ঢাকা: কংক্রিটের সড়ক ও মহাসড়ক টেকসই, সাশ্রয়ী ও পুনর্ব্যবহারযোগ্য। শুধু জাতীয় মহাসড়কগুলো কংক্রিটে নির্মাণ করা হলে ২৩ হাজার কোটি টাকা বেঁচে যাবে।
সোমবার(২৯ ডিসেম্বর’২০১৪) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে সড়ক ভবন মিলনায়তনে 'বাংলাদেশে টেকসই সড়ক' শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।
সওজ’র অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আফিল উদ্দিন আহমদের সঞ্চালনায় সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন প্রকল্পের প্রকল্প ব্যবস্থাপক(ফেনী) নির্বাহী প্রকৌশলী ও কংক্রিটের রাস্তা নির্মাণ গবেষক সন্তোষ কুমার রায়।
প্রধান অতিথি ছিলেন সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. ফিরোজ ইকবাল। সভাপতিত্ব করেন সড়ক ও জনপথ প্রকৌশলী সমিতির সভাপতি মো. আফতাব হোসেন খান। অনুষ্ঠানের পৃষ্টপোষকতায় ছিল বসুন্ধরা সিমেন্ট।
সেমিনারে কংক্রিটে টেকসই সড়ক গবেষণায় জরুরি ভিত্তিতে একটি উচ্চপর্যায়ের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা দরকার বলে মত দেন বক্তারা। তারা কংক্রিটের মহাসড়ক নির্মাণে জরুরিভিত্তিতে পাইলট প্রকল্প নেওয়ার বিকল্প নেই বলেও মত দেন।
এসময় বলা হয়, ঢাকা-চট্টগ্রাম ও জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ চার লেন প্রকল্পের বিশেষ বিশেষ অংশ কংক্রিটেই নির্মাণ করা হচ্ছে। এ রাস্তা জলাবদ্ধতায় নষ্ট হয় না।
মূল প্রবন্ধে সন্তোষ কুমার রায় বলেন, 'আমাদের দেশে বর্ষায় সড়ক-মহাসড়কে বিপর্যয় দেখা দেয়। 'প্যারাসিটামল থেরাপি' দিয়ে এ বিপদ থেকে রক্ষা পেতে হয়। সড়ক রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সারা বছর ব্যস্ত থাকতে হয় সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রকৌশলীদের। তাঁরা পাঁচ বছর ধরে ছুটিও পাচ্ছেন না। এখন বিকল্প প্রয়োজন। এই বিকল্প হলো কংক্রিটের রাস্তা। বিটুমিনের রাস্তায় পানি জমে নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু কংক্রিটের রাস্তা পানিতে নষ্ট হয় না। '
যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জার্মানি, কোরিয়ার মতো দেশে কংক্রিটের রাস্তা তৈরি হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, '২০০৯ সালে আমি কোরিয়া গিয়ে সেখানে ৬১ শতাংশ রাস্তা কংক্রিটে তৈরি করা হয়েছে দেখতে পেয়েছি। সেখানে কংক্রিটের রাস্তা নির্মাণ শুরু হয়েছিল ১৯৮২ সালে। ৬৮ কিলোমিটার দীর্ঘ জংবু এক্সপ্রেসওয়েও কংক্রিটের তৈরি। আমাদের দেশে বেশ কয়েকটি চার লেন মহাসড়ক প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে। দুই লেন থেকে চার লেনে উন্নীত করার এসব প্রকল্পে রিজিড পেভমেন্ট (কংক্রিটের রাস্তা) নির্মাণ করা যায়। '
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী ফিরোজ ইকবাল বলেন, 'প্রকৌশলী সন্তোষ কুমার রায় নতুন যে বিষয়ের অবতারণা করেছেন তা নিয়ে বিস্তর যাচাই-বাছাই বা গবেষণার সুযোগ রয়েছে। এ নিয়ে এখনই কাজ শুরু করা দরকার। বিষয়টি আমরা ওপরের পর্যায়েও উপস্থাপন করব। বসুন্ধরার পৃষ্ঠপোষকতা আমাদের এ কাজে উৎসাহিত করেছে। '
অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বক্তব্য রাখেন বসুন্ধরা সিমেন্টের জেনারেল ম্যানেজার (সেলস) খন্দকার কিংশুক হোসেন।
তিনি বলেন, সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি হিসেবে কোথায় প্রডাক্ট ব্যবহার হতে পারে তার উদ্যোগ সব সময়ই থাকে। কংক্রিকেটের সড়ক নির্মাণের জন্য ইতোমধ্যে মাঠ পর্যায়ে আলোচনা ছাড়াও গোল টেবিল আলোচনা হয়েছে। কংক্রিকেটের সড়ক নির্মাণে কারিগরি ও অর্থনৈতিক প্রভাব কীরকম তা গবেষণায় বেরিয়ে আসবে।
বসুন্ধরা সিমেন্ট প্রথম থেকেই এই উদ্যোগের সঙ্গে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের রিসার্স পার্টনার হিসেবে সুযোগ দিলে ওতপ্রোতভাবে জড়িত থেকে কার্যকর ভূমিকা পালন করব।
সেমিনারের আলোচনায় টেকসই তথা কংক্রিকেটের সড়ক নির্মাণের আগ্রহের উপর বক্তব্য রাখেন সড়ক ও জনপথ প্রকৌশলী সমিতির সভাপতি আফতাব হোসেন খান।
তিনি বলেন, দীর্ঘ সময় যেন সড়ক টিকে থাকে আমরা সে দিকে যেতে চাচ্ছি। আমাদের বিনিয়োগ সাশ্রয়ী হচ্ছে কি না- তা দেখতে হবে। এ ইস্যুর উপর গবেষণা প্রয়োজন।
'আমাদের দেশে ব্রিটিশ আমলেও কংক্রিটের রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। ' বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
বসুন্ধরার সিমেন্ট সেক্টরের অ্যাসিসট্যান্ট ম্যানেজার(টেকনিক্যাল সাপোর্ট) প্রকৌশলী সরোজ কুমার বড়ুয়া অনুষ্ঠানে বসুন্ধরা সিমেন্টের গুণাগুণ তুলে ধরেন। তিনি সওজ অধিদপ্তরের প্রকৌশলীদের বসুন্ধরার সিমেন্ট কারখানা পরিদর্শনের আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে সওজ অধিদপ্তরের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রকৌশলীদের মধ্যে বক্তব্য দেন সাইদুল হক, ফজলে রাব্বী, আশরাফ উল ইসলাম, ইবনে আলম হাসান, মাহবুবুল আলম, মনোয়ারুজ্জামান, জিকরুল হাসান, নুরে আলম, মো. শামসুল হক, আবুল কালাম আজাদ।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সড়ক ও জনপথ প্রকৌশলী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আমানউল্লাহ।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৪
** বসুন্ধরা সিমেন্টের সহায়তায় ‘টেকসই সড়ক-মহাসড়ক’ শীর্ষক সেমিনার
** টেকসই সড়ক নির্মাণে কংক্রিট ব্যবহার গবেষণায় গুরুত্বারোপ