ঢাকা: গণছাঁটাইয়ের পক্ষে সাফাই গাইছে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক। সংস্থাটির সহস্রাধিক কর্মীর বিনা নোটিশে চাকরিচ্যুতির খবর সোমবার বাংলানিউজে প্রকাশিত হওয়ার পর একটি চিঠিতে এই সাফাই তুলে ধরেছে ব্র্যাক কর্তৃপক্ষ।
‘ছাঁটাইসংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি’ শিরোনামে ওই চিঠিতে ‘গণছাঁটাইয়ের’ বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছে ব্র্যাক। তবে সাফাই হিসেবে বলছে, সংগঠনকে ‘ব্যয়সাশ্রয়ী’ করতে, আর প্রকল্পের তহবিল না পাওয়ার জন্যই এই ছাঁটাই।
সোমবার বাংলানিউজে ‘ব্র্যাকে গণছাঁটাই, আল্লাহ বিচার করবে!’ শিরোনামে প্রকাশিত খবরে এক হাজারের বেশি কর্মী ছাঁটাইয়ের তথ্য তুলে ধরা হয়। আর সে ছাঁটাই হয়েছে বিনা নোটিশে। অথচ ব্র্যাক তার পত্রে এই সংখ্যাকে ‘নগণ্য’ বলে উল্লেখ করেছে।
এদিকে বাংলানিউজে খবরটি প্রকাশের পর সারাদেশ থেকে ব্র্যাকের অপকর্ম, বেআইনি পদক্ষেপ, অমানবিক আচরণ, আর অপেশাদারি মনোভাবের নানা তথ্য আসছে। আসছে নিন্দার ঝড়। অনেকেই তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
সোমবারের খবরে ২০-২২ বছর চাকরি করে এক সন্ধ্যায় চাকরিচ্যুতির নোটিশ পাওয়া একজন কর্মীর কেসস্টাডি তুলে ধরার পর নতুন করে আরও অনেকেই তাদের চাকরিচ্যুতির কথা জানিয়েছেন। কেউ কেউ পরিবারের একমাত্র উপর্জনক্ষম ব্যক্তিটির কর্মচ্যুতির কথা জানিয়ে তাদের অসহায়ত্ব বাংলানিউজের সঙ্গে শেয়ার করেছেন।
কাইয়ুম রনি নামের একজন লিখেছেন: আমি মাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি, আমাৱ বোন অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী, আমার ভাইয়ের ইনকামের উপর আমাদেৱ পুরো পরিবার চলতো। আমাদেৱ পড়ালেখার খরচ চলতো। হঠাৎ এক বিকেলে এ রকম এক চিঠিৱ মাধমে ভাইকে চাকুরিচ্যুত করা হয়। আমাৱ ভাই একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন। এ ধৱনেৱ আচরণ এ প্রতিষ্ঠানেৱ চিরাচরিত ব্যাপার।
কাইয়ুম রনির কথা প্রতিধ্বনিত হয় শিমুলের কণ্ঠেও তিনি লিখেছেন- আমার ভাইয়ের টাকায় পড়ালেখা করি তিন জন। কিন্ত এখন কি হবে জানিনা ঐ একটি মাত্র ছাঁটাই শব্দটার কারণে আজ কিনারা খুজে পাচ্ছিনা আল্লাহ এর বিচার করবে।
শিমুল আরও লিখেছেন, তার ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাহির হয়ে টাকার অভাবে সরকারি চাকরি করতে পারেন নি, অনেক আশা নিয়ে ব্র্যাকে চাকুরি করছিলেন। আজ সেই আশা ভেঙ্গে চুরমার করে দিলো।
তিনি বলেন, আল্লাহ এই ব্র্যাক কে বুঝার হ্মমতা দাও!
ব্র্যাককে রক্ত শুষে খাওয়া প্রতিষ্ঠান হিসেবে উল্লেখ করে শাহদত হোসেন বলেছেন, ব্রাকের প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে কারো প্রয়োজনই ব্র্যাক দেখে না।
উত্তম সরকার নামে একজন ভুক্তভোগী ব্র্যাকের বিরুদ্ধে মানবাধিকার গোষ্ঠীকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
রজনী দত্ত এ বিষয়ে সরকারের নজর প্রত্যাশা করে বলেছেন, এখনই না বন্ধ করলে ব্র্যাকে আরও মানুষ প্রতারিত হবে। একই কথা হারুনুর রশিদ স্বপনেরও।
তারেক চৌধুরী জানিয়েছেন ব্র্যাকের এই আচরণ শ্রমবিধির ২০ ধারার পুরোপুরি লঙ্ঘন, এই ধারার ভিত্তিতে ভুক্তভোগীদের মামলা করারও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
ব্র্যাকের চিঠিতে দাবি করা হযেছে, প্রাপ্য পাওনার চেয়ে অনেক বেশি পরিশোধ করে কর্মচ্যুত করা হয়েছে কর্মীদের। তবে বাস্তবতার সঙ্গে তাদের এই দাবির কোনও মিল নেই সে কথা বাংলানিউজকে জানিয়েছেন যোগাযোগ হয়েছে এমন অধিকাংশ চাকরিচ্যুত কর্মী। এছাড়া ভেতরে দায়িত্বশীল পদে রয়েছেন এমনও অন্তত দুই জন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে, বেনিফিটের বিষয়টি শুভঙ্করের ফাঁকি বলেই মন্তব্য করেছেন।
কর্মচ্যুত কর্মীরা যাতে তাদের পাওনা অর্থ সঠিকসময়ে পেতে পারেন সে লক্ষ্যে ব্র্যাকের ওপর মিডিয়ার পক্ষ থেকে চাপ অব্যাহত রাখার আহ্বানও এসেছে পাঠকের কাছ থেকে। ওই পাঠক মনে করেন, ছয় মাস পর এই টাকা আর কোন কাজে আসবে না। ধার দেনায় সেই পরিবারগুলো জর্জরিত হয়ে যাবে।
ব্র্যাক কর্তৃপক্ষের পাঠানো ‘ছাটাইসংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি’ এই লিঙ্কে হুবহু তুলে ধরা হলে।
বাংলানিউজের কাছে ব্র্যাকের অন্য যেসব অনিয়ম অব্যবস্থাপনার তথ্য রয়েছে তা নিয়ে রিপোর্ট আসছে পরেরর কিস্তিতে।
বাংলাদেশ সময় ০২০৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৪
** ব্র্যাকে গণছাঁটাই, ‘আল্লাহই বিচার করবে!’
** পথ নষ্ট হয় ট্রাকে, মানুষ নষ্ট হয় ব্র্যাকে!
** ব্র্যাকে কী হচ্ছে!