ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

১০ হাজার কোটি টাকার ৮ প্রকল্প চূড়ান্ত অনুমোদন

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৪
১০ হাজার কোটি টাকার ৮ প্রকল্প চূড়ান্ত অনুমোদন

ঢাকা: ১০ হাজার ৬ শ’ ২৫ কোটি ৭৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ৮ প্রকল্প চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)।

মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এরমধ্যে, সরকারি অর্থ তহবিল (জিওবি) ২৫২৯.৫০ কোটি টাকা। সংস্থার নিজস্ব তহবিল ২৬১৮.৪১ কোটি টাকা। আর প্রকল্প সাহায্য ৫ হাজার ৪ শ’ ৭৮ কোটি টাকা।

আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত পাশাপাশি ২টি ডুয়েল গেজ রেললাইন নির্মাণ করতে যাচ্ছে সরকার। ২টি ডুয়েল গেজের মধ্যে একটি সম্পূর্ণ নতুন এবং অপরটি বিদ্যমান মিটার গেজকে ডুয়েল গেজে রূপান্তরিত করা হবে।

এজন্য, সরকারের ব্যয় হবে ৬ হাজার ৫ শ’ ৪ কোটি টাকা। বাংলাদেশ রেলওয়ে ২০২০ সালের জুনের মধ্যে এ নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করবে।

আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত ৭২ কিলোমিটার দূরত্বে পাশাপাশি যে ২টি ডুয়েল গেজ রেললাইন নির্মাণ করা হবে তার মোট দৈর্ঘ্য ১৪৪ কিলোমিটার।

এছাড়া, লুপ ও সাইডিংস লাইনের জন্য আরো ৪০ কিলোমিটার ডুয়েল গেজ রেললাইন তৈরি করা হবে। মোট ১৮৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ডুয়েল গেজ লাইনটি নির্মিত হবে। এ নির্মাণ কাজে মোট ব্যয় ১ হাজার ২৬ কোটি টাকা সরকার দেবে। বাকি ৫ হাজার ৪ শ’ ৭৭ কোটি টাকা এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) ও ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (ইআইবি) ঋণ সহায়তা হিসেবে দেবে।

একনেক সভায় এ সংক্রান্ত একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। অনুমোদিত এ প্রকল্পটির নাম হলো- ‘আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত ডুয়েল গেজ ডাবল রেললাইন নির্মাণ’ এবং ‘বিদ্যমান রেললাইনকে ডুয়েল গেজে রূপান্তর’।

এদিকে, সভা শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে প্রকল্পটি নিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলওয়ে অচিরেই ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ের একটি প্রধান করিডোরে পরিণত হবে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ প্রতিবেশি দেশগুলোকে চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে মালামাল পরিবহন সুবিধা দিতে পারবে। এতে করে দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তারা আকৃষ্ট হবেন।

মন্ত্রী বলেন, টঙ্গী-ভৈরববাজার এবং লাকসাম-চিনকি আস্তানা সেকশনের ডাবল লাইন নির্মাণ কাজ ২০১৫ সালে শেষ হবে। সেই সঙ্গে আখাউড়া-লাকসাম সেকশন ডাবল ডুয়েল গেজ হয়ে গেলে পুরো ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইন ডাবল ডুয়েল গেজ হয়ে যাবে। ফলে যাত্রী ও মালামাল পরিবহনের চাহিদা মেটানো সহজ হয়ে যাবে।

‘প্রি-পেমেন্ট মিটারিং প্রজেক্ট ফর ৫ এনওসিএস ডিভিশন আন্ডার ডিপিডিসি’ নামক প্রকল্পের আওতায় ঢাকা পাওযার অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি) ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের ৫টি এলাকায় প্রি-পেমেন্ট মিটারিং চালু করতে যাচ্ছে।

এর ফলে খিলগাঁও, তেজগাঁও, কাজলা, কামরাঙ্গীরচর এবং স্বামীবাগ এলাকার বাসিন্দারা এখন কারেন্সি ট্রান্সফার সিস্টেম (সিটিএস)-এর মাধ্যমে স্মার্ট কার্ড ভিত্তিক সিংঙ্গেল অথবা থ্রি ফেইজ এর প্রি-পেমেন্ট মিটার কিনে প্রয়োজন মতো বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারবেন।

অর্থাৎ, একজন ব্যক্তি মোবাইল কার্ডের মতো টাকা দিয়ে অগ্রিম বিদ্যুৎ মিটার কিনে নিজের প্রয়োজন মতো বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারবেন।

এ প্রকল্পটিকে অত্যন্ত ইতিবাচক আখ্যা দিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, এর ফলে বিদুত্যের সাশ্রয়ী ব্যবহার নিশ্চিত হবে। সরকারের রাজস্ব আদায়েও কোনো বকেয়া থাকবে না । সেই সঙ্গে লোডশেডিংও কমে আসবে।

