ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২১ ফাল্গুন ১৪৩১, ০৬ মার্চ ২০২৫, ০৫ রমজান ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

সরকার আর্থিক শৃঙ্খলা ফেরাতে কাজ করছে: এনবিআর চেয়ারম্যান

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ৬, ২০২৫
সরকার আর্থিক শৃঙ্খলা ফেরাতে কাজ করছে: এনবিআর চেয়ারম্যান

ঢাকা: সরকার এখন আর্থিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান। তিনি বলেন, এই শৃঙ্খলা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।

বুধবার (০৫ মার্চ) রাজধানীর একটি হোটেলে ‘কর নীতির কাঠামো পরিচালনা: গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোর জন্য প্রভাব ও অগ্রাধিকার’শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। আলোচনার আয়োজন করে পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশ।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের করনীতির লক্ষ্য হলো রাজস্ব আহরণ ও ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির মধ্যে ভারসাম্য তৈরি করা। আমরা শিল্প খাতের নেতাদের উদ্বেগ বুঝতে পারছি। বিনিয়োগ ও রাজস্ব আদায় বাড়ানো এবং দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে আমরা একটি সুষ্ঠু কর কাঠামো তৈরির প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব।

তিনি বলেন, করনীতিতে পরিবর্তনশীল অর্থনৈতিক বাস্তবতার প্রতিফলন থাকা প্রয়োজন। এ সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়ায় অংশীজনদের সম্পৃক্ততা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই), ঢাকার সভাপতি কামরান টি রহমান করনীতিতে বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন আনার আগে নীতি-নির্ধারক ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে গঠনমূলক সংলাপের আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, একটি টেকসই কর কাঠামো তৈরি করতে এনবিআর এবং শিল্পখাতের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা প্রয়োজন। আলোচনা বা মতামত নেওয়া ছাড়া নীতি পরিবর্তন অর্থনৈতিক অস্থিরতা তৈরি করতে পারে।

ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশের (বিএটিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনীষা আব্রাহাম বলেন, দেশের বৈধ ব্যবসায় বাড়ছে ব্যয়। একইসঙ্গে অতিরিক্ত কর আরোপের কারণে সামগ্রিকভাবে ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। তামাক খাতে মোট শুল্ক-কর বেড়ে ৮৩ শতাংশে পৌঁছেছে, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সুপারিশকৃত ৭৫ শতাংশের চেয়েও বেশি। যার কারণে বৈধ ব্যবসায়ীদের জন্য অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত হচ্ছে না।  

তিনি বলেন, তামাক করনীতির পরিবর্তন প্রয়োজন। আমরা চাই বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়ুক। সেজন্য অনুকূল পরিবেশ প্রয়োজন। নীতিনির্ধারণে অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করলে সেই অনুকূল পরিবেশ পাওয়া সম্ভব।

আলোচনায় প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী উল্লেখ করেন, করহারে ঘন ঘন পরিবর্তনের কারণে আগ্রহ হারাচ্ছেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। দেশি-বিদেশি সব ধরণের বিনিয়োগকারীই চান একটি বিনিয়োগবান্ধব কর কাঠামো ও নীতির ধারাবাহিকতা। সেটি নিশ্চিত করা গেলে অর্থনীতিতে স্বস্তি আসার পাশাপাশি প্রবৃদ্ধিও ত্বরান্বিত হবে।

জাপান টোব্যাকো ইন্টারন্যাশনালের (জেটিআই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক পল হলওয়ে বলেন, সম্প্রতি অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই হঠাৎ করে বিভিন্ন পণ্য ও সেবায় কর বাড়ানো হয়েছে। বাড়তি এই কর আরোপের ফলে সিগারেটের অবৈধ ব্যবসা বাড়তে পারে। এ খাতের আয় ও কর্মসংস্থান কমে যাবে। এতে শেষ পর্যন্ত সর্বোচ্চ কর দেওয়া তামাক খাত থেকে সরকারের রাজস্ব আদায় ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

এনবিআরের সাবেক সদস্য ও এনবিআর সংস্কার কমিটির সদস্য ফরিদ উদ্দিন বলেন, কমিটি অংশীজনদের সঙ্গে কথা বলেছে। আমরা যে তথ্য পেয়েছি, তা সবার কাছে তুলে ধরব। আমরা বেশ কিছু সুপারিশও দিয়েছি।

দৈনিক সমকালের সহযোগী সম্পাদক জাকির হোসেন বলেন, কর নিয়ে যাই করা হোক, তা যেন আগে অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়। তাহলে সবার জন্যই তা ভালো হয়।

আলোচনায় আরও ছিলেন বাংলাদেশে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মহাপরিচালক মো. আরিফুল হক, নেসলে বাংলাদেশ লিমিটেডের কোম্পানি সেক্রেটারি ও হেড অব লিগ্যাল অ্যান্ড ট্যাক্সেশন দেবব্রত রায় চৌধুরী, ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএমএবি) সভাপতি মাহতাব উদ্দিন আহমেদ, লাফার্জ হোলসিম বাংলাদেশ লিমিটেডের পরিচালক ও সিইও ইকবাল চৌধুরী প্রমুখ।

বক্তারা যেসব সুপারিশ তুলে ধরেন সেগুলোর মধ্যে রয়েছে— তামাকসহ বিভিন্ন খাতে কর বাড়ানোর বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা, অংশীজনদের সমন্বয়ে একটি কর সংস্কার কমিটি গঠন, করপোরেট করের হার সামঞ্জস্যপূর্ণ করা, করনীতির স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা ইত্যাদি।

বাংলাদেশ সময়: ০২৪৮ ঘণ্টা, মার্চ ০৬, ২০২৫
জেডএ/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।