ঢাকা: ২০১৪ সালের নির্বাচনে ফাঁকা মাঠে গোল দেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এটিএম শামসুল হুদা।
শনিবার রাজধানীর ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স-বাংলাদেশে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) পঞ্চম জাতীয় সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
নির্বাচন বয়কট করে কখনও কোনো রাজনৈতিক দল লাভবান হয়নি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, যারা নির্বাচন বয়কট করেছিল তাদের উচিত ছিল নির্বাচন কমিশনে নিয়োগপ্রাপ্তরা যোগ্য কি-না। তারা কোন ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এসেছে এসব বিষয়ে আলোচনা করা। কিন্তু তারা সেটা করেনি। ফলে দেশে নির্বাচন হয়ে গেছে।
শামসুল হুদা বলেন, বর্তমানে গণতন্ত্র ও উন্নয়ন বিষয়ে আংশিক ব্যাখ্যা দেওয়া হয়। ফলে এ বিষয়ে আজ বিতর্ক অনেক সৃষ্টি হয়েছে। দেশে এখন গণতন্ত্রের নামে নির্বাচিত অটোক্রেসি চলছে। যখন যেদলই ক্ষমতায় থাকুন না কেন বিরোধী দল সরকারকে সাহায্য করেনি। তাই দেশে গণতন্ত্র ভালভাবে চলতে পারে না।
বক্তব্যে পাকিস্তানের প্রশংসা করে শামসুল হুদা বলেন, আমাদের দেশের অনেকেই পাকিস্তানকে ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে পছন্দ করি। কিন্তু সেখানের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো অনেক শক্তিশালী। বিশেষ করে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশনই ঠিক করে দেয় তাদের দেশে সুষ্ঠ নির্বাচন হওয়ার জন্য কে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হবে। সব রাজনৈতিক দল তাদের সিদ্ধান্ত মেনে নেয়।
তিনি আরও বলেন, আমরা কিন্তু পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়েছিলাম তাদের চেয়ে ভাল থাকা বা করার জন্য। কিন্তু আমরা তা পারিনি। আমাদের দেশের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো অনেক বিতর্কিত।
দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিষয়ে তিনি বলেন, দেশের সুশাসন দেখতে আমি প্রতিদিন পত্রিকাগুলোর অর্থনৈতিক পাতার খবর আগে পড়ি। তবে এটা সত্য আমাদের দেশের অর্থনীতির অনেক সূচক এখন ইতিবাচক। এটা অর্থনীতির একদিন। তবে অন্যদিক হলো বাংলাদেশের দুর্নীতি ও ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ হয় না। এমনকি মানুষের জন্ম ও মৃত্যু সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতেও আজ ঘুষ দিতে হচ্ছে। এ দেশের তৃণমূল পর্যায়ে ঘুষ এমনভাবে বিস্তার লাভ করেছে যেখানে সাধারণ মানুষ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন হলেও মানুষের দৈনন্দিন সেবার কোনো উন্নতি হচ্ছে না।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশে সম্পর্কে সরকারের মন্তব্য প্রসঙ্গে শামসুল হুদা বলেন, টিআইবি’র প্রতিবেদনে দেশের যে চিত্র তুলে ধরা হয়েছে তা খুবই সামান্য। মূল চিত্র আরও অনেক ভয়াবহ। তৃতীয় শ্রেণিতে তৃতীয় থেকে দশম হলে কিন্তু কোনো উন্নয়ন বলা যায় না। কারণ আপনি তৃতীয় শ্রেণির পর্যায়েই থাকছেন।
সুজন সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খানের সভাপতিত্বে সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- পুলিশের সাবেক আইজিপি শাহজাহান, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলী খান, ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মাহবুবুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আসিফ নজরুল, রোবায়েত ফেরদৌস, ড. ইনাম আহমেদ চৌধুরী, সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৪