পরিকল্পনা মন্ত্রী আরো বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ২ শ’ ২৪ কোটি টাকা ব্যয় হবে। এর মধ্যে জিওবি ১ শ’ ৮৯ কোটি টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব ৩৫ কোটি টাকা। জানুয়ারি ২০১৫ থেকে জুন ২০১৭ মেয়াদে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। আগামী ৩ বছরের মধ্যে সারাদেশের বিদ্যুৎ গ্রাহকদের পর্যায়কক্রমে প্রি-পেমেন্টর আওতায় নিয়ে আসা হবে।

কম্পিউটার শিক্ষার প্রসার এবং ইন্টারনেট সংযোগ বাড়িয়ে ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং পেশাকে দেশব্যাপী আরো সম্প্রসারণ করছে সরকার। সরকার মনে করে- মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে কম্পিউটার শিক্ষাকে ভালোভাবে ছড়িয়ে দিতে হলে মাল্টিমিডিয়াভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।

সেজন্য সরকার দেশের ২ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২ হাজার কম্পিউটার ল্যাব তৈরি করতে যাচ্ছে। একেকটি কম্পিউটার ল্যাবে কমপক্ষে ১৭টি ল্যাপটপ, একটি প্রিন্টার, একটি স্ক্যানার, একটি এলইডি মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর, একটি হেডফোন ও একটি করে থ্রিজি পকেট রাউটার থাকবে।

এছাড়া, দেশব্যাপী ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিকে ছড়িয়ে দিতে ৬৪টি জেলা থেকে একটি করে উপজেলায় একটি করে ভাষা প্রশিক্ষণ ল্যাব স্থাপন করবে সরকার।

এবিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং এ সফল হতে হলে বিভিন্ন ভাষা বুঝতে পারাও জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগামীতে এ খাতটি বাংলাদেশের রফতানি আয়ের অন্যতম প্রধান খাতে পরিণত হবে। সেজন্য আমরা কম্পিউটার শিক্ষাকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে সবচেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছি। এ জন্যই দেশে বিদ্যমান ৩৫৪৪টি কম্পিউটার ল্যাবের সঙ্গে আরো ২০০০টি কম্পিউটার ল্যাব তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

একনেক সভায় ‘৬৪ জেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ও ভাষা প্রশিক্ষণ ল্যাব স্থাপন’ নামে একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে ২ শ’ ৯৯ কোটি টাকায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত করবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পটি শেষ হবে।

বৃহত্তর চট্টগ্রামের বিভিন্ন বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও সার কারখানাসহ শিল্প কারখানায় দৈনিক ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে মহেশখালী থেকে আনোয়ারা পর্যন্ত ৩০ ইঞ্চি ব্যাসের ৯১ কিলোমিটার সঞ্চালন পাইপলাইন স্থাপন করবে সরকার। মূলত আমদানিকৃত তরল প্রাকৃতিক গ্যাসকে রূপান্তরিত করে তা শিল্পকারখানায় সরবরাহ করা হবে।

ইতোমধ্যে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস রূপান্তরের জন্য মহেশখালীতে গভীর সমুদ্র বন্দরে এলএনজি টার্মিনাল তৈরির কাজ চলছে । অপরদিকে, বিবিয়ানা ও জালালাবাদ গ্যাসক্ষেত্রের অতিরিক্ত ৬৪০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস দেশের সার, বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন শিল্প কারখানায় সরবরাহের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

আর এজন্য ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, গাজীপুর ও হবিগঞ্জে ৩৬ ইঞ্চি ব্যাসের ১৩৭ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপ লাইন তৈরি করা হবে।

এদিনের একনেক সভায় এ বিষয়ে ‘মহেশখালী-আনোয়ারা গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ’ এবং ‘কন্সট্রাকশন অব বিবিয়ানা ধানুয়া গ্যাস ট্রান্সমিশন পাইপ লাইন’ প্রকল্পের সংশোধন আকারে পাশ হয়। প্রথম প্রকল্পের জন্য ৯ শ’ ৮১ কোটি টাকা এবং দ্বিতীয় প্রকল্পের জন্য ১ হাজার ৭ শ’  কোটি এবং দ্বিতীয় প্রকল্পের জন্য ১ হাজার ৭ শ’  কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।

একনেক সভায় ‘গুরুত্বপূর্ণ ৯টি ব্রিজ নির্মাণ প্রকল্প’, ‘মন্দির ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম (৪র্থ পর্যায়)’ এবং ‘স্নাতক (পাস) ও সমমান পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি প্রদান প্রকল্প (১ম সংশোধিত)’ নামে ৩টি প্রকল্পেরও অনুমোদন দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৪, আপডেট ১৯১৬

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।