ঢাকা : বেসরকারিকরণ কর্মসূচি অব্যাহত রাখার লক্ষ্য নিয়েই অবশেষে চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় ‘শিল্পনীতি-২০১০’। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী সোমবার অনুষ্ঠেয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদিত হবে নতুন এই শিল্পনীতির চূড়ান্ত খসড়া।
শিল্পনীতির প্রাথমিক খসড়ায় বলা হয়েছিল, সম্ভাব্যতা যাচাই সাপেক্ষে লোকসানি সরকারি প্রতিষ্ঠানকে বিরাষ্ট্রীয়করণের আগে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর এবং বিদ্যমান শ্রমশক্তির বিকল্প কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে হবে ।
কিন্তু চূড়ান্ত খসড়ায় বিদ্যমান শ্রমশক্তির বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার কথা বলা হলেও লোকসানি প্রতিষ্ঠানকে বিরাষ্ট্রীয়করণের আগে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের উদ্যোগ নেওয়ার প্রসঙ্গটি বাদ দেওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি রুগ্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য পৃথক আইন করার কথা বলা হয়েছে। নতুন শিল্পনীতি অনুযায়ী ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে রুগ্ন থাকা কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠানকে সরকার আর কোনো সহায়তা করবে না।
শিল্পনীতির প্রাথমিক খসড়ায় দেউলিয়াত্ব রোধকল্পে এবং দেউলিয়া হয়ে পড়া শিল্প প্রতিষ্ঠান পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ‘প্যাকেজ কর্মসূচি’ গ্রহণে ব্যাংকিং খাতকে উৎসাহ প্রদান করা’র সুপারিশ করা হয়েছিল। চূড়ান্ত খসড়ায় এটাকে সামান্য পরিবর্তন করে ‘অগ্রীম কর্মসূচি’ গ্রহণে উৎসাহিত করার কথা বলা হয়েছে।
শিল্পনীতির প্রাথমিক খসড়ায় শিল্প-বাণিজ্যের সুস্থ ও প্রতিযোগিতামূলক প্রসার এবং অনৈতিক সংঘবদ্ধতা (সিন্ডিকেশন) রোধ করে ভোক্তাস্বার্থ সংরণের কথা বেশ জোরালোভাবে উল্লেখ করা হয়েছিল।
কিন্তু চূড়ান্ত শিল্পনীতিতে ‘সিন্ডিকেশন’ শব্দটি বাদ দিয়ে এর পরিবর্তে বলা হয়েছে, ‘শিল্পনীতির বাস্তবায়নে সরকার সমন্বিতভাবে উদ্যোগী হবে এবং ভোক্তাস্বার্থ সংরক্ষণে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অন্যদের সঙ্গে পরামর্শক্রমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। ’
এছাড়া সার্বিকভাবে নয়া শিল্পনীতিতে আমদানি কমাতে স্থানীয় শিল্পকে অগ্রাধিকার, বিশেষ প্রণোদনা ও কর অবকাশ সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
পাশাপাশি রপ্তানিমুখী শিল্পকে অগ্রাধিকার দান ও পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) মাধ্যমে শিল্প স্থাপন ও উন্নয়নে বিশেষ অগ্রাধিকার দান , কৃষি ও শ্রমঘন শিল্প স্থাপনে নতুন উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করা এবং মহিলা উদ্যোক্তাদের জন্য এসএমই ঋণের ( ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য ঋণ) ব্যবস্থা রাখার কথা বলা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত বছর এপ্রিলে শিল্প মন্ত্রণালয় খসড়া শিল্পনীতি প্রকাশ করেছিল। কিন্তু খসড়া শিল্পনীতি প্রণয়নে শিল্প মন্ত্রণালয় অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কোনো সমন্বয় করেনি বলে অভিযোগ ওঠায় সরকারের উচ্চ মহল এব্যাপারে আন্তঃমন্ত্রণালয় সুপারিশ অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশ দেয়। আন্তঃমন্ত্রণালয় সুপারিশের পর তা অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে প্রেরণ করা হয়। এরপর তা যাচাই এবং সংশোধনের জন্য গত ১৮ ফেব্রুয়ারি বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যানকে প্রধান করে আরও একটি কমিটি গঠন করা হয়। দীর্ঘ ১৬ মাসের পরিক্রমায় উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক থেকে একাধিকবার শিল্পনীতির খসড়া সংশোধনের জন্য ফেরত পাঠানো হয়।
খসড়া শিল্পনীতি প্রকাশ হওয়ার পর বড় ধরনের বিতর্ক দেখা দেয় রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পকারখানা বেসরকারিকরণ করা নিয়ে। বিষয়টি নিয়ে প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের সঙ্গে শিল্প মন্ত্রণালয়ের দ্বন্দ্বেরও সূত্রপাত হয়। পরবর্তীকালে বেসরকারিকরণ বিতর্কের অবসানে শিল্পনীতির খসড়ায় যা বলা হয়েছে তা শিল্পমন্ত্রী দিলিপ বড়ুয়ার ব্যক্তিগত মতামত বলে মন্তব্য করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এর সঙ্গে সরকারের কোনো সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেন তিনি।
বাংলাদেশ স্থানীয় সময় : ১৪৪০ ঘন্টা , ০৪ সেপ্টেম্বর , ২০১০