ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বিসমিল্লাহ গ্রুপসহ ব্যাংকের ৫৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিটের সুপারিশ

আদিত্য আরাফাত, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০১৫
বিসমিল্লাহ গ্রুপসহ ব্যাংকের ৫৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিটের সুপারিশ

ঢাকা: ১১শ’ ৭৪ কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতির অভিযোগ এনে বিসমিল্লাহ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) খাজা সোলেমান আনোয়ার চৌধুরী,  তার স্ত্রী এবং গ্রুপের চেয়ারম্যান নওরিন হাসিব এবং ব্যাংক কর্মকর্তাসহ মোট ৫৩ ব্যক্তির বিরুদ্ধে চার্জশিটের সুপারিশ করে প্রতিবেদন তৈরি করেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্ত টিম।

পৃথকভাবে করা তদন্ত দলের ১২ মামলার প্রতিবেদন যেকোনো দিন কমিশনে দাখিল করা হবে বলে জানা গেছে।



৫৩ জনের মধ্যে বিসমিল্লাহ গ্রুপের ১৩ জন রয়েছে। এছাড়া ব্যাংকের ৪০ জনের মধ্যে জনতা ব্যাংকের ৩টি শাখার ১২ জন, প্রাইম ব্যাংকের ৯ জন, প্রিমিয়ার ব্যাংকের ৭ জন, যমুনা ব্যাংকের ৫ জন এবং শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের ৭ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চার্জশিটের সুপারিশ থাকছে আলোচিত এ দুর্নীতি মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে।

সোমবার নিজ কার্যালয়ে দুদক কমিশনার মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বাংলানিউজকে বলেন, ‘বিসমিল্লাহ গ্রুপের ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় দীর্ঘদিন ধরে তদন্ত টিম কাজ করছে। আশা করছি শিগগিরই কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল হবে। কমিশন যাছাই-বাছাই করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে। ’

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গ্রুপের আত্মসাৎ করা মোট টাকার পরিমাণ ১১শ’ ৭৪ কোটি। এর মধ্যে ফান্ডেড টাকার পরিমাণ ৯৯০ কোটি আর নন-ফান্ডেড টাকা হচ্ছে ১৮৪ কোটি।
 
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিসমিল্লাহ গ্রুপের বিসমিল্লাহ টাওয়েলস, বিসমিল্লাহ ট্রেডার্স ও আলফা নিট কম্পোজিট টাওয়েলসসহ কয়েকটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের নামে ভুয়া ব্যাক টু ব্যাক এলসি, রফতানি বিল ও ইনল্যান্ড বিল পারচেজের (আইবিপি) মাধ্যমে মোট পাঁচ ব্যাংক থেকে ঋণের নামে এসব টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

১২টি মামলার পৃথক প্রতিবেদনে যাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট সুপারিশ থাকছে প্রতিবেদনে তারা হলেন, বিসমিল্লাহ গ্রুপের এমডি খাজা সোলেমান ও চেয়ারম্যান নওরিন হাসিব, এমডির বাবা সফিকুল আনোয়ার চৌধুরী ও মা সারোয়ার জাহান।   সারোয়ার জাহান বিসমিল্লাহ গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান মেসার্স হিন্দল ওয়ালী টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডের পরিচালক।
 
এ ছাড়া তালিকায় আরও আছেন, গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক (হিসাব) আবুল হোসেন চৌধুরী এবং ৩ পরিচালক আবিদা হাসিব, নাহিদ আনোয়ার খান, খন্দকার মোঃ মইনুদ্দিন আশরাফ, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি ও অথারাইজড সিগনেটরি) আকবর আজিজ মুতাক্কি, মহাব্যবস্থাপক (জিএম ও অথারাইজড সিগনেটরি) মো. আবুল হোসাইন চৌধুরী, ব্যবস্থাপক (ম্যানেজার ও অথারাইজড সিগনেটরি) রিয়াজউদ্দিন আহম্মেদ, নেটওয়ার্ক ফ্রেইট সিস্টেম লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. আক্তার হোসেন, টিডব্লিউ এক্সপ্রেসের মালিক মো. মঈন উদ্দিন এবং বে ইয়ার্ন লিমিটেডের মালিক গোলাম মহিউদ্দিন আহম্মেদ।
 
এছাড়া তদন্ত প্রতিবেদনে ৫ ব্যাংকের ৪০ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চার্জশিটের সুপারিশের অনুমোদন করা হয়েছে। জনতা ব্যাংকের ৩টি শাখায় যে ১২ জনের বিরুদ্ধে সুপারিশ করা হয়েছে তারা হলেন- জনতা ব্যাংক ভবন কর্পোরেট শাখার মহাব্যবস্থাপক ও শাখা ব্যবস্থাপক আবদুস সালাম আজাদ, একই শাখার ডিজিএম আজমুল হক, উপমহাব্যবস্থাপক এসএম আবু হেনা মোস্তফা কামাল, ২ এজিএম (রফতানি) ফায়েজুর রহমান ভুইয়া ও অজয় কুমার ঘোষ, রফতানি বিভাগের কর্মকর্তা জেসমিন আক্তার, জ্যেষ্ঠ নির্বাহী কর্মকর্তা (এসইও) সৈয়দ জয়নাল আবেদীন, জনতা ব্যাংক মগবাজার শাখার ম্যানেজার রফিকুল আলম, দুই এসইও খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও আতিকুর রহমান, ব্যাংকটির এলিফ্যান্ট রোড শাখার সহকারী মহাব্যবস্থাপক মোস্তাক আহমদ খান এবং এসইও এসএম শোয়েব-উল-কবীর।
 
