ঢাকা, শুক্রবার, ৬ ভাদ্র ১৪৩২, ২২ আগস্ট ২০২৫, ২৭ সফর ১৪৪৭

অর্থনীতি-ব্যবসা

বাধ্যতামূলক ছুটিতে বিএফআইইউ এর প্রধান

সিনিয়র করসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০:২১, আগস্ট ২০, ২০২৫
বাধ্যতামূলক ছুটিতে বিএফআইইউ এর প্রধান

অশ্লীল, আপত্তিকর ভিডিও কাণ্ডে আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান এ এফ এম শাহীনুল ইসলামকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।

তিনি বলেন, ‘তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিএফআইইউ-প্রধান ছুটিতে থাকবেন। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’

সোমবার শাহীনুল ইসলামের একাধিক আপত্তিকর ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। শাহীনুল ইসলাম এটিকে ভুয়া দাবি করলেও প্রাথমিকভাবে ফ্যাক্ট চেক করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ ভিডিও সঠিক বলে জানতে পেরেছে। আবার গতকাল তিনি অফিসে আসেননি। এমন সময়ে তাকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হলো।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ডেপুটি গভর্নর এবং দুইজন নির্বাহী পরিচালকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটিকে সহায়তা করবেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট অন্য বিভাগের কর্মকর্তারা।

মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের একটি গ্রুপ শাহীনুল ইসলামকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানোর জন্য গভর্নরকে অনুরোধ জানায়।

এমন এক সময়ে এ ভিডিও কাণ্ড সামনে এসেছে যখন পরিবহন ব্যবসায়ী এনা পরিবহনের মালিক খন্দকার এনায়েত উল্লাহর অ্যাকাউন্ট ফ্রিজের পর সেখান থেকে ১৯ কোটি টাকা উত্তোলনের সুযোগ দিয়েছেন তিনি। এ ক্ষেত্রে অনৈতিক কিছু হয়েছে কিনা, সে বিষয়েও তদন্ত করছে দুদক। বাংলাদেশ ব্যাংকের উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত দল এসব অভিযোগও খতিয়ে দেখবে।

সূত্র জানিয়েছে, গত নভেম্বর মাসে এনা পরিবহনের মালিক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ ও তার পরিবারের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ৫০টি অ্যাকাউন্টে ১২০ কোটি টাকা ফ্রিজ করে বিএফআইইউ। তবে চলতি বছরের এপ্রিলে ব্যাংক আল-ফালাহর চারটি অ্যাকাউন্ট পুনরায় ফ্রিজ না করে প্রায় ১৯ কোটি টাকা উত্তোলনের সুযোগ দেওয়া হয়। এমন অভিযোগের তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

দুদকের আবেদনে গত ২৭ মে ১২০ কোটি টাকা ফ্রিজ করার আদেশ দেন ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত। অথচ দুদক এখন জানতে পেরেছে, এসব হিসাবে আছে আসলে ১০১ কোটি টাকা। অনৈতিক সুবিধার বিনিময়ে বাকি টাকা উত্তোলনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

শাহীনুল ইসলাম বলেন, এনা পরিবহনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু টাকা উত্তোলনের সুযোগ দেওয়া হয়। ব্যবসা পরিচালনার স্বার্থে এ রকম অনেক প্রতিষ্ঠানকে এ ধরনের সুযোগ দিয়েছে বিএফআইইউ। এখানে কোনো অনৈতিক লেনদেন হয়নি। আর আপত্তিকর ভিডিওর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাকে হেয় করার জন্য কে বা কারা এটা ছড়িয়েছে। এসব ভুয়া। ’

জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার থেকে বিভিন্ন ব্যক্তির হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জারে তার আপত্তিকর ভিডিও ছড়িয়ে চালাচালি শুরু হয়। এর পর সোমবার বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। তা ভাইরাল হওয়ার পরই বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন জায়গায় সমালোচনার ঝড় ওঠে। এর পর বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা এ নিয়ে কাজ শুরু করে।

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তাদের আন্দোলনের মুখে গত বছরের ৮ আগস্ট পদত্যাগে বাধ্য হন বিএফআইইউর তৎকালীন প্রধান মো. মাসুদ বিশ্বাস। এর পর দীর্ঘদিন খালি থাকার পর চলতি বছরের জানুয়ারিতে নিয়োগ পান শাহীনুল ইসলাম। গভর্নরের নেতৃত্বে গঠিত সার্চ কমিটি যে তিনজনের নাম সুপারিশ করেছিল, সে তালিকায় শাহীনুলের নাম ছিল না। মন্ত্রণালয় থেকে বিআইএফইউ এর প্রধান হিসাবে মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি হয়। শাহীনুল ইসলামের ভিডিও কাণ্ড তদন্তের পর প্রজ্ঞাপন জারির আগ পর্যন্ত তিনি দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছিলেন।

জেডএ/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।