবিধার কারণে আমরা এখানে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে চাই। অনেকদিন ধরেই আমরা প্লট বরাদ্দ পাওয়ার জন্য যোগাযোগ করে চলেছি। প্লট বরাদ্দের বিজ্ঞপ্তি না দেওয়ায় আমরা পিছিয়ে পড়ছি। সেই সঙ্গে পিছিয়ে পড়ছে আমাদের এ অঞ্চলটি।  

বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সরোয়ার হোসেন সবুজ বলেন, আমরা অনেকদিন ধরেই অপেক্ষায় রয়েছি। বিসিক শিল্পপার্কে বেশ কিছু কারখানা প্রতিষ্ঠার প্ল্যান রয়েছে। তার মধ্যে একটি ওয়ার মিল, ওয়েল রিসাইক্লিং প্ল্যান্ট ও আধুনিক অটো মোবাইল সার্ভিস কারখানা স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া এসএআরকে কোম্পানির সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা এখানে বৃহৎ পরিসরে টয় ফ্যাক্টরি স্থাপনে আগ্রহী। প্লট বরাদ্দ পেলেই আমরা আমাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অগ্রসর হতে পারবো।  

এম এম মতিন কটন মিলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম মো. মুসা বলেন, বিসিকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। প্লট বরাদ্দ পেলেই সেখানে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলবো।  

সিরাজগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট সাইদুর রহমান বাচ্চু বলেন, সিরাজগঞ্জে ইনভেস্ট করার মতো ভালো পজিশন আছে। এখানে রেলপথ, সড়কপথ ও নৌপথ রয়েছে। যোগাযোগের এত সুন্দর ব্যবস্থার কারণেই এখানে শিল্পপার্ক স্থাপন হয়েছিল। কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করবো দ্রুত সময়ের মধ্যে প্লট বরাদ্দের ব্যবস্থা করা হোক।  

বিসিক চেয়ারম্যান আশরাফ উদ্দীন আহাম্মদ খান বলেন, প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি। টিসিআর দেওয়ার পর প্লট বরাদ্দের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে।  

নীতিমালা অনুযায়ী ভূমি অধিগ্রহণের পরই প্লট বরাদ্দ দেওয়ার বিধান রয়েছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওপর মহলের নির্দেশ পেলেই বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে।  

সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা বলেন, নীতিমালায় থাকলেও ডেভেলপমেন্ট না থাকলে প্লট বরাদ্দ নিয়ে কোথায় কী করবে। তারপরও আমাকে একটু জেনে বলতে হবে। এটি বিসিক চেয়ারম্যান জানার কথা।

বাংলাদেশ সময়: ০৮২২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০২৪
আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।