ঢাকা, রবিবার, ২ ফাল্গুন ১৪৩১, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৬ শাবান ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

যে কারণে ফুলের দাম কমেছে গদখালীতে, বিক্রি ২০ কোটি

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৫
যে কারণে ফুলের দাম কমেছে গদখালীতে, বিক্রি ২০ কোটি গদখালীর ফুলের বাজার/ছবি: বাংলানিউজ

যশোর: প্রধানত পাঁচটি কারণে যশোরের ফুল বিক্রিতে এবার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যায়নি। স্থানীয় কৃষক এবং ব্যবসায়ীরা আশা করেছিলেন এ মৌসুমে প্রায় ১শ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে।

সেখানে এখনো পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে প্রায় ২০ কোটি টাকা।

সামনে যেসব দিবস রয়েছে তাতেও অনেক ফুল বিক্রি হবে। সেখান থেকে কৃষক আর একটু লাভবান হলেও প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রার ধারেকাছেও যাওয়া যাবে বলে মনে করেন না চাষি সমিতির নেতারা। সেই কারণে ফুল নিয়ে এবার মৌসুমের প্রথম থেকে কৃষকের মুখে চওড়া হাসি দেখা গিয়েছিল তা অনেকটা ম্রিয়মান হয়েছে।  

এরইমধ্যে নতুন আশার কথা শুনিয়েছেন স্থানীয় ফুল চাষি ও সমিতির নেতারা। তারা বলেছেন, কৃষকের আহামরি লাভ না হলেও লোকসান হয়নি।  

গদখালী ফুল ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর বাংলানিউজকে বলেন, এবার বাজারে ফুলের ব্যাপক সরবরাহ ছিল। বিক্রিও হয়েছে বেশি। কিন্তু দাম পাওয়া গেছে তুলনামূলক বেশ কম। সে কারণে ১শ কোটি টাকার ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি।  

তিনি বলেন, চার-পাঁচটি কারণে এবার ফুলের দাম কম পাওয়া গেছে।  

অতিবৃষ্টির ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবার কৃষক সব ফুল একসঙ্গে চাষ করেছেন। গরমের কারণে ফুলও ফুটেছে একসাথে। ফলে বাজারে প্রতিদিন মাত্রাতিরিক্ত ফুলের সরবরাহ ছিল। এবার গ্লাডিওলাস আর গোলাপের যে সরবরাহ ছিল তা অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। বিক্রিও হয়েছে প্রচুর। দাম পাওয়া গেছে অনেক কম।

বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম গদখালীর ফুলের বাজারে আশানারূপ ব্যবসা না হওয়ার আরও তিনটি কারণের উল্লেখ করেছেন।  

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, বিশ্ব ইজতেমার কারণে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বিক্রেতা যারা গদখালী থেকে ফুল সংগ্রহ করেন তাদের অনেকে আর এ মুখো হননি। সাধারণত প্রতিবছর ১১ ও ১২ ফেব্রুয়ারি গদখালীর ফুলের প্রধান বাজার হলেও তা শুরু হয়ে যায় এই মাসের ৪/৫ তারিখের মধ্যে। ফলে অনেক চাষি ফুল বিক্রি করতে পারেননি।

আব্দুর রহিমের মতে, এবার কৃষক সব থেকে বেশি ধরা খেয়েছেন মৌসুমের প্রধান বাজার পহেলা ফাল্গুন এবং ভালোবাসা দিবসের সাথে একই দিনে পবিত্র শবে বরাত পড়ে যাওয়ায়।  

রাজনৈতিক অস্থিরতাকেও এবার গদখালীর ফুলের বাজারে ধসের অন্যতম প্রধান কারণ মনে করেন বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির এই নেতা।

ব্যবসায়ী নেতা ও স্থানীয় চাষিরা জানিয়েছেন, বিশ্ব ভালোবাসা ও বসন্ত উৎসবকে ঘিরে ১৩ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি গদখালী-পানিসারায় ফুল মোড়ের কেন্দ্রে যেভাবে পর্যটকদের উপস্থিতি থাকে সেসময়ও একটা ভালো বিক্রি হয়। কিন্তু, এবার তাতেও খামতি ছিল।

তারা জানান, বাণিজ্যিক ফুল চাষের জনক শের আলী সরদারের মৃত্যুর কারণে ১৩ ফেব্রুয়ারি অর্ধদিবস ফুল মোড়ের পর্যটন কেন্দ্র বিশেষ করে রাইডগুলো বন্ধ রাখা হয়। তাছাড়া ১৪ ফেব্রুয়ারি দিনের অর্ধেকেরও বেশি সময় প্রায় পর্যটনশূন্য ছিল এসব এলাকা।  

চাষিদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, এবার সবথেকে কম দাম পাওয়া গেছে গ্লাডিওলাস এবং জারবেরাতে। তারা জানান, গ্লাডিওলাসের একটি বরক (বীজ) কিনতে হয় তিন থেকে সাড়ে তিন টাকায়। এরপর চাষাবাদের মাধ্যমে তা থেকে এক একটি স্টিক তৈরি হতে খরচ পড়ে চার থেকে পাঁচ টাকা। সেখানে উৎপাদন খরচের চেয়েও কম দামে গ্লাডিওলাস বিক্রি হয়েছে এবার।

অন্যদিকে এক পিস জারবেরার উৎপাদন খরচ সাত থেকে আট টাকা হলেও এবার দাম পাওয়া গেছে পাঁচ থেকে ছয় টাকায়। তেমনিভাবে এবার রজনীগন্ধায়ও লস হয়েছে। কিন্তু রজনীগন্ধা এবং গোলাপ একবার চাষের পর দীর্ঘ সময় পর্যন্ত ফলন হয়। সে কারণে এ দুটি ফুলের লোকসান কাটিয়ে ওঠা কঠিন কিছু হবে না বলে মনে করেন কৃষক।

তাছাড়া সামগ্রিকভাবে ফুলে কোনো লোকসান এবার হয়নি বলে জানান কৃষক ও ব্যবসায়ী নেতারা। এর মধ্যে আগামীতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আরও ফুল বিক্রি হবে। যদিও, এই দুটি দিবসেও লক্ষ্যমাত্রা খুব একটা ছোঁয়া যাবে বলে মনে করেন না তারা। ব্যবসাটা আর একটু বাড়বে বলে আশা।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৫
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।