ঢাকা, শুক্রবার, ২৪ মাঘ ১৪৩১, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭ শাবান ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

হঠাৎ কমলো তেলের সরবরাহ, সবজিতে স্বস্তি

জাফর আহমদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২৫
হঠাৎ কমলো তেলের সরবরাহ, সবজিতে স্বস্তি

ঢাকা: রাজধানীর বাজারে আকস্মিকভাবে ভোজ্যতেলের সবরাহ কমে গেছে। সব দোকানে মিলছে না সয়াবিন তেল।

দুয়েকটি দোকানে মিললেও নেওয়া হচ্ছে বাড়তি দাম।

বিক্রেতারা বলছেন, ভোজ্যতেল সরবারহকারী ভ্যান এলেও তারা সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন। প্রতিদিন যা দিয়ে যায়, একদিনেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। তবে শীতকালীন সবজির প্রচুর সরবরাহের সুবাদে এ ধরনের পণ্য ক্রয়ে স্বস্তি পাচ্ছেন ক্রেতারা। রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমনই চিত্র দেখা গেছে।

বাজারের বিভিন্ন দোকানে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ১৭৫ টাকা দামের এক লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল মিলছে না। দুয়েকটি দোকানে থাকলেও গোপনে রাখা হচ্ছে। লিটারে বাড়তি ১৫ থেকে ২৫ টাকা পেলে গোপনে বিক্রি করছেন দোকানিরা। তবে বড় দোকানগুলোতে দুই লিটারের বোতল ৩৫০ টাকা আর পাঁচ লিটারের বোতল ৮৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।

হঠাৎ সয়াবিন তেল উধাও কেন? জানতে চাইলে মিরপুর-১০ সেনপাড়ার বিক্রেতা জাকির হোসেন জানান, আগস্ট থেকেই এ অবস্থা। প্রয়োজন মতো তেল সরবরাহ করছেন না ডিলারা। বোতলের তেল শেষ হয়ে গেলে ১৭০ টাকায় পামওয়েল বিক্রি করছি।

শীতকালীন সবজির বাড়তি সরবরাহের সুবাদে রাজধানীর বাজারগুলো এখনো এসব পণ্যের দাম স্বস্তিকর পর্যায়ে আছে। সস্তায় মিলছে গোল আলু, কেজি ২০ টাকা। পেঁয়াজের কেজি এখনো ৪০ থেকে ৫০ টাকা। ভালো মানের গোল বেগুন পাওয়া যাচ্ছে ৬০ টাকায়, মাঝারি মানের বেগুনের কেজি মিলছে ৫০ টাকায়। তবে লম্বা বেগুন ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাঁচা মরিচের কেজি ৮০ টাকা, টমেটো পাওয়া যাচ্ছে ৩০ থেকে সর্বোচ্চ ৪০ টাকায়।  বাজারে দেশি শসার কেজি ৮০ টাকা, হাইব্রিড ৫০ থেকে ৬০ টাকা, ক্ষিরা ৫০ টাকা রাখা হচ্ছে। আর ২৫০ গ্রাম ধনেপাতার দাম মাত্র ২৫ টাকা। গাজরের কেজি ৪০ টাকা, বড় ধরনের প্রতিটি লাউ ৫০ টাকা ৬০ টাকা, শিম ৩৫-৪০ টাকা, বিচিসহ শিম ৫০-৬০ টাকা, কলার হালি ৩০ টাকা, পেঁপে ৫০ টাকা, করলা ১৪০ টাকা, উস্তার কেজি ৮০ টাকা, ঝিঙা ৮০ টাকা, মুলা ৩০ টাকা, চিচিঙ্গার কেজি ৬০ টাকা, চাল কুমড়া ৫০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা এবং ঢেঁড়শের কেজি ১০০ টাকা। মিষ্টি কুমড়া মিলছে কেজি ৪০ টাকা, তবে দেড় থেকে দুই কেজি ওজনের কাঁচা মিষ্টিকুমড়া মিলছে ৬০ টাকায়। শাকে শীতের আড়ষ্টতা পুরোপুরি বিদ্যমান। লাল শাক ১০ টাকা আঁটি, লাউপাতা ২০ টাকা। আর ২০ টাকায় মিলছে বড় আকারের চারটি লেবু, ওলকপির কেজি ১৫ থেকে ২০ টাকা, ফুলকপি যত বড়ই হোক মিলছে ২৫ টাকায়। বাঁধাকপি মিলছে ২৫ থেকে ৩০ টাকায়।

