ঢাকা, সোমবার, ৩০ চৈত্র ১৪৩১, ১৪ এপ্রিল ২০২৫, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

সোনার চেয়েও দামি ইলিশ!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৪৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০২৫
সোনার চেয়েও দামি ইলিশ!

বরিশাল: পহেলা বৈশাখের আগেই যেন সোনার চেয়েও দামি হয়ে উঠেছে বরিশালের বাজারের ইলিশের দর। গত কয়েকদিন ধরে মণপ্রতি লাখ টাকা নিচে নামেনি বড় সাইজের ইলিশের দাম।

আর ছোট সাইজের মাছের দামও আগে থেকে মণপ্রতি ৮-১০ হাজার টাকা বেড়েছে।

পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে কম আমদানি হওয়ায় মাছের দাম বেড়ে গেছে বলে ব্যবসায়ীরা দাবি করেছেন। এর কারণে সাধারণ মানুষের ক্রয়-ক্ষমতার নাগালের বাইরে চলে গেছে।

গত বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার (১২ এপ্রিল) বরিশাল নগরের পোর্ট রোড বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, খুব সামান্য পরিমাণ ইলিশ বাজারে উঠেছে। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) এসেছিল ৫০ মণের মতো। তবে শুক্রবার (১১ এপ্রিল) একটু বেড়েছে। এদিন ইলিশ মোকাম পোর্ট রোডে চারশ মনের মতো মাছ বেচা-বিক্রি হয়েছে।

শনিবার মোটামুটি ইলিশের আমদানি ছিল বাজারে। পোর্ট রোড বাজারের খুচরা বিক্রেতা মাসুম মৃধা বলেন, বাজারে দেড় কেজি সাইজের কোনো মাছ নেই অনেকদিন ধরে। এক কেজি তিনশ থেকে কেজির ওপরের সাইজের মাছ কিছু পাওয়া যায়। তার দাম আকাশছোঁয়া।

তিনি বলেন, শুক্রবার পোর্ট রোড বাজারে এক কেজি দুইশ ও একশ গ্রাম ওজন সাইজের মাছের প্রতি কেজি মাছ পাইকারিতে তিন হাজার ৭৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। প্রতিমণ ছিল দেড় লাখ টাকা। খুচরা বাজারে যা আরও দুই থেকে তিনশ টাকা বেশি দরে বিক্রি হয়েছে। এক কেজি সাইজের প্রতিমণ বিক্রি হয়েছে এক লাখ ২০ হাজার টাকায়। এতে প্রতি কেজির দাম পড়েছে তিন হাজার টাকা। এক কেজির কম ৮০০-৯০০ গ্রাম ওজন সাইজের মাছের এক লাখ পাঁচ হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। আধা কেজি ওজন সাইজের প্রতিমণ ৬০/৬৫ হাজার, চারশ গ্রাম সাইজের প্রতিমণ ৫০-৫৫ হাজার, তিনশ গ্রাম ওজন সাইজের প্রতিমণ মাছ ৪০ হাজার ও পাঁচটিতে কেজি সাইজের প্রতিমণ ১২-১৫ হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

এর আগে বৃহস্পতিবার আরও বেশি দামে বেচা-বিক্রি হয়েছে জানিয়ে মাছ ব্যবসায়ী হৃদয় হাওলাদার বলেন, আগামী ১৫ এপ্রিল থেকে সমুদ্রে মাছ শিকার নিষেধাজ্ঞা শুরু হবে। তাই সমুদ্রে শিকার করা মাছ নিয়ে দুপুরের পর একটি ট্রলার এসেছে। তাই একটু দাম কমেছে। দুই-একদিনের মধ্যে আরও আসবে। তখন মাছের দাম আরও কমবে।

সমুদ্রে থেকে মাছ শিকার করে নিয়ে আসা নিপা ২ ট্রলারের মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, গত আট দিন ধরে সমুদ্রে শিকার করেছেন ৩০ মণ মাছ। এরমধ্যে বড় সাইজের কোনো মাছ নেই। চারশ ও তিনশ গ্রাম সাইজের মাছ ধরা পড়েছে। ওই মাছ ১০ লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন। এবারে সমুদ্রে মাছ শিকার করে তাদের সাত লাখ টাকা লাভ হয়েছে।

বাজারে ইলিশ মাছ কিনতে আসা শাহিন হাওলাদার বলেন, কয়েকদিন আগে এক হাজার দুইশ টাকা কেজি দরে দুইটি মাছ কিনেছি। দুইটি মাছের ওজন হয়েছিল দেড় কেজি। সেই সাইজের মাছের দাম জিজ্ঞেস করে কেনার ইচ্ছে নেই। বৈশাখ উপলক্ষে ইলিশ কেনা পরিকল্পনা বাদ দিয়েছি।

তিনি বলেন, পোর্ট বাজারের বর্তমানে আধা কেজি সাইজের ইলিশের দাম চাইছে এক হাজার ৬৫০ টাকা। এত দাম দিয়ে ইলিশ কেনার কোনো মানে হয়।

মাছ ব্যবসায়ী কবির বলেন, মেহেরপুর, মাগুরা, ঝিনাইদহ ও ফরিদপুরে ইলিশ পাঠান। বর্তমানে যে পরিমাণ চাহিদা রয়েছে, সেই মাছ পাঠাতে পারেন না। কারণ মাছের যে দাম। ওই দামে মানুষ কিনবে না। তাই ছোট ট্রাকে মাত্র ২৬ কার্টন মাছ পাঠানো হয়েছে।

ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক মো. নাসিরউদ্দিন বলেন, জাটকা সংরক্ষণে ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, শরীয়তপুর, ভোলা, বরিশাল ও পটুয়াখালীর মেঘনা, তেতুলিয়া, পদ্মা, কালাবদর ও গজারিয়া নদীতে অভয়াশ্রমে সব ধরনের মাছ ধরা নিষেধ রয়েছে। এমনিতে এ সময় ইলিশ মাছ একটু কম হয়েছে। বিগত সময়ের চেয়ে এবার কঠোরভাবে নিষেধাজ্ঞা মানতে বাধ্য করা হয়েছে। এর কারণে এখন ইলিশ মাছ কম। তবে এর সুফল আগামী আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে মিলবে। আগামীতে ইলিশের উৎপাদন বাড়বে।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৪২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০২৫
এমএস/এএটি/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।