প্রাইম ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন ব্যাংটির ডিএমডি মো. ইয়াছিন আলী, মতিঝিল শাখার দুই সাবেক ব্যবস্থাপক (ম্যানেজার) মো. মোজাম্মেল হোসেন ও খোন্দকার ইকবাল হোসেন, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট (এসভিপি) ও ফরেন এক্সচেঞ্জের ইনচার্জ ইব্রাহিম হোসেন গাজী, ২ অ্যাসিস্টেন্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট (এভিপি) এবিএম শাহ জাহান ও কাজী খাইরুল ইসলাম, ৩ সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার মোহাম্মদ ইকবাল আজিম কাদরী, মোঃ আবুল কালাম এবং একেএম জান-ই আলম।

প্রিমিয়ার ব্যাংকের মতিঝিল শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক (ম্যানেজার) মুহাম্মদ শাহীনুর রহমান, সাবেক সহকারী ব্যবস্থাপক (ডেপুটি ম্যানেজার) জিএম শাহাদৎ হোসেন, এফএভিপি (ফার্স্ট অ্যাসিস্টেন্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট) এমএ রহীম, ভিপি ও ডেপুটি ম্যানেজার শাহাবুদ্দিন সরদার, এফএভিপি (বর্তমানে বরখাস্ত) তানজিবুল আলম ও সাবেক এক্সিকিউটিভ অফিসার আবু সালেহ মো. আরিফুর রহমান।
 
যমুনা ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মধ্যে সাবেক ডিএমডি মোজাম্মেল হোসেন, দিলকুশা শাখার ৪ এসইভিপি রফিকুল হাসান, মুহম্মদ মোর্শেদুর রহমান, এসএম জাহিদুল ইসলাম এবং এএসএম মাশুক।
 
আর শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মধ্যে ইস্কাটন শাখার ভাইস প্রেসিডেন্ট ও শাখা ব্যবস্থাপক মো. আসলামুল হক, সাবেক ডেপুটি ম্যানেজার এএসএম হাসানুল কবীর, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার শহীদুল ইসলাম, জুনিয়র অ্যাসিস্টেন্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মান্নাতুল মওলা, সাবেক এসইভিপি মোহাম্মদ গোলাম ওহাব, এফএভিপি মো. মুনির হোসেন, এসভিপি মো. দুলাল হোসেন এবং এসইভিপি মো. আনিসুল কবির।
 
দুদকের তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবেদনে ঘটনার সময়কালে যে কর্মকর্তা ব্যাংকে কর্মরত ছিলেন সে অনুযায়ী তাদের পদবী উল্লেখ করা হয়েছে।
 
এদিকে বিসমিল্লাহ গ্রুপের দুর্নীতি অনুসন্ধান ও তদন্তকালে সন্দেহভাজন  শতাধিক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক। এদের মধ্যে গাজীপুরের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট রহমত আলীর ছেলে অ্যাডভোকেট জামিল হাসান দুর্জয় ও কুমিল্লার সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) সুবিদ আলী ভুঁইয়ার ছেলে মোহাম্মদ আলীও ছিলেন। তবে তদন্ত প্রতিবেদনে তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আনা হয়নি।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, জালিয়াতির ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত খাজা সোলেমান ও তার স্ত্রী নওরীন হাবিব দুবাইয়ে, আবুল হোসেন মালয়েশিয়ায় ও মইনউদ্দিন জার্মানিতে রয়েছেন।  
 
অভিযোগ রয়েছে, বিসমিল্লাহ গ্রুপ জনতা ব্যাংক থেকে ৩৯২ কোটি ৫৭ লাখ, প্রাইম থেকে ৩০৬ কোটি ২২ লাখ, যমুনা থেকে ১৬৩ কোটি ৭৯ লাখ, শাহজালাল থেকে ১৪৮ কোটি ৭৯ লাখ ও প্রিমিয়ার ব্যাংক থেকে ৬২ কোটি ৯৭ লাখ টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ নেয়।
 
দুদক সূত্র জানায়, ব্যাংক কর্মকতাদের সঙ্গে পরস্পর যোগসাজশে গ্রুপটি ঋণ জালিয়াতি করে। এ ঘটনা অনুসন্ধানে ২০১৩ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করে দুদক। ওই বছরের ৩ নভেম্বর ১২ মামলায় ৫৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি বিরোধী সংস্থাটি।

দুদকের উপ-পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে একটি টিম এ জালিয়াতির ঘটনার তদন্ত করছেন। টিমের অপর সদস্যরা হলেন, দুদকের সহকারী পরিচালক তৌফিকুল ইসলাম, গুলশান আনোয়ার প্রধান, সহকারী উপ-পরিচালক সরদার মঞ্জুর আহমেদ ও মো. আল আমিন।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।