ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

নৌ-সচিব বৈঠক

চূড়ান্ত হবে চট্টগ্রাম-মংলা বন্দর ব্যবহারবিধি

জেসমিন পাপড়ি, ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০১৫
চূড়ান্ত হবে চট্টগ্রাম-মংলা বন্দর ব্যবহারবিধি

ঢাকা: বাংলাদেশ-ভারত নৌ-সচিব পর্যায়ের বৈঠকে নির্ধারিত হতে যাচ্ছে কোন পদ্ধতিতে ভারত বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহার করতে যাচ্ছে, সেই বিধিমালা। সোমবার (১৬ নভেম্বর) নয়াদিল্লিতে শুরু হচ্ছে তিনদিনের এ বৈঠক, শেষ হবে বুধবার (১৮ নভেম্বর)।



চলতি বছরের জুনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরে দুই দেশের মধ্যে এ দু’টি বন্দর ব্যবহার সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারকটি স্বাক্ষরিত হয়। এরপর থেকেই এর ব্যবহারবিধি বা প্রটোকল তৈরির কাজ চলছে। যা আগামী নৌ-সচিব পর্যায়ের বৈঠকে চূড়ান্ত হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র।
জানা গেছে, বৈঠকে দু’দেশের ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্টের ফি চূড়ান্ত করা হবে। একইসঙ্গে বিদ্যমান নৌ-প্রটোকলটি পুনরায় সংশোধন করে এর আওতায় নতুন বন্দর যোগ হতে যাচ্ছে। দুই দেশের পর্যটন বিকাশে যাত্রী পরিবহনকে গুরুত্ব দিয়ে বৈঠকে এবার উপকূলীয় জাহাজ চলাচলের স্ট্যার্ন্ডাড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) স্বাক্ষর করা হবে। একইসঙ্গে দু’দেশের নৌ-প্রটোকল রুট খননে ভুটানের অন্তর্ভুক্তির বিষয়টিও আলোচনায় আসবে, যে রুটটি খননে অর্থায়ন করবে বিশ্বব্যাংক।

নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব শফিক আলম মেহেদি বাংলানিউজকে বলেন, দু’দেশের এ নৌ-সচিব পর্যায়ের বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় নানা বিষয়ের পাশাপাশি মংলা-চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার বিষয়ে আলোচনা হবে। যা দু’দেশের নৌ-পরিবহন খাতকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে। এছাড়া বাংলাদেশ-ভারত উপকূলীয় জাহাজ চলাচল নিয়ে একটা প্রটোকল স্বাক্ষর প্রয়োজন, এর প্রাথমিক খসড়া বৈঠকে অনুস্বাক্ষর করা হতে পারে।

জানা গেছে, গত ২০ এপ্রিল বাংলাদেশ-ভারত নৌ-সচিব পর্যায়ের বৈঠকে নৌ-প্রটোকল রুটের নাব্যতা বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা হয়। সে বৈঠকেই বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে আঞ্চলিক আইডিএ ঋণে তৃতীয় দেশ হিসেবে ভুটানের অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি আসে।

নৌ-সচিব বলেন, ভুটানকে আমরা সম্ভবত আঞ্চলিক আইডিএ ঋণে এ স্কিমে পাবো। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বাংলাদেশ-ভারত-ভুটান যৌথভাবে কাজটি করবে।

সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ভারত মংলা বন্দর ব্যবহার করে রেল, নৌ বা সড়কপথ দিয়ে পশ্চিমবঙ্গে পণ্য পরিবহন করবে। অথবা চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে ফেনী নদীর ওপর দিয়ে সাবব্রুম হয়ে উত্তর-পূর্বে পণ্য পরিবহন করবে। তাই শুরু থেকেই চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহারে ফি দেওয়ার কথা ভারতকে জানিয়ে আসছে বাংলাদেশ। ফি’র পরিমাণ নিয়েও আলাপ চালানো হচ্ছে। তবে প্রটোকলটি চূড়ান্ত করার আগে সড়ক, রেল, সেতু, সমুদ্র পরিবহন অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগের মতামত নেবে সরকার।

জানা গেছে, বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যেতে উভয় দেশের পর্যটন শিল্প বিকাশে যাত্রী পরিবহনের বিষয়টি সামনে এসেছে। অর্থনৈতিক ও পর্যটন বিকাশের স্বার্থে ভবিষ্যতে দুই দেশের নৌ-পথে যাত্রী পরিবহনের বিষয়টি চিন্তা করছে দুই দেশ। ফলে দুই দেশের উপকূল ধরে নদীপথে যাত্রী পরিবহনে আলাদা চুক্তি করতে নীতিগতভাবে সম্মত এই দুই প্রতিবেশি। যাত্রী পরিবহনের জন্য বাংলাদেশের সম্ভব্য পোর্ট অব কল বা বন্দর নির্ধারনে মংলা, সিরাজগঞ্জসহ মোট ৫টি বন্দরের নাম আন্তঃমন্ত্রণালয়ের এক সভায় প্রস্তাব করা হয়েছে। পরবর্তীতে ভারতের থেকে এ বিষয়ে কোনো মতামত বা প্রস্তাব পেলে তা পরীক্ষা করা হবে।

জানা গেছে, আশুগঞ্জ নৌ-বন্দরকে ট্রান্সশিপমেন্টের পয়েন্ট হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। বাংলাদেশের নদীপথ ব্যবহার করে আশুগঞ্জ বন্দর হয়ে সড়ক ব্যবহার করে ভারত তার উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে পণ্য পরিবহন করবে। এ জন্য ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্ট ফি টনপ্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড প্রস্তাব করেছে ১৩০ টাকা এবং বিআইডব্লুউটিএ ১০ টাকার প্রস্তাব দিয়েছে। এর সঙ্গে যোগ হবে সড়কের প্রতি টন ও কিলোমিটারে ২ দশমিক ০৩৭ টাকা। ট্রান্সশিপমেন্টর এ ফি নৌ-সচিব পর্যায়ের বৈঠকে ভারতকে প্রস্তাব করবে বাংলাদেশ। তার প্রেক্ষিতে দর কষাকষির মাধ্যমে চূড়ান্ত ফি নির্ধারণ করা হবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, ভারত পানগাঁও নৌ-বন্দর ব্যবহার করতে চাওয়ার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ধুলিয়ান এবং ব্যান্ডেল বন্দর ব্যবহার করতে চেয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার ৩ নভেম্বর আগামী নৌ-সচিব পর্যায়ের বৈঠকে অতিরিক্ত বন্দর সংযোজনের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ অংশে পানগাঁও বন্দর ব্যবহারের আগ্রহ প্রকাশ করেছে ভারত। আর বাংলাদেশও ব্যান্ডেল ও ধুলিয়ান বন্দর ব্যবহারের আগ্রহ প্রকাশ করে ভারতকে চিঠি দিয়েছে। বৈঠকে আলোচনা সাপেক্ষে বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০১৫
জেপি/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।