ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ মাঘ ১৪৩১, ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ০০ শাবান ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর অর্থনৈতিক দর্শনে দেশে বৈষম্য বেড়েছে: আনু মুহাম্মদ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০২৫
আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর অর্থনৈতিক দর্শনে দেশে বৈষম্য বেড়েছে: আনু মুহাম্মদ

ঢাকা: আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর অর্থনৈতিক দর্শনের কারণে দেশে বৈষম্য বেড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। এ দর্শনে নির্ভরশীল কাঠামো রেখে দেশে বৈষম্য কমানো যাবে না বলেও অভিমত প্রকাশ করেছেন তিনি।

শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) ‘বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণ কোন পথে’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনা সভায় তিনি এ অভিমত প্রকাশ করেন। জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে সাপ্তাহিক একতা।

আলোচনা সভায় অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ওপর ভিত্তি করে ৭২ সালের সংবিধান রচিত হয়েছে। কিন্তু এটা সংস্কার করা যাবে না, ব্যাপারটা তা নয়। এ সংবিধানে সমস্যা আছে। এ সংবিধানে ক্রমাগত বৈষম্য বেড়েছে। লুণ্ঠন, স্বৈরাচারের ভিত্তি হয়ে উঠেছে এ সংবিধান। ব্যক্তি ও জাতিগত নিরাপত্তা ক্রমাগত উপেক্ষা করা হয়েছে এ সংবিধানে।

গোলটেবিল আলোচনায় ‘রাষ্ট্র সংস্কার ও নির্বাচনী সংস্কার’ বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতিসংঘের উন্নয়ন গবেষণার সাবেক প্রধান ও এশীয় প্রবৃদ্ধি গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক নজরুল ইসলাম।  

তিনি বলেন, সংবিধানের প্রস্তাবনা নতুন করে লেখার প্রয়োজন আছে কি না, সন্দেহ আছে। তবে পরিমার্জন করতে হলে ২০২৪ সালে জুলাইয়ের অভ্যুত্থান ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে প্রকাশিত গণতন্ত্র, সাম্য, এবং মানবিক মর্যাদার জন-আকাঙ্ক্ষার কথা নিশ্চয়ই অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। গণতন্ত্রের জন্য ১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থানের ত্যাগ ও আকাঙ্ক্ষা স্মরণ করাও যথার্থ হবে। প্রস্তাবনায় মুক্তিযুদ্ধ ও প্রজাতন্ত্র শব্দাবলী প্রতিস্থাপনের প্রয়াস অপ্রয়োজনীয় ও অবাঞ্ছনীয়।

তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় মূলনীতিসমূহ প্রতিস্থাপনের সুপারিশটি পরিপক্ব নয়। প্রস্তাবিত পাঁচটি মূলনীতি— সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদ, গণতন্ত্রের মধ্যে যৌক্তিক ও ঐতিহাসিক গ্রন্থন অনুপস্থিত। সুতরাং এ নিয়ে আরও আলোচনা প্রয়োজন। বৈষম্যবিরোধী গণঅভ্যুত্থানের পটভূমিতে সংবিধান পরিমার্জনের উদ্যোগ নেওয়া কমিশন কেন ২(ক) ধারা বাতিল করার সুপারিশ দিতে অপারগ হলো তা বোধগম্য নয়।

সভায় ‘বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণ ও আর্থ-সামাজিক সংস্কার’ শীর্ষক আরেকটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরোর চেয়ারম্যান ও সাপ্তাহিক একতার সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অধ্যাপক এম এম আকাশ।

প্রবন্ধে তিনি বলেন, আগামী বাজেট অন্তর্বর্তী সরকার প্রণয়ন করতে যাচ্ছে। তাদের সামনে প্রধান চারটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। প্রথমত, কীভাবে বৈদেশিক খাতে উদ্বৃত্ত ব্যালেন্স তৈরি করে ক্রমবর্ধমান ডলার রিজার্ভ তারা তৈরি করবেন বা করার সূচনা করবেন? নতুন ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বাণিজ্য, বৈদেশিক ঋণ ও বিনিয়োগ নীতি কি হবে? 

‘দ্বিতীয়ত, বাজেটে যে প্রচণ্ড রাজস্ব ঘাটতি থাকবে, তা কীভাবে পূরণ করবেন? তৃতীয়ত, ব্যক্তি বিনিয়োগ ও প্রবৃদ্ধির হারকে যথাসম্ভব কীভাবে ধরে রাখা যায়, তার উপায় উদ্ভাবন অর্থাৎ বিনিয়োগ আবহাওয়ার উন্নতি করে কর্মসংস্থান ও প্রবৃদ্ধি কীভাবে অব্যাহত রাখা যাবে? চতুর্থত, মুদ্রাস্ফীতি ও মন্দা দুইই কাটিয়ে অর্থনীতিতে কিভাবে সামষ্টিক স্থিতিশীলতা আনা যাবে?’

তিনি আরও বলেন, যে পুলিশ, শিক্ষা কর্মকর্তা, আমলা, ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদরা অতীত কর্মকাণ্ডের জন্য কমবেশি অভিযুক্ত হয়েছেন, তাদের এখন নিরপেক্ষ-সুষ্ঠু তালিকা প্রণয়ন করে এদের মধ্যে যারা নির্দেশ পালনে বাধ্য হয়েছিলেন, অথচ যাদের অপরাধ লঘু এবং ইগনোর করা যায়, তাদের শনাক্ত করে তাদের মব জাস্টিসের মধ্যে ফেলে না দিয়ে একটি সুষ্ঠু ন্যায়বিচার প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার প্রয়োজন রয়েছে।

অধ্যাপক এম এম আকাশ আরও বলেন, শুধুমাত্র ভালো নীতি প্রণয়ন নয়, তা বাস্তবায়নের জন্য সুশাসন প্রতিষ্ঠা, আর্থিক ও জ্বালানি খাত, আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা এবং বাজার ব্যবস্থাপনায় জরুরি নীতিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার প্রয়োজন। তা অন্তত শুরু করতে না পারলে জনগণের মনে প্রয়োজনীয় বিশ্বাস, আস্থা বা স্বস্তি ফিরিয়ে আনা যাবে না এবং গোলযোগ ও সামাজিক বিরোধ আরও বাড়বে, যার সুস্পষ্ট লক্ষণ এরইমধ্যেই দেখা যাচ্ছে।

সাপ্তাহিক একতার সম্পাদক আফরোজান নাহারের সভাপতিত্বে গোলটেবিল আলোচনায় আরও উপস্থিত ছিলেন অর্থনীতিবিদ মোস্তাফিজুর রহমান, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান, ডাকসুর সাবেক জিএস মুশতাক হোসেন, সাংবাদিক মোজাম্মেল হোসেন মঞ্জু, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম, সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০২৫
এসসি/আরএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।