ঢাকা:কৃষি গবেষণার মাধ্যমে বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিজেআরআই) এ পযর্ন্ত মোট ৪১টি পাট ও পাট জাতীয় আঁশ ফসলের উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন করেছে।
পাটের এসব নতুন নতুন উদ্ভাবন ও প্রযুক্তি মাঠ পর্যায়ের কৃষকের হাতে পৌঁছে দেওয়ারও উদ্যোগ নিয়েছে বিজেআরআই।
বিজেআরআই সূত্র জানায়,পাট ও পাট জাত আঁশ ফসলের বিভিন্ন উৎপাদন প্রযুক্তি, সার ব্যবস্থাপনা, উন্নত পচন পদ্ধতি, বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণ সংক্রান্ত উন্নত প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে এগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে কৃষকের হাতে তুলে দেওয়া হবে।
বিজেআরআই আরো জানায়, কারিগরি গবেষণার মাধ্যমে প্রচলিত পাটের মান উন্নয়নের পাশাপাশি বহুমুখী পাটজাত প্রযুক্তির উদ্ভাবন করা হয়েছে। বহুমুখী পাটজাত পণ্যের মধ্যে অগ্নিরোধী পাটজাত বস্ত্র, রট-প্রুফ জুট নার্সারি, পাট উল এবং পাটজাত শোষক তুলা ও স্যানিটারি ন্যাপকিন, নভেটেক্স কম্বল, ফার্নিশিং ফেব্রিক, জিনস, জুট ও জিও টেক্সটাইল, পলিথিন ব্যাগের বিকল্প হালকা পাটের শপিং ব্যাগ, মাইক্রোক্রিস্টালাইন সেলুলোজ ইত্যাদি তৈরির বিশেষ পন্থা বের করেছে সংস্থাটি।
বিজেআরআই আরো জানায়, সম্প্রতি দেশী পাটের একটি জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে যা, ৯ দশমিক ০ ডিএস/মিটার লবণাক্ততা সহনজাত মৃত্তিকায় চাষ করা সম্ভব। পাট ও পাট জাতীয় ফসলের কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও হস্তান্তর’ প্র্রকল্পের আওতায় এই সব প্রযুক্তি কৃষকের হাতে তুলে দেবে বিজেআরআই। এতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪ কোটি ২৯ লাখ টাকা।
প্রকল্প এলাকা নির্বাচন করা হয়েছে ঢাকার তেজগাঁও বিজেআরআই সদর দফতর, মানিকগঞ্জের কেন্দ্রীয় গবেষণা কেন্দ্র, ফরিদপুরের আঞ্চলিক পাট গবেষণা কেন্দ্র,নারায়ণগঞ্জের পাট গবেষণা উপকেন্দ্র, দিনাজপুরের পাট বীজ উৎপাদন কেন্দ্র ও রংপুরের পাট গবেষণা আঞ্চলিক কেন্দ্র।
প্রাথমিক পর্যায়ে মোট ১৫টি স্থানকে প্রকল্প এলাকা হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে। এর মধ্যে কিছু উপজেলাও রয়েছে যেমন, যশোরের মনিরামপুর, সাতক্ষীরা সদর, বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ, খুলনার দাকোপ, পটুয়াখালীর কলাপাড়া, বরগুনার বেতাগী, পিরোজপুরের নাজিরপুর ও কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলা।
প্রকল্পের আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য রয়েছে যেমন, পাট ও পাট জাতীয় ফসলের জাত উদ্ভাবন। বহুমুখী পাটপণ্য উদ্ভাবন সংক্রান্ত গবেষণার উন্নয়ন, পাট জাতীয় ফসলের লবণাক্ততা এবং অন্যান্য প্রতিকূলতা সহিষ্ণু জাত উদ্ভাবন, এছাড়া, আধুনিক পাট আঁশ এবং পাট বীজ উৎপাদন প্রযুক্তি কৃষক পযায়ে হস্তান্তর করা, বহুমুখী পাট হস্তান্তর ও জনপ্রিয় করণ, বিজেআরআই মানবসম্পদের উন্নয়ন ও মাঠ গবেষণার নানা ধরনের সুবিধা তৈরি করা।
বিজেআরআই এর গবেষণা দক্ষতা উন্নয়নের লক্ষ্যে জুলাই ২০১৪ থেকে জুন ২০১৮ সাল মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।
উদ্দেশ্যকে সফল করতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাযর্ক্রমও হাতে নিয়েছে বিজেআরআই। এর মধ্যে অন্যতম নয়শ’ কৃষক ও পাট উৎপাদনকারী, এক হাজার সম্প্রসারণ ও এনজিও কর্মী এবং ৪৫০ জন সম্প্রসারণ কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এছাড়া বিজেআরআই ১০ জন বিজ্ঞানীকে পিএইচডি করানো হবে, ১০টি সেমিনার, সিম্পোজিয়াম এবং ওয়ার্কশপ করা হবে।
গবেষণা কাযর্ক্রমের জন্য ১৬১ ধরনের আধুনিক গবেষণা যন্ত্রপাতি কেনা হবে এ ছাড়া, প্রকল্পের আওতায় একটি জিপ, একটি মাইক্রোবাস, তিনটি পিক-আপ ভ্যান কেনা হবে।
প্রিন্টার ও ইউপিএসসহ ২৭টি ডেক্সটপ কম্পিউটার, তিনটি ল্যাপটপ, ডিজিটাল ক্যামেরা ও ফটোকপি মেশিন কেনা হবে। নতুন নতুন বহুমুখী পাট পণ্যের প্রদর্শনীর জন্য বিভিন্ন প্রদর্শনী গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন করা হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এজেডএম মমতাজুল করিম বাংলানিউজকে বলেন, পাট জাতীয় আঁশ ফসলের উচ্চ ফলনশীল জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে কৃষকের হাতে এগুলো তুলে দেওয়া হবে। যাতে করে পাট জাতীয় ফসলের নতুন দিগন্তের সূচনা হয়। পাট জাতীয় দ্রব্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আমদানি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমরা সবাই জানি এক সময় পাট সোনালি আঁশ ছিল সেই হারানো ঐতিহ্য ফিরে আনতে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। ’
তিনি আরো বলেন, দিন দিন পাটের ব্যবহার বাড়ছে ইতোমধ্যেই পলিথিনের ব্যবহার নিষিদ্ধ হয়েছে। এখন সারা পৃথিবীতেই পাট পণ্যের ব্যবহার বাড়ছে। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরাও পাটের উন্নতজাত মাঠ পর্যায়ে কৃষকের হাতে তুলে দেব। একদিকে পাটের উৎপাদন বৃদ্ধি করবো অপরদিকে পাটের বহুমুখী ব্যবহারের পথও তৈরি করবো। ’
বাংলাদেশ সময়: ২২১৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৪