সবজির বাজারে স্বস্তি মিললেও চালের বাজারের অস্বস্তি যাচ্ছে না। সব ধরনের চালে ঊর্ধ্বগতি। চিকন চাল ৮২ থেকে ৮৫ টাকা, বিআর-আটাশ ৬৫ টাকা, মোটা চাল ৫২ থেকে ৫৫ টাকা রাখা হচ্ছে।

এদিকে ছোলার কেজি ১১০ টাকা, ছোলার ডাল ১২৫ টাকা, মোটা ডাল ১১০, চিকন ডাল ১৩৫ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১৪০ টাকা, চিনির কেজি ১২৫ টাকা, ডিমের ডজন ১৩০-১৩৫ টাকা রাখা হচ্ছে। হাতে ভাজা মুড়ির কেজি রাখা হচ্ছে ১৬০ টাকা। দোকানে বেসনের (অ্যাংকর ডালের) কেজি রাখা হচ্ছে ১২০ টাকা, তবে কারওয়ান বাজারের মতো পাইকারি বাজারের আশপাশে ২০ টাকা কম দামে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে এ পণ্য।

আগের দামে গরু-খাসির মাংস, স্থিতিশীল মাছের দর এদিকে, রাজধানীতে গরুর মাংসের কেজি রাখা হচ্ছে ৭৩০ থেকে ৭৫০ টাকা পর্যন্ত। খাসির মাংস কেজি বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১০০ থেকে বাজারভেদে ১ হাজার ১২০ টাকা পর্যন্ত। ছাগলের মাংস ১ হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

অবশ্য স্থিতিশীল দেখা গেছে রাজধানীর মাছের বাজার। আটশ’ গ্রাম ওজনের এক কেজি রুই মাছের দাম ৩০০ থেকে বাজার ভেদে ৩৫০ টাকা। একই দামে বিক্রি হচ্ছে কাতল মাছ। দেড় কেজি থেকে দুই কেজি বা তার বেশি ওজনের রুই ও কাতল বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি দরে। ছোট পাঙাস ও সিলভার কার্প ১৪০ থেকে বাজার ভেদে ১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এক কেজি থেকে বেশি ওজনের এসব মাছ কিছুটা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। চাষের টেংরা মাছ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে বাজারভেদে ৫৫০ টাকা, পাবদা ৪০০ টাকা, বেলে ধরনভেদে ৬৫০ থেকে ৮০০ টাকা, টাকির কেজি ৩৫০ টাকা, বড় শোল ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা, বড় চিংড়ি ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা, বাইম ৮০০ টাকা, বড় বাঘাইড় ১ হাজার ১০০ টাকা, শিং মাছ ৪০০ টাকা এবং দেশি প্রতি কেজি কই ১ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বড় আইড়ের কেজি ১ হাজার ২০০ টাকা, চিতল (এক কেজির কম) ৬০০ টাকা রাখা হচ্ছে বাজারে।
এক কেজি থেকে বেশি ওজনের ইলিশের দাম ২ হাজার ৪০০ টাকা থেকে বাজারভেদে ২ হাজার ৬০০ টাকা, ৮০০ গ্রামের ইলিশ দুই হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা, ৫০০ গ্রাম থেকে ৭০০ গ্রাম ওজনের প্রতি কেজি ইলিশের দাম ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা পর্যন্ত রাখা হচ্ছে।

রাজধানীর ছোট বাজারগুলোতে ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৯০ টাকা, সোনালী ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকা, দেশি মুরগি ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কারওয়ান বাজারে সব ধরনের মুরগিতে ১০ থেকে ২০ টাকা কম দামে বিক্রি হচ্ছে।

