ঢাকা: দেশে ভোজ্যতেলের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে এবং কোনো ঘাটতি নেই বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশন। তারা বলেছে, গত দুই মাসে ভোজ্যতেলের আমদানি প্রায় ৩৫ শতাংশ বেড়েছে।
রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনে আসন্ন পবিত্র রমজানে ভোজ্যতেলের বাজারে সার্বিক সরবরাহ পরিস্থিতি নিয়ে অনুষ্ঠিত সভায় এ কথা জানানো হয়েছে। সভায় বর্তমানে বাজারে বোতলজাতকৃত সয়াবিন তেলের ঘাটতি রয়েছে কি না তা নিয়ে আলোচনা হয়।
কমিশনের চেয়ারম্যান (সচিব) ড. মইনুল খান সভাপতিত্বে বণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব (রুটিন দায়িত্ব) আবদুর রহিম খানসহ দেশের শীর্ষ ভোজ্যতেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।
বাজারের দোকানগুলোতে সম্প্রতি তেল সরবরাহ কম দেখা যাওয়া প্রসঙ্গে সভায় কমিশন থেকে বলা হয়, যেটি হয়েছে তা কৃত্রিম এবং প্রকৃত তথ্যের ঘাটতি থেকে সৃষ্ট। তাই পণ্য ক্রয়ের শর্তে ভোজ্যতেল বাজারজাত করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বাণিজ্য হচ্ছে কি না তা প্রতিরোধে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি ভোক্তাসাধারণের স্বার্থরক্ষায় উৎপাদন ও বিপণনের সব পর্যায়ে বাজার মনিটরিং করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
সভায় বর্তমানে বাজারে ভোজ্যতেলের পরিস্থিতি নিয়ে ব্যবসায়ীরা জানান, রমজান উপলক্ষে পাইপলাইনে বেশ কিছু ভোজ্যতেলভর্তি জাহাজ চট্টগ্রামের বন্দরে নোঙ্গর করার অপেক্ষায় আছে। এগুলো অচিরেই স্থানীয় সরবরাহের সঙ্গে যুক্ত হবে। পাইপলাইনে থাকা ভোজ্যতেলের পরিমাণ প্রায় এক লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন। সাবির্কভাবে, ভোজ্যতেলের সরবরাহ পর্যাপ্ত রয়েছে মর্মে জানানো হয়।
ব্যবসায়ীরা আরও জানিয়েছেন, মাঠ পর্যায়ে কেউ কেউ অতিরিক্ত মজুদ করে থাকতে পারে। আবার কেউ কেউ অধিক লাভের আশায় বোতল কেটে খোলা তেলে পরিণত করে তা বিক্রয় করতে পারে।
এছাড়া পাশের দেশে মূল্য অধিক হওয়ায় অনানুষ্ঠানিক বাণিজ্য হওয়ার আশঙ্কার কথাও বলেন ব্যবসায়ীরা।
সভায় উৎপাদনকারীরা জানান, পূর্বের বছরগুলোর তুলনায় তারা সাম্প্রতিক মাসগুলোয় বাজারে সরবরাহ বাড়িয়েছেন।
সিটি গ্রুপের প্রতিনিধি (উপদেষ্টা) অমিতাব চক্রবর্তী জানান, সিটি গ্রুপ জানুয়ারি ২০২৫-এ মোট তেল সরবরাহ করেছে প্রায় ৫০ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন। এর মধ্যে ২২ হাজার ২৪২ টন বোতলজাতকৃত। ২০২৪-এর একই মাসে বোতলে তারা সরবরাহ করেন ১৪ হাজার ২৬২ টন তেল।
মেঘনা গ্রুপের প্রতিনিধি জিএম তসলিম শাহরিয়ার জানান, চলতি বছরের জানুয়ারিতে মোট ৪৭ হাজার ৬৬৮ হাজার টন তেল সরবরাহ করেন তারা। এর মধ্যে ১৫ হাজার মেট্রিক টন বোতলজাত। পূর্ববর্তী বছরের জানুয়ারি সরবরাহ ছিল ২৫ হাজার মেট্রিক টনের মধ্যে ১২ হাজার টন বোতলজাত।
টিকে গ্রুপের পরিচালক শফিউল আতাহার তসলিম জানান, চলতি বছরের জানুয়ারিতে মোট ১১ হাজার ৮১০ মেট্রিক টন বোতলজাত সয়াবিন তেল সরবরাহ করেছেন তারা, যা গতবছরের একই সময়ে ছিল ৯ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন।
অন্যান্য উৎপাদনকারীরা জানান, তারাও পূর্বের মাসগুলোর তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে সরবরাহ বাড়িয়েছেন। উপস্থিত সবার তথ্যাদি নিয়ে দেখা যায়, আগের বছরের জানুয়ারির তুলনায় এবারের জানুয়ারিতে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহের প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ।
বর্তমানের আন্তর্জাতিক বাজার ও আমদানি পরিস্থিতি স্থানীয় বাজারেও এর সরবরাহ ও দামের ক্ষেত্রে স্থিতিশীলতার নিশ্চয়তা দেয় বিধায় সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ভোক্তাসাধারণের স্বার্থ রক্ষায় উৎপাদন ও বিপনণের সকল পর্যায়ে বাজার মনিটরিং করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
প্রাপ্ত তথ্যাদি পর্যালোচনায় দেখা যায়, কেউ কেউ অন্যান্য পণ্য ক্রয়ের শর্তে ভোজ্যতেল বাজারজাত করে থাকে। উৎপাদক বা অন্যান্য কোনো পর্যায়ে এ ধরনের শর্তযুক্ত বিক্রয় বা বাজারজাত করা প্রচলিত আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এ ধরনের কোনো অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।
ভোজ্যতেলের অনানুষ্ঠানিক বাণিজ্য হচ্ছে কি না তা সীমান্ত সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন ও সংস্থাগুলো খতিয়ে দেখবে এবং তা প্রতিরোধে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা নেবে।
এছাড়া ভোজ্যতেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ তাদের স্ব-স্ব নিয়োগকৃত পরিবেশকদের কাছে সরবরাহকৃত ভোজ্যতেল ভোক্তাদের কাছে নির্ধারিত মূল্যে নিরবচ্ছিন্ন প্রাপ্তির জন্য প্রয়োজনীয় তদারকি করবে বলেও সভায় সিদ্ধান্ত হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২৫
জিসিজি/এইচএ/