ঢাকা, শুক্রবার, ৭ ফাল্গুন ১৪৩১, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২১ শাবান ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

কাঠ-নারিকেলের আঁশ দিয়ে তৈরি ব্রাশের কদর বাড়ছে

মুশফিক সৌরভ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৫
কাঠ-নারিকেলের আঁশ দিয়ে তৈরি ব্রাশের কদর বাড়ছে

বরিশাল: বাস-ট্রাকসহ বড় আকারের যানবাহন ধোয়ার কাজে ব্যবহৃত হয় বিশালাকৃতির ব্রাশ। আর গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসে দেড় যুগের বেশি সময় ধরে কাঠ ও নারিকেলের আঁশ (ছোবড়া) দিয়ে সেই ব্রাশ বানিয়ে যাচ্ছেন আলাউদ্দিন।

এ ব্রাশ বিক্রি করে শুধু যে তিনি নিজে উপার্জন করছেন তা নয়, তার এ কাজে সহযোগিতা করে একাধিক নারীরও জীবিকা নির্বাহ হচ্ছে।

অপরদিকে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ব্রাশ বানানোর কাজে ব্যবহৃত পণ্যের দাম বাড়লেও নিয়মিত বেচা-বিক্রিতে অখুশি নন বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার উদয়কাঠী গ্রামের এ বাসিন্দা। চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ছোট পরিসরে একটি ব্রাশ তৈরির কারখানাও গড়েছেন আলাউদ্দিন। যেখানে যন্ত্রের সাহায্যে কাঠের ফ্রেম তৈরির কাজটি করা হয়ে থাকে।  

আলাউদ্দিন জানান, চাম্বল গাছের কাঠ ও নারিকেলের আঁশই হচ্ছে এ ব্রাশ বানানোর মূল উপাদান। কাঠ যেকোনো জায়গা থেকে সংগ্রহ করা হলেও নারিকেলের আঁশ পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার ইন্দেরহাট থেকে কিনতে হয়।  

নারিকেলের আঁশ ইন্দেরহাট ছাড়া আশপাশের আর কোথাও পাওয়া যায় না জানিয়ে আলাউদ্দিন বলেন, এগুলো সংগ্রহের পর কাঠের টুকরোগুলোকে নির্দিষ্ট আকারে কেটে ব্রাশের ফ্রেম বানানো হয়। এরপর নারিকেলের আঁশ গুনার মাধ্যমে ফ্রেমের মধ্যে বসিয়ে ব্রাশ বানানো হয়। যে ব্রাশ দিয়ে বাস-ট্রাক ধোয়া হয়।

একদিনে ৪০০ ব্রাশের ফ্রেম বানানো সম্ভব জানিয়ে তিনি বলেন, কাঠের ফ্রেম আমি তৈরি করলেও নারিকেলের আঁশ তাতে বসানোর কাজটি নারীরা করেন। পাশের নান্দুহার গ্রামের ১০ থেকে ১৫ জন নারী নিয়মিত এ কাজটি করেন। তারা প্রতিটি ব্রাশে নারিকেলের আঁশ বসানোর জন্য দুই টাকা করে পান। আর এ দিয়ে তাদের যা উপার্জন হয় তা সংসারের কাজেই যুক্ত করেন।  

বরিশালে বসে এ সামগ্রী উৎপাদন করলেও স্থানীয় মার্কেটে বিক্রি করেন না জানিয়ে আলাউদ্দিন বলেন, স্থানীয় মার্কেটে এর চাহিদা খুব কম। তবে ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জে এ ব্রাশের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। সেখানে নির্ধারিত কাস্টমারদের কাছে পাইকারি বিক্রি করি। পরে তারা খুচরা বিক্রি করেন।

তিনি আরও বলেন, পাইকারি বাজারে ১২ ডজন ব্রাশ সাড়ে ৪ হাজার টাকা দরে বিক্রি করেন। আর এভাবে সব খরচা মিটিয়ে ব্রাশ প্রতি ৫ টাকার মতো থাকে বলে জানান তিনি।  

এদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্লাস্টিকের বিস্তার সবকিছুই গ্রাস করে নিচ্ছে। তবে গাড়ি ধোয়ার কাজে ব্যবহৃত ব্রাশ প্লাস্টিকের হলে গ্লাসে যেমন দাগ পড়ে যায়, তেমনি গাড়ির রংও উঠে যায়। সেখানে নারিকেলের আঁশ বা ছোবড়া দিয়ে বানানো ব্রাশ ভালো কাজ করে। তাই পরিবহন জগতে এ ব্রাশের চাহিদা এখনও রয়েছে।  

আকাশ নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, খুব কম জায়গায় নারিকেলের আঁশ দিয়ে ব্রাশ তৈরি হয়। যেমন গোটা বরিশাল জেলায় আলাউদ্দিন কারিগর এ ব্রাশ তৈরি করলেও তিনি ঢাকার মতো বড় মার্কেটে দিতেই ব্যস্ত থাকেন। সেখানে ছোট মার্কেটে অর্থাৎ বরিশাল, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, মাদারীপুরে তার তৈরি ব্রাশ পাওয়া যায় না। তার তৈরি ব্রাশের মান ভালো হওয়ায় এর চাহিদাও রয়েছে।

অপরদিকে নিজের উপার্জনের পাশাপাশি নারীদের জীবিকার ব্যবস্থা করে দেওয়ায় গ্রামবাসীও আলাউদ্দিনের প্রশংসায় পঞ্চমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ০৮০৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৫
এমএস/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।