ঊর্ধ্বমুখী খেজুরের বাজার, বাড়তি ফলের দাম। রোজাকে সামনে রেখে বাড়ছে খেজুরের দাম। খেজুর আমদানিতে সরকার বিভিন্ন ধরনে কর কমালেও বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামেই। খোলা বরই খেজুর ৪০০ টাকা, খোলা মরিওম এক হাজার টাকা এবং খোলা ছড়া খেজুরের কেজি রাখা হচ্ছে ৮০০ টাকা।

ফলের মধ্যে প্রতিকেজি নাশপাতি ৩৮০ টাকা, মালটা ৩০০ টাকা, কমলা ২৮০ টাকা, দেশি কমলা ৩৮০ টাকা, আপেল ২৮০ টাকা, গোল্ডেন আপেল ৩৮০ টাকা, ডালিম ৫৫০ টাকা, আঙুর ৩০০ টাকা, লাল আঙুর ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা বলছেন, ভ্যাট বাড়ানোর ফলে বেড়েছে সব ধরনের ফলের দাম। দুই সপ্তাহ আগে যে দামে ফল বিক্রি হয়েছে, এখন আর সে দামে বিক্রি করা যাচ্ছে না।

রোজার পণ্যের সরবরাহ পর্যাপ্ত কারওয়ান বাজার ও মিরপুর-১১ এলাকার পাইকাররা জানান, রোজায় বেশি চাহিদা আছে এমন পণ্য যেমন চিনি, ডাল, ছোলা, ছোলার ডালের এখনো যথেষ্ট সরবরাহ আছে পাইকারি বাজারে। এসব বাজারে ৫০ কেজি ওজনের চিনির বস্তার দাম ৫ হাজার ৭৫০ থেকে ৫ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সে হিসেবে পাইকারি দরে প্রতি কেজি চিনির দাম পড়ে ১১৫ টাকা থেকে ১১৬ টাকা। খুচরা বাজারে পড়ে ১২৫ টাকা। চিকন মসুরের ডালের ৩০ কেজি বস্তার দাম ৩ হাজার ৮০০ টাকা। মোটা মসুরের ২৫ কেজি ওজনের বস্তার দাম ২ হাজার ৫০০ টাকা। সে হিসেবে পাইকারিতে চিকন মসুরের ডালের কেজি ১২৬ টাকা ৬০ পয়সা এবং মোটা মসুরের ডাল একশ টাকা পড়ে। খুচরা বাজারে বিক্রি হয় যথাক্রমে ১৩৫ ও ১১০ টাকা দরে কেজি দরে।

২৫ কেজির ছোলার বস্তার দাম বাজারভেদে ২ হাজার ৫৫০ টাকা থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকা। একই ওজনের ছোলার ডালের বস্তার

দাম ২ হাজার ৭০০ টাকা। ছোলা ও ছোলার ডালের প্রতি কেজির পাইকারি দাম ১০৪ ও ১০৮ টাকা। আর খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে যথাক্রমে ১১০ টাকা ও ১২৫ টাকা দরে। একই সময়ে পাইকারি বাজারে বেসনের দাম ৭০ টাকা। মিরপুরের বিভিন্ন স্থানে বেসন বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকা কেজি দরে।

রোজা পণ্যের সরবরাহ ও দাম নিয়ে সংশ্লিষ্টরা যা বলছেন রোজায় চাহিদা আছে এমন পণ্যের মধ্যে ভোজ্যতেল ও ফলে কিছুটা কাটতি রয়েছে। দামও কিছুটা বাড়তি দিকে। সম্প্রতি রাজধানীর একটি হোটেলে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন তেলের চাপ কমাতে খোলা তেল ব্যবহারে উপদেশ দেন।

তিনি বলেন, ফিনিশড (ক্রুড নয়) ভোজ্যতেল আমদানিতে উন্মুক্ত করা হয়ে করা হয়েছে, যে কেউ আমদানি করতে পারে।

একই অনুষ্ঠানে ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মইনুল খান জানান, রোজায় ব্যবহৃত পণ্যগুলো যেন সহজ ও তুলনামূলক কম দামে পাওয়া যায় এজন্য আগে থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি কমানো হয়েছে বিভিন্ন ধরনের কর।

বাংলাদেশ সময়: ০৮২০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০২৫
জেডএ/এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।