ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

রেলের গতি ১৬০ কিমি

ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়েতে পদ্মাসেতু

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৫
ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়েতে পদ্মাসেতু

ঢাকা: স্বপ্নের পদ্মাসেতুর অবস্থান এখন ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়েতে। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার (কিমি) দৈর্ঘ্যের এ সেতুর ওপরে রেলের গতিসীমা হবে ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার।



ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রেল চলাচলের বিস্তারিত ডিজাইনে লোডিংয়ের পরিমাণ বাড়িয়ে ডেডিকেটেড ফ্রেইট করিডর (ডিএফসি) লোডিং ৮১ থেকে বাড়িয়ে ১১৯ ধরা হয়েছে। এটিই হলো দ্রুতগতির রহস্য।

এসব তথ্য নিশ্চিত করে পদ্মাসেতু প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) শফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ২০০৭ সালে অনুমোদন পাওয়া পদ্মাসেতু প্রকল্পের সঙ্গে বর্তমানের পদ্মাসেতুর অনেক পার্থক্য। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন নতুন অঙ্গ যোগ হচ্ছে সেতু প্রকল্পে। ডিএফসি লোডিং ৮১ থেকে বেড়ে ১১৯ ধরা হয়েছে। লোডিং বাড়ানোর কারণে পদ্মাসেতুর ওপরে রেলের চূড়ান্ত গতিসীমা হবে ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার।

সেতু বিভাগ সূত্র জানায়, সেতুর উভয় প্রান্তে সড়ক এবং রেল পথের ক্রসিংয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য রাখতে সেতু এক লেভেলের পরিবর্তে দুই লেভেল করা হয়েছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক বিবেচনায় মূল সেতুর সঙ্গে নতুন আরও অঙ্গযোগে বেড়েছে পদ্মাসেতুর সময় ও ব্যয়।
 
সূত্রটি আরও জানায়, পদ্মাসেতু শুধু ব্যয়ের দিকে সর্ববৃহ‍ৎ নয়, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নান্দনিকতায়ও এটি অনন্য অবকাঠামো। নদীপথ পরিবর্তনশীল, সেতুর নিচ দিয়ে লঞ্চ-জাহাজ এবং নৌ-চলাচল সচল রাখতে বিস্তারিত ডিজাইনে পরিবর্তন আনা হয়েছে। এতে নদীর পানি কমে গেলেও নৌ-চলাচলে সমস্যা হবে না কোনো।

এছাড়া পদ্মাসেতু প্রকল্পে ভূমিকম্পের বিষয়ে অধিক গুরুত্ব দিয়ে সিসমিক ফ্যাক্টর শুন্য দশমিক ১শ’ ২৫ জি থেকে বাড়িয়ে শূন্য দশমিক ১শ’ ৫০ জি ধরা হয়েছে।

সেতু বিভাগ থেকে পদ্মাসেতু প্রকল্পে আরও নতুন নতুন তথ্য পাওয়া গেছে- বিস্তারিত ডিজাইন অনুযায়ী বেড়েছে সেতুর দৈর্ঘ্য, ভূমির পরিমাণ, ডিজাইন লোড, পরিবর্তন হয়েছে নকশার। সেতুকে আরও যুগোপযোগী করতেই এসব পরিবর্তন। এর উভয় প্রান্তে সড়ক ও রেল পথের ক্রসিং সামঞ্জস্য রাখতে রোড ভায়াডাক্ট তিন দশমিক ১৫ কিলোমিটার এবং রেল ভায়াডাক্ট শূন্য দশমিক ৫শ’ ৩২ কিলোমিটার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

সূত্র বলছে, পাঁচটি প্যাকেজে বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে স্বপ্নের পদ্মাসেতুর- মূল সেতু, নদীশাসন, জাজিরা অ্যাপ্র্যোচ সড়ক, মাওয়া অ্যাপ্র্যোচ সড়ক ও ব্রিজ অ্যান্ড ফ্যাসিলিটিজ এবং সার্ভিস এরিয়া।

সেতু বিভাগের অপর সূত্র জানায়, প্রকল্পে অর্থায়নের উৎস ও ধরণ এবং বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারের পরিবর্তন হয়েছে। এতে চুক্তিমূল্য অনুযায়ী তিন হাজার ৭শ’ ২২ কোটি টাকা বাড়িয়ে এটিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে সরকার।

স্বচ্ছতা রাখতে নতুন নতুন এসব কাজের বিষয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়কে অবগত করা হয়েছে বলে সেতু বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় সূত্রের কাছ থেকে পাওয়া যায় আরও কিছু তথ্য।

প্রকল্পে আসছে একগুচ্ছ নতুন কাজ
মাওয়া প্রান্তে ১৩শ’ মিটার নদীর তীর প্রতিরক্ষামূলক কাজ এবং চুক্তিমূল্য অনুযায়ী নদীশাসন খাতের ৫ হাজার কোটি টাকার অতিরিক্ত কাজ করা হবে। ‘ইঞ্জিনিয়ারিং সাপোর্ট অ্যান্ড সেফটি টিম’ অন্তর্ভুক্ত করা, ফেরিঘাট স্থানান্তর ও সড়ক প্রশস্ত করা বাবদ অতিরিক্ত আরও ১২৫ কোটি টাকা খরচ হবে।

এক নজরে পদ্মাসেতুর প্রধান কার্যক্রম
৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার সেতু নির্মাণ, ১ হাজার ৫শ’ ৩০ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ, ৬৬ হাজার বর্গফুট অফিস ভবন, ১৩ দশমিক ৮০ কিলোমিটার নদীশাসন, ১২ কিলোমিটার অ্যাপ্রোচ সড়ক। টোল প্লাজা, সার্ভিস এরিয়া-২, সড়ক প্রশস্তকরণ ও ফেরিঘাট স্থানান্তর ও কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড নির্মাণ।

অতিরিক্ত ৪শ’ ৫ দশমিক ৭৭ হেক্টর ভূমি বাবদ ২শ’ ১২ কোটি টাকার নতুন কাজ করা হবে। পরে প্রকল্পের নকশা পরিবর্তন, ভূমির পরিমাণ ও পরামর্শকের সংখ্যা বাড়নো ইত্যাদির কারণে প্রথম সংশোধনে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে হয়েছে ২০ হাজার ৫০৭ কোটি ২০ লাখ টাকা।

ভাঙনসহ অন্যান্য কারণে দ্বিতীয় সংশোধনে প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮ হাজার ৭শ’ ৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। ২০০৯‍’র জানুয়ারিতে শুরু হওয়া ‘স্বপ্নের পদ্মাসেতু’ প্রকল্পের কাজ ২০১৯ সালের মধ্যে শেষ হবে- বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ সময়: ১০২৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৫
এমআইএস/